শনিবার, ৩০ মে, ২০১৫

দিবা-রাত্রি আবর্তনশীলতা কেন প্রয়োজন?

আমাদের কারো অজানা নয় যে, পৃথিবী আপন মেরুরেখার উপর প্রায় প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার করে ঘুরছেঅন্য কথায় বলতে গেলে, পৃথিবী তার আপন কক্ষপথে প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার মাইল বেগে চলছেমনে করুন, যদি এর গতি প্রতি ঘণ্টায় দুশ মাইল হয়ে যায়, তাহলে আমাদের দিন এবং আমদের রাত্র বর্তমানের অনুপাতে দশগুণ বেশী দীর্ঘ হয়ে যাবেঅত্যধিক রকমের উত্তপ্ত সূর্য প্রতি দিন যাবতীয় লতাগুল্ম জ্বালিয়ে দেবেএতদসত্ত্বেও সামান্য যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে সেগুলোকে দীর্ঘ রাতের শীতলতা চিরদিনের জন্য খতম করে দেবে

সূর্য, যা বর্তমানে পৃথিবীতে শক্তির প্রধান উৎস, তার পৃষ্ঠদেশে সাতান্ন হাজার (৫৭,০০০) ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রয়েছে এবং পৃথিবী থেকে এর দুরত্ব আনুমানিক ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইলপৃথিবী অনবরত ঘূর্ণনরত থাকলেও বিস্ময়করভাবে পৃথিবী হতে সূর্যের দূরত্ব সর্বদা স্থিতিশীলএই ঘটনা আমাদের জন্য সীমাহীন গুরুত্ব রাখেকেননা যদি এই দূরত্ব হ্রাস পায়, যেমন সূর্য অর্ধেক পরিমাণ নিকটবর্তী হয়ে যায়, তাহলে জমির উপর এত উষ্ণতার সৃষ্টি হবে যে, সেই গরমে কাগজ পুড়তে থাকবে, আর যদি বর্তমান দূরত্ব দ্বিগুণ হয়ে যায় তাহলে এমন শীতলতার সৃষ্টি হবে যে, তাতে জীবনের কোন অস্তিত্বই থাকবে নাএই অবস্থা তখন সৃষ্টি হবে যখন বর্তমান সূর্যের জায়গায় অন্য কোন অসাধারণ নক্ষত্র এসে পড়বেএমন বৃহৎ নক্ষত্র, যার উষ্ণতা আমাদের সূর্যের চাইতে দশ হাজার গুণ বেশীযদি ঐ নক্ষত্র সূর্যের জায়গায় হত, তাহলে তা পৃথিবীকে নির্ঘাত আগুনের চুল্লিতে পরিণত করত এজন্য সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে আল্লাহ একটি নিয়মতান্ত্রিক সম্পর্ক সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে কুরআনে তিনি বলেন-

إِنَّ فِي اخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَّقُونَ
নিশ্চয়ই রাত-দিনের পরিবর্তনের মাঝে এবং যা কিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও যমীনে, সবই হল নিদর্শন সেসব লোকের জন্য যারা ভয় করে(ইউনুস ৬)

পৃথিবী ২৩ ডিগ্রি কোণে শূন্যে ঝুঁকে আছেএই ঝুঁকে থাকাটাই আমাদেরকে বিভিন্ন ঋতুর অধিকারী করেছেএরই ফলশ্রতিতে জমির বেশীর ভাগ অংশ আবাদের যোগ্য হয়ে উঠেছে, বিভিন্ন ধরনের লতাগুল্ম এবং ফলমূল উৎপাদিত হচ্ছেপৃথিবী যদি এভাবে ঝুঁকে না থাকত তাহলে দুই মেরুর উপর সর্বদা অন্ধকার ছেয়ে থাকতোফলে সমুদ্রের বাষ্পসমূহ উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে পরিভ্রমণ করত এবং জমি হয় তুষার আবৃত থাকত, নয় মরুভূমিতে পরিণত হতএ ছাড়াও আরো অনেক চিহ্ন ফুটে উঠত যার ফলশ্রুতিতে ঝোঁকবিহীন পৃথিবীর উপর জীবনের অস্তিত্ব অসম্ভব হয়ে উঠতএটা কত হাস্যকর কথা যে, জড় বস্তু নিজেই নিজেকে এভাবে এত সুন্দর করে ও যথার্থ আকার সুবিন্যস্ত করে নিয়েছে!

মহান প্রজ্ঞাময় সমস্ত জাহানের প্রতি পালক আল্লাহ তাআলা এ পৃথিবীতে মানব সৃষ্টি করে তার জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করেছেনমানব জাতির প্রতি আল্লাহর নিয়ামত অফুরন্ত ও অগণিতদিন রাতের পরিবর্তন তন্মধ্যে অন্যতমনির্ধারিত নিয়মে দিনরাত্রির পরিবর্তন হচ্ছেআর একথা বর্তমানে সবার কাছে সুস্পষ্ট যে, পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণেই দিন ও রাতের সৃষ্টি হচ্ছেআমরা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত স্বচক্ষে অবলোকন করছি যে, সুনিয়ন্ত্রিতভাবে একই নিয়মে রাতের পর দিন এবং দিনের পর রাত আসছেআমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি যে, এই পরিবর্তন আমাদের জন্য কী কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসছে? দেখা যাক, কুরআন এ সম্পর্কে কী বলছে।

وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ آيَتَيْنِ ۖ فَمَحَوْنَا آيَةَ اللَّيْلِ وَجَعَلْنَا آيَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَ
আমি রাত্রি ও দিনকে দুটি নিদর্শন করেছিঅতপর নিষ্প্রভ অন্ধকার করে দিয়েছি রাতের নিদর্শন এবং দিনের নিদর্শনকে আলোকময় করেছি(বনী ইসরাঈল ১২)

আধুনিক বিজ্ঞান বর্ণনা বলছে, এই দিন রাতের পরিবর্তন যদি না হতো তবে পৃথিবীর এক পৃষ্ঠের সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যেত এবং অন্য পৃষ্ঠে ঠাণ্ডায় মানব জাতি সহ সমস্ত জীবকুল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিত

সূরা কাসাসের ৭১ এবং ৭২ নং আয়াত থেকে বোঝা যায়, দিবা-রাত্রির পরিবর্তনশীলতার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের জন্য কত বড় নিয়ামত দান করেছেন!


قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَٰهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُمْ بِضِيَاءٍ ۖ أَفَلَا تَسْمَعُونَ قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَٰهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُونَ فِيهِ ۖ أَفَلَا تُبْصِرُونَ
বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি রাত্রিকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে, যে তোমাদেরকে আলোক দান করতে পারে? তোমরা কি তবুও কর্ণপাত করবে না? বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি দিনকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে যে, তোমাদেরকে রাত্রি দান করতে পারে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে? তোমরা কি তবুও ভেবে দেখবে না ?


Faiyaz Al-Muhaimin

পৃথিবী ক্রমবিকাশের চারটি ধাপ

আধুনিক বিজ্ঞানীগণ পৃথিবীর ইতিহাসকে নিম্নবর্ণিত প্রধান চারটি ভাগে বিভক্ত করেন

১. Pre-Cambrian যুগ
৬০০০ থেকে ৩৩০০ মিলিয়ন বছরএই  যুগে পৃথিবী তার আদি পিন্ড থেকে বিকশিত হয় এবং একটি স্বতন্ত্র গ্রহের রূপ ধারন করেজীবনের প্রাচুর্য ও বৈচিত্র্যের মাধ্যমে এ যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে

২. Paleozoic যুগ
২৩০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন বছরএই যুগে সর্বপ্রথম ভূমিজ লতা-পাতা, উভচর প্রাণী ও সরীসৃপ দৃষ্টিগোচর হয়এটি হল প্রাচীন প্রাণ যুগ

৩. Mesozoic যুগ
৬৩ থেকে ২৩০ মিলিয়ন বছরএটিকে মধ্যপ্রাণ যুগ বলে বিবেচনা করা হয় মৌসুমী পরিবর্তনের সঙ্গে বৃক্ষ-লতা ভালভাবে খাপ খেয়ে গিয়েছিলমেরুদন্ডী প্রাণী, স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিও এ যুগে গোচরীভূত হয়আর ডাইনোসর ছিল প্রচুর

৪. Conozoic যুগ
বর্তমান সময় থেকে ৬৩ মিলিয়ন বছরএই যুগ জীবনের বর্তমান ধাপকে অন্তর্ভুক্ত করে

পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসকে এই চার ভাগে বিভাজন অবিন্যস্ত কিংবা বিশৃঙ্খল নয়, বরং তা করা হয়েছে দৈহিক গঠন প্রক্রিয়ার বিকাশের সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করেএই যুগগুলি বিশ্ব বিস্তৃত পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে সার্বজনীনভাবে গৃহীত হয়েছেএগুলি প্রাণীজগৎ ও উদ্ভিদজগতের উন্নতি এবং মহাদেশগুলির গতিপ্রবাহ, মহাসাগর ও পর্বত-মালার রূপ পরিবর্তনের রেকর্ডেরও প্রতিনিধিত্ব করে এটিই সম্ভবত সেই চার যুগ যা কুরআন মাজিদ বর্ণনা করে
وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ مِنْ فَوْقِهَا وَبَارَكَ فِيهَا وَقَدَّرَ فِيهَا أَقْوَاتَهَا فِي أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ سَوَاءً لِلسَّائِلِين
তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন, তাদের জন্যে (তথ্যস্বরূপ) যারা জিজ্ঞাসা করে। (ফুসসিলাত, ৪১ : ১০)

এখানে ইয়ম-এর স্থলে আইয়াম শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যেটি দ্বারা কাল বা যুগ (অনির্দিষ্ট সময়) বুঝায়
লক্ষণীয় যে, পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের এই চারটি সময়কাল আকাশ, পৃথিবী ও পুরো মহাবিশ্ব সৃষ্টির ছয় সময়কাল থেকে ভিন্নসেগুলি অতীত হয়ে গেছে আজ প্রায় ১৩৭৫ কোটি বছরঅথচ পৃথিবীর বয়স মাত্র ৪৫৭ কোটি বছর!

ফাইয়াজ আল-মুহাইমিন

মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০১৫

আমাদের পৃথিবী ডিম্বাকার, গোলাকার না সমতল?

আদিমকাল থেকেই পৃথিবীর আকার নিয়ে নাক গলানোর মতো মানুষের অন্ত নেইচিন্তাশীল মানুষের অনুমানপূর্ব ধারণা ছিল, পৃথিবীর আকার হচ্ছে চ্যাপ্টা বা সমতল হাজার হাজার বছর ধরে হাস্যকরভাবে মানুষ বেশিদূর পর্যন্ত ভ্রমণ করতো না পৃথিবীর কিনারা থেকে ছিটকে পড়ে যাবার ভয়ে! ১৫৯৭ সালে ফ্রান্সিস ড্রেক প্রথম পৃথিবীর চারদিকে নৌ-ভ্রমন করে প্রমা করেছিলেন যে, পৃথিবী গোলাকার এখন দেখা যাক, পৃথিবীর আকার সম্পর্কে কুরআন আমাদেরকে কী তথ্য দিচ্ছে!

এখানে একটু বলে রাখা ভালো, কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হলে, অবশ্যই আরবি ব্যাকরণ এবং ভাষাশৈলী সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা জরুরি
যেমন, আমরা এখন পৃথিবীর আকার সম্পর্কে কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাচ্ছিকিন্তু আমরা উদ্ধৃতি দিব দিন রাত্রির পরিবর্তন সম্পর্কিত একটি আয়াতের

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي إِلَىٰ أَجَلٍ مُسَمًّى وَأَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِير
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেনপ্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করেতুমি কি আরও দেখ না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন ?(লুকমান ২৯)

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, রাত ধীরে ধীরে এবং ক্রমশ দিনে রূপান্তরিত হয়, অনুরূপভাবে দিনও ধীরে ধীরে রাতে রূপান্তরিত হয়এ ঘটনা কেবল পৃথিবী গোলাকার হলেই ঘটতে পারেপৃথিবী যদি চ্যাপ্টা বা সমতলভূমি হত, তাহলে রাত্রি থেকে দিনে এবং দিন থেকে রাত্রিতে একটা আকস্মিক পরিবর্তন ঘটে যেতঅর্থাৎ সেকেন্ডের মধ্যে দিন হতো আবার সেকেন্ডের মধ্যেই কিছু বুঝে উঠার আগেই রাতের প্রবেশ ঘটতো

সূরা যুমারের ৫ নং আয়াতে আল্লাহ প্রায় একই কথা বলেছেন

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۖ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى
তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবেতিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত
এ আয়াতটিতে যে সমস্ত শব্দাবলী ব্যবহৃত রয়েছে সেগুলো লক্ষ্য করা জরুরিআচ্ছাদিত বা মোড়ানোঅর্থে উপরের আয়াতটিতে যে আরবী শব্দটির ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হলো يُكَوِّرُএর অর্থ হল একটি জিনিষ দ্বারা অপর একটি জিনিষকে জড়িয়ে বা মুড়িয়ে দেয়া যা কিনা একটি পোষাকের মতো ভাঁজ করা অবস্থায় গোছানো রয়েছেউদাহরণস্বরূপ, পাগড়ী যেমন করে পরিধান করা হয়, ঠিক তেমনিভাবে একটি জিনিষ দিয়ে অপরটিকে জড়ানোর কাজে আরবী অভিধানে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছেদিন ও রাত্রি পরস্পরকে জড়িয়ে বা আচ্ছদিত অবস্থায় রয়েছে- আয়াতটিতে প্রদত্ত এই তথ্য দ্বারা পৃথিবীর আকৃতির সঠিক তথ্যই প্রদান করা হয়েছেএ অবস্থাটি কেবল সেই পযার্য়ে সঠিক হতে পারে যখন পৃথিবীর আকৃতি হয় গোলাকার

পৃথিবী গোলাকার-এটি সঠিক ধারণাকিন্তু পরিপূর্ণ গোলাকার নয়পৃথিবীর আকার দুই মেরুতে কিছুটা চ্যাপ্টা, ডিমের মতোএ কারণে, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের অভিকর্ষজ ত্বরণের মান ভিন্ন ভিন্ন পায়া যায়তাহলে? তাহলে কুরআন কি ভুল কথা বললো?
নাআমরা ছোটবেলায় যেমন শিখে এসেছি পৃথিবী গোলাকার তেমনিভাবে কুরআনে পৃথিবীর আকার-আকৃতি সম্পর্কে প্রাথমিক ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছে-এটি গোলাকার তবে উচ্চতর পড়াশুনার জন্য আল্লাহ প্রকৃত আকৃতিটিও বলে দিয়েছেন কুরআনের মধ্যে সূরা নাযিয়াতের ৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَاهَا অতঃপর তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীকে দান করেছেন ডিম্ব আকৃতি
এই আয়াতে যে আরবি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তা হল দাহাহা 'دحها' প্রাচীন অনুবাদগুলিতে এই আয়াতের অর্থ রয়েছে-অতঃপর তিনি পৃথিবীকে বিছিয়ে দিয়েছেনযেহেতু তারা পৃথিবীর আকৃতি-প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না তাই তারা দাহাহা (دحها) শব্দটিকে দাহবুন(دحو) এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছিলেন এবং তার অর্থ করেছিলেন প্রসারিত করা বা বিছিয়ে দেওয়া’ ‘দাহাশব্দের প্রকৃত অর্থ উটের ডিমতার কিছু সাধিত শব্দ নিম্নরূপ
আল-উদহিয়্যু (الأدحي) -উটপাখির ডিম
আল-উদহুয়্যাতু (الأدحوة) -উটপাখির ডিমের স্থান
তাদাহহিয়ান (تدحيا) - গর্তের মধ্যে একটি পাথর পতিত হওয়া
আয়াতটি এভাবে পৃথিবীর কিছুটা ডিম্বাকৃতি হওয়ার কথা পরিষ্কারভাবে নির্দেশ করেসাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণের ব্যাসের তুলনায় নিরক্ষীয় ব্যাসের আপেক্ষিক পার্থক্য এটিকে একটি বর্তুল আকৃতি কিংবা ডিম্ব আকৃতি দান করেছেআরও পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, পৃথিবীর প্রকৃত আকৃতি গঠনে এই আকৃতিটি কিছুটা বিকৃত হয়েছে, যাকে বলা হয় 'Geoid' যা একটি নাশপাতির অনুরূপপৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাসার্ধ্য হল ৬৩৭৮ কিলোমিটার, যেখানে তার মেরু অঞ্চলীয় ব্যাসার্ধ্য হল ৬৩৫৬ কিলোমিটার
এই আয়াত থেকে একথাও বুঝা যায়, আদিকালে পৃথিবী এই আকৃতির ছিল নাপরবর্তীতেই এই আকৃতি প্রাপ্ত হয়মহাকাশ বিজ্ঞানে পৃথিবীর বর্তমান আকার সম্পর্কে দুটি মতবাদ রয়েছেপ্রথম মতানুসারে, পৃথিবী ছিল সূর্য থেকে ছিটকে পড়া একটি টুকরোদ্বিতীয় মতানুসারে, সূর্য ও পৃথিবী উভয়টিই একটি নীহারিকা থেকে গঠিত হয়েছেউভয় মতই স্বীকার করে, প্রথম যখন পৃথিবী সৃষ্টি হয় তখন তার বর্তমান আকার ছিল নাপরবর্তী সময়েই এটি ডিম্বাকার লাভ করেছেএই আয়াতটি উভয় মতের সঙ্গে পরিপূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ
এই আয়াতের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল-এটি সূরা আন নাযিয়াত’-এরই একটি অংশ, যাকে 'Extractors' বা উৎপাটনকারীগণ শব্দে ভাষান্তরিত করা যেতে পারেএই সুরায় সৃষ্টি সম্পর্কিত আরো কিছু রহস্য বর্ণিত হয়েছে২৮ থেকে ৩২ নং আয়াত পর্যন্ত আছে পৃথিবী সৃষ্টি সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত তথ্য ৩১ নং আয়াতে বলা আছে-أَخْرَجَ مِنْهَا مَاءَهَا وَمَرْعَاهَا আর তিনি তা থেকে নির্গত করেছেন পানি ও চারণভূমিঅন্য কথায়, এই আয়াত বলে, পৃথিবী তার ডিম্ব আকৃতি লাভ করার পর তাতে পানি প্রদান করা হয়েছিলফলে তা পৃথিবীর প্রথম শ্রেণীর উদ্ভিদ, যেমন-তৃণ বা ঘাস উৎপন্ন করেছিলআধুনিক কালের ভূতত্ত্ববিদরাও এখন এ কথা বিশ্বাস করেন যে, পৃথিবী বর্তুলাকৃতি লাভ করার পর বারিমণ্ডল গঠিত হয়সৃষ্টি হয় সাগর-মহাসাগরঅতঃপর ক্রমান্বয়ে উদ্ভিদরাজি উদ্গত হয়

৩২ নং আয়াতে আছে, وَالْجِبَالَ أَرْسَاهَا আর পর্বতমালা, তিনি স্থাপন করেছেন সুদৃঢ়ভাবেমহাবিশ্ব সৃষ্টির যে ক্রম পর্যায় কোরান মাজিদে বর্ণিত হয়েছে ভূবিদ্যাসংক্রান্ত অধুনা ধারণাসমূহ তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত


ফাইয়াজ আল-মুহাইমিন