আদিমকাল থেকেই পৃথিবীর আকার নিয়ে নাক গলানোর মতো মানুষের অন্ত নেই। চিন্তাশীল মানুষের অনুমানপূর্ব ধারণা
ছিল, পৃথিবীর আকার হচ্ছে চ্যাপ্টা বা সমতল। হাজার হাজার
বছর ধরে হাস্যকরভাবে মানুষ বেশিদূর পর্যন্ত ভ্রমণ করতো না পৃথিবীর কিনারা থেকে
ছিটকে পড়ে যাবার ভয়ে! ১৫৯৭ সালে ফ্রান্সিস
ড্রেক প্রথম পৃথিবীর চারদিকে নৌ-ভ্রমন করে প্রমাণ করেছিলেন যে, পৃথিবী গোলাকার। এখন দেখা যাক, পৃথিবীর আকার সম্পর্কে কুরআন আমাদেরকে কী তথ্য দিচ্ছে!
এখানে একটু বলে রাখা ভালো, কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হলে, অবশ্যই আরবি
ব্যাকরণ এবং ভাষাশৈলী সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা জরুরি।
যেমন, আমরা এখন পৃথিবীর আকার সম্পর্কে কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাচ্ছি। কিন্তু আমরা উদ্ধৃতি দিব ‘দিন রাত্রির
পরিবর্তন’ সম্পর্কিত
একটি আয়াতের।
أَلَمْ تَرَ
أَنَّ اللَّهَ يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي
اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي إِلَىٰ أَجَلٍ مُسَمًّى
وَأَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِير
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল
পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে। তুমি কি আরও দেখ না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন ?(লুকমান ২৯)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, রাত ধীরে
ধীরে এবং ক্রমশ দিনে রূপান্তরিত হয়, অনুরূপভাবে দিনও ধীরে ধীরে রাতে রূপান্তরিত হয়। এ ঘটনা কেবল পৃথিবী গোলাকার হলেই ঘটতে পারে। পৃথিবী যদি চ্যাপ্টা
বা সমতলভূমি হত, তাহলে রাত্রি থেকে দিনে এবং দিন থেকে রাত্রিতে
একটা আকস্মিক পরিবর্তন ঘটে যেত। অর্থাৎ সেকেন্ডের মধ্যে দিন হতো আবার সেকেন্ডের মধ্যেই কিছু
বুঝে উঠার আগেই রাতের প্রবেশ ঘটতো।
সূরা যুমারের ৫
নং আয়াতে আল্লাহ প্রায় একই কথা বলেছেন।
خَلَقَ
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۖ يُكَوِّرُ
اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ ۖ
وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ
يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى
তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি
দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ
করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত।
এ আয়াতটিতে যে সমস্ত শব্দাবলী
ব্যবহৃত রয়েছে সেগুলো লক্ষ্য করা জরুরি। “আচ্ছাদিত বা মোড়ানো” অর্থে উপরের আয়াতটিতে যে আরবী শব্দটির ব্যবহার করা হয়েছে সেটি
হলো “يُكَوِّرُ”। এর অর্থ হল “একটি জিনিষ দ্বারা
অপর একটি জিনিষকে জড়িয়ে বা মুড়িয়ে দেয়া যা কিনা একটি পোষাকের মতো ভাঁজ করা অবস্থায় গোছানো রয়েছে।” উদাহরণস্বরূপ, পাগড়ী যেমন করে পরিধান করা হয়, ঠিক তেমনিভাবে একটি জিনিষ দিয়ে অপরটিকে জড়ানোর কাজে আরবী অভিধানে
এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। দিন ও রাত্রি পরস্পরকে জড়িয়ে বা আচ্ছদিত অবস্থায় রয়েছে- আয়াতটিতে প্রদত্ত এই তথ্য দ্বারা পৃথিবীর আকৃতির
সঠিক তথ্যই প্রদান করা হয়েছে। এ অবস্থাটি কেবল সেই পযার্য়ে সঠিক হতে পারে যখন পৃথিবীর আকৃতি
হয় গোলাকার।
পৃথিবী গোলাকার-এটি সঠিক ধারণা। কিন্তু পরিপূর্ণ গোলাকার নয়। পৃথিবীর আকার দুই মেরুতে কিছুটা চ্যাপ্টা, ডিমের মতো। এ কারণে, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের অভিকর্ষজ ত্বরণের মান
ভিন্ন ভিন্ন পাওয়া যায়। তাহলে? তাহলে কুরআন কি ভুল কথা বললো?
না। আমরা ছোটবেলায়
যেমন শিখে এসেছি পৃথিবী গোলাকার তেমনিভাবে কুরআনে পৃথিবীর আকার-আকৃতি সম্পর্কে প্রাথমিক
ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছে-এটি গোলাকার। তবে উচ্চতর
পড়াশুনার জন্য আল্লাহ প্রকৃত আকৃতিটিও বলে দিয়েছেন কুরআনের মধ্যে। সূরা নাযিয়াতের ৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
وَالْأَرْضَ بَعْدَ
ذَٰلِكَ دَحَاهَا “অতঃপর তিনি (আল্লাহ)
পৃথিবীকে দান করেছেন ডিম্ব আকৃতি।”
এই আয়াতে যে আরবি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তা হল ‘দাহাহা’ 'دحها'। প্রাচীন অনুবাদগুলিতে এই আয়াতের অর্থ রয়েছে-‘অতঃপর তিনি পৃথিবীকে
বিছিয়ে দিয়েছেন।’ যেহেতু তারা পৃথিবীর আকৃতি-প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না তাই তারা দাহাহা
(دحها) শব্দটিকে ‘দাহবুন’ (دحو) এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছিলেন এবং তার অর্থ করেছিলেন ‘প্রসারিত করা বা
বিছিয়ে দেওয়া।’ ‘দাহা’ শব্দের প্রকৃত অর্থ
‘উটের ডিম’। তার কিছু সাধিত শব্দ নিম্নরূপ।
আল-উদহিয়্যু (الأدحي) -উটপাখির ডিম।
আল-উদহুয়্যাতু (الأدحوة) -উটপাখির ডিমের
স্থান।
তাদাহহিয়ান (تدحيا) - গর্তের মধ্যে
একটি পাথর পতিত হওয়া।
আয়াতটি এভাবে পৃথিবীর কিছুটা ডিম্বাকৃতি হওয়ার কথা পরিষ্কারভাবে নির্দেশ করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে। পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণের ব্যাসের তুলনায় নিরক্ষীয় ব্যাসের আপেক্ষিক পার্থক্য
এটিকে একটি বর্তুল আকৃতি কিংবা ডিম্ব আকৃতি দান করেছে। আরও পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, পৃথিবীর প্রকৃত
আকৃতি গঠনে এই আকৃতিটি কিছুটা বিকৃত হয়েছে, যাকে বলা হয় 'Geoid' যা একটি নাশপাতির অনুরূপ। পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাসার্ধ্য হল ৬৩৭৮ কিলোমিটার, যেখানে তার মেরু
অঞ্চলীয় ব্যাসার্ধ্য হল ৬৩৫৬ কিলোমিটার।
এই আয়াত থেকে একথাও বুঝা যায়, আদিকালে পৃথিবী এই আকৃতির ছিল না। পরবর্তীতেই এই আকৃতি প্রাপ্ত হয়। মহাকাশ বিজ্ঞানে পৃথিবীর বর্তমান আকার সম্পর্কে দুটি মতবাদ রয়েছে। প্রথম মতানুসারে, পৃথিবী ছিল সূর্য
থেকে ছিটকে পড়া একটি টুকরো। দ্বিতীয় মতানুসারে, সূর্য ও পৃথিবী উভয়টিই একটি নীহারিকা থেকে গঠিত হয়েছে। উভয় মতই স্বীকার করে, প্রথম যখন পৃথিবী সৃষ্টি হয় তখন তার বর্তমান আকার ছিল না। পরবর্তী সময়েই এটি ডিম্বাকার লাভ করেছে। এই আয়াতটি উভয় মতের সঙ্গে পরিপূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এই আয়াতের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল-এটি সূরা ‘আন নাযিয়াত’-এরই একটি অংশ, যাকে 'Extractors' বা উৎপাটনকারীগণ
শব্দে ভাষান্তরিত করা যেতে পারে। এই সুরায় সৃষ্টি সম্পর্কিত আরো কিছু রহস্য বর্ণিত হয়েছে। ২৮ থেকে ৩২ নং আয়াত পর্যন্ত আছে পৃথিবী
সৃষ্টি সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত তথ্য। ৩১ নং আয়াতে বলা আছে-أَخْرَجَ
مِنْهَا مَاءَهَا وَمَرْعَاهَا ‘আর তিনি তা থেকে নির্গত করেছেন পানি ও চারণভূমি।’ অন্য কথায়, এই আয়াত বলে, পৃথিবী তার ডিম্ব আকৃতি লাভ করার পর তাতে পানি প্রদান করা হয়েছিল। ফলে তা পৃথিবীর প্রথম শ্রেণীর উদ্ভিদ, যেমন-তৃণ বা ঘাস
উৎপন্ন করেছিল। আধুনিক কালের ভূতত্ত্ববিদরাও
এখন এ কথা বিশ্বাস করেন যে, পৃথিবী বর্তুলাকৃতি লাভ করার পর বারিমণ্ডল গঠিত হয়। সৃষ্টি হয় সাগর-মহাসাগর। অতঃপর ক্রমান্বয়ে উদ্ভিদরাজি উদ্গত হয়।
৩২ নং আয়াতে আছে, وَالْجِبَالَ أَرْسَاهَا
‘আর পর্বতমালা, তিনি স্থাপন করেছেন
সুদৃঢ়ভাবে।’ মহাবিশ্ব সৃষ্টির যে ক্রম পর্যায় কোরান মাজিদে বর্ণিত হয়েছে ভূবিদ্যাসংক্রান্ত
অধুনা ধারণাসমূহ তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।
ফাইয়াজ আল-মুহাইমিন
এটা তোমাদের মনগরা ধারনা।মুসলিমদের বোকা বানানো জাবেনা।আমরা কুরআন কে বিশ্
উত্তরমুছুনআপনার ধর্ম কি বলে বেদ বাইবেল কি পরছেন একবার ও পরুন তাহলে বুঝবেন কোন ধরনের ধর্ম মানছেন আপনারা কিসের ওপরে বিশ্বাস করে।মুক্তি পূজা সম্পূর্ণ নিষেদ আপনার ধর্মে বলা।তাহলে আপনারা কি মানছেন আপনাদের ধর্ম।কেন শুধু শুধ কোরআন এর ওপর মনগরা কথা বলছেন।কোরআনে এমন একটা ব্যাখ্খা দেখান যে বতর্মান বিজ্ঞন ভূল প্রমাণ করছেন। কেন আপনারা ধর্মের নামে রাজনীতি ধর্ম পালন করছেন
উত্তরমুছুন