শনিবার, ৩০ মে, ২০১৫

দিবা-রাত্রি আবর্তনশীলতা কেন প্রয়োজন?

আমাদের কারো অজানা নয় যে, পৃথিবী আপন মেরুরেখার উপর প্রায় প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার করে ঘুরছেঅন্য কথায় বলতে গেলে, পৃথিবী তার আপন কক্ষপথে প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার মাইল বেগে চলছেমনে করুন, যদি এর গতি প্রতি ঘণ্টায় দুশ মাইল হয়ে যায়, তাহলে আমাদের দিন এবং আমদের রাত্র বর্তমানের অনুপাতে দশগুণ বেশী দীর্ঘ হয়ে যাবেঅত্যধিক রকমের উত্তপ্ত সূর্য প্রতি দিন যাবতীয় লতাগুল্ম জ্বালিয়ে দেবেএতদসত্ত্বেও সামান্য যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে সেগুলোকে দীর্ঘ রাতের শীতলতা চিরদিনের জন্য খতম করে দেবে

সূর্য, যা বর্তমানে পৃথিবীতে শক্তির প্রধান উৎস, তার পৃষ্ঠদেশে সাতান্ন হাজার (৫৭,০০০) ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রয়েছে এবং পৃথিবী থেকে এর দুরত্ব আনুমানিক ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইলপৃথিবী অনবরত ঘূর্ণনরত থাকলেও বিস্ময়করভাবে পৃথিবী হতে সূর্যের দূরত্ব সর্বদা স্থিতিশীলএই ঘটনা আমাদের জন্য সীমাহীন গুরুত্ব রাখেকেননা যদি এই দূরত্ব হ্রাস পায়, যেমন সূর্য অর্ধেক পরিমাণ নিকটবর্তী হয়ে যায়, তাহলে জমির উপর এত উষ্ণতার সৃষ্টি হবে যে, সেই গরমে কাগজ পুড়তে থাকবে, আর যদি বর্তমান দূরত্ব দ্বিগুণ হয়ে যায় তাহলে এমন শীতলতার সৃষ্টি হবে যে, তাতে জীবনের কোন অস্তিত্বই থাকবে নাএই অবস্থা তখন সৃষ্টি হবে যখন বর্তমান সূর্যের জায়গায় অন্য কোন অসাধারণ নক্ষত্র এসে পড়বেএমন বৃহৎ নক্ষত্র, যার উষ্ণতা আমাদের সূর্যের চাইতে দশ হাজার গুণ বেশীযদি ঐ নক্ষত্র সূর্যের জায়গায় হত, তাহলে তা পৃথিবীকে নির্ঘাত আগুনের চুল্লিতে পরিণত করত এজন্য সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে আল্লাহ একটি নিয়মতান্ত্রিক সম্পর্ক সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে কুরআনে তিনি বলেন-

إِنَّ فِي اخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَّقُونَ
নিশ্চয়ই রাত-দিনের পরিবর্তনের মাঝে এবং যা কিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও যমীনে, সবই হল নিদর্শন সেসব লোকের জন্য যারা ভয় করে(ইউনুস ৬)

পৃথিবী ২৩ ডিগ্রি কোণে শূন্যে ঝুঁকে আছেএই ঝুঁকে থাকাটাই আমাদেরকে বিভিন্ন ঋতুর অধিকারী করেছেএরই ফলশ্রতিতে জমির বেশীর ভাগ অংশ আবাদের যোগ্য হয়ে উঠেছে, বিভিন্ন ধরনের লতাগুল্ম এবং ফলমূল উৎপাদিত হচ্ছেপৃথিবী যদি এভাবে ঝুঁকে না থাকত তাহলে দুই মেরুর উপর সর্বদা অন্ধকার ছেয়ে থাকতোফলে সমুদ্রের বাষ্পসমূহ উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে পরিভ্রমণ করত এবং জমি হয় তুষার আবৃত থাকত, নয় মরুভূমিতে পরিণত হতএ ছাড়াও আরো অনেক চিহ্ন ফুটে উঠত যার ফলশ্রুতিতে ঝোঁকবিহীন পৃথিবীর উপর জীবনের অস্তিত্ব অসম্ভব হয়ে উঠতএটা কত হাস্যকর কথা যে, জড় বস্তু নিজেই নিজেকে এভাবে এত সুন্দর করে ও যথার্থ আকার সুবিন্যস্ত করে নিয়েছে!

মহান প্রজ্ঞাময় সমস্ত জাহানের প্রতি পালক আল্লাহ তাআলা এ পৃথিবীতে মানব সৃষ্টি করে তার জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করেছেনমানব জাতির প্রতি আল্লাহর নিয়ামত অফুরন্ত ও অগণিতদিন রাতের পরিবর্তন তন্মধ্যে অন্যতমনির্ধারিত নিয়মে দিনরাত্রির পরিবর্তন হচ্ছেআর একথা বর্তমানে সবার কাছে সুস্পষ্ট যে, পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণেই দিন ও রাতের সৃষ্টি হচ্ছেআমরা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত স্বচক্ষে অবলোকন করছি যে, সুনিয়ন্ত্রিতভাবে একই নিয়মে রাতের পর দিন এবং দিনের পর রাত আসছেআমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি যে, এই পরিবর্তন আমাদের জন্য কী কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসছে? দেখা যাক, কুরআন এ সম্পর্কে কী বলছে।

وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ آيَتَيْنِ ۖ فَمَحَوْنَا آيَةَ اللَّيْلِ وَجَعَلْنَا آيَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَ
আমি রাত্রি ও দিনকে দুটি নিদর্শন করেছিঅতপর নিষ্প্রভ অন্ধকার করে দিয়েছি রাতের নিদর্শন এবং দিনের নিদর্শনকে আলোকময় করেছি(বনী ইসরাঈল ১২)

আধুনিক বিজ্ঞান বর্ণনা বলছে, এই দিন রাতের পরিবর্তন যদি না হতো তবে পৃথিবীর এক পৃষ্ঠের সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যেত এবং অন্য পৃষ্ঠে ঠাণ্ডায় মানব জাতি সহ সমস্ত জীবকুল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিত

সূরা কাসাসের ৭১ এবং ৭২ নং আয়াত থেকে বোঝা যায়, দিবা-রাত্রির পরিবর্তনশীলতার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের জন্য কত বড় নিয়ামত দান করেছেন!


قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَٰهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُمْ بِضِيَاءٍ ۖ أَفَلَا تَسْمَعُونَ قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَٰهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُونَ فِيهِ ۖ أَفَلَا تُبْصِرُونَ
বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি রাত্রিকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে, যে তোমাদেরকে আলোক দান করতে পারে? তোমরা কি তবুও কর্ণপাত করবে না? বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি দিনকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে যে, তোমাদেরকে রাত্রি দান করতে পারে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে? তোমরা কি তবুও ভেবে দেখবে না ?


Faiyaz Al-Muhaimin

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন