বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০১৫

মৌলকণা

আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা জানি, পরমাণুগুলির একটি আভ্যন্তরীণ গঠন আছেএতে রয়েছে একটি কেন্দ্র (Nucleus), যা গঠিত হয় একটি বৈদ্যুতিক আধান যুক্ত কণিকা প্রোটন ও একটি আধান বিহীন কণিকা নিউট্রন সমন্বয়েকেন্দ্রের চতুর্পাশে আবর্তিত হচ্ছে কতগুলো ঋণাত্মক আধানযুক্ত কণিকা ইলেকট্রনপ্রথমে মনে করা হতো, প্রোটন ও নিউট্রনই মৌলকণা (Elementary particle)কিন্তু কতগুলো পরীক্ষায় নির্দেশ পাওয়া যায়, আসলে এগুলি আরো ক্ষুদ্রতম কণা দ্বারা গঠিতক্যালটেক পদার্থবিদ মারে গেলম্যান এই কণাগুলির নাম দেন কোয়ার্ক (Quark) বলবাহী কণিকাগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হল, তারা অপবর্জন নীতি (exclusion principle) মানে না
প্রতিটি প্রোটন ও নিউট্রন তিনটি কোয়ার্ক দিয়ে গঠিতএকটা প্রোটনে রয়েছে দুটি উঁচু কোয়ার্ক (up quark) এবং একটি নিচু কোয়ার্ক (down)নিউট্রনে রয়েছে দুটি নিচু (down) কোয়ার্ক আর একটি উঁচু কোয়ার্কশক্তিশালী কেন্দ্রীয় বলকে (Strong nuclear force) বলা হয় চতুর্থ শ্রেণীর বলএই বল প্রোটন ও নিউট্রনের কোয়ার্কগুলিকে একত্রে ধরে রাখেতাছাড়া একত্রে ধরে রাখে পরমাণুর কেন্দ্রকের প্রোটন ও নিউট্রনগুলিকেবিশ্বাস করা হয় গ্লুয়ন (gluon) নামক এক চক্র বিশিষ্ট আর একটি কণিকা এই বল বহন করেবলবাহী কণিকাগুলিকে কণিকা অভিজ্ঞাপক যন্ত্রে বাস্তব (real) কণিকার মতো প্রত্যক্ষভাবে শনাক্ত করা যায় নাকিন্তু তাদের অস্তিত্ব আমরা জানতে পারিতার কারণ, তাদের একটি মাপন যোগ্য অভিক্রিয়া রয়েছেতারা পদার্থ কণিকাগুলির অন্তর্বর্তী বল সৃষ্টি করে
কুরআনে যে মৌলকণা বর্ণনা সাংকেতিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো কোয়ার্ক, নিউট্রিনো প্রভৃতি ক্ষুদ্রতম ভর বিশিষ্ট সূক্ষ্মতম কণিকাসূরা সাবার ৩নং আয়াত থেকে এ বিষয়টির ব্যাখ্যা করা যায়


وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَأْتِينَا السَّاعَةُ ۖ قُلْ بَلَىٰ وَرَبِّي لَتَأْتِيَنَّكُمْ عَالِمِ الْغَيْبِ ۖ لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَلَا أَصْغَرُ مِنْ ذَٰلِكَ وَلَا أَكْبَرُ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِين
কাফেররা বলে, আমাদের উপর কেয়ামত আসবে নাবলুন কেন আসবে না? আমার পালনকর্তার শপথ-অবশ্যই আসবেতিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাতনভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে তাঁর আগোচরে নয় অণু পরিমাণ কিছু, না তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এবং না বৃহৎ-সমস্তই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে

আয়াতটির কতিপয় শব্দ লক্ষ্য করা যাক(সূত্র : কুরআনের অভিধান, মুনির উদ্দীন আহমদ)

ذَرَّةٍ (যাররাতুন)-অণু ,বস্তুর সূক্ষ্ম অংশ
مِثْقَالُ (মিছক্কালুন)-ভর বিশেষ
أَصْغَرُ (আছগারু)- অনেক ছোট, ক্ষুদ্র

مِثْقَالُ অর্থ যার ভর আছে অর্থাৎ ওজন করা যায় এমন কিছু কে বোঝানো হয়েছে এবং ذَرَّةٍ অর্থ বস্তু বা পদার্থের সূহ্মতম অংশ কে বোঝানো হয়েছেসুতরাং مِثْقَالُ ذَرَّةٍ  অর্থ বস্তুর সূক্ষ্মতম ভরবিশিষ্ট অংশ (the smallest weightable portion of the particle)
অর্থাৎ পদার্থের যে অংশকে ওজন করা সম্ভব, এখানে সেটার প্রতিই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছেআজ আমরা বিজ্ঞানের মাধ্যমে জেনেছি যে, কোয়ার্ক, নিউট্রিনো ইত্যাদি এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত পদার্থের সবচেয়ে সূক্ষ্মতম অংশ বা কণিকা এবং যেগুলোর ওজন কণিকা অভিজ্ঞাপক যন্ত্রের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে সনাক্ত করা সম্ভবসুতরাং আদি পদার্থ কণিকা কোয়ার্ক, নিউট্রিনো ইত্যাদিকে মিছক্কালু যাররাতুন হিসেবে গ্রহণ করে নেয়া যুক্তিসংগত হবে

أَصْغَرُ مِنْ ذَٰلِكَ অর্থ তা অপেক্ষা ক্ষুদ্র বলতে এমন কিছুকে হয়ত বোঝানো হয়েছে যেগুলোর ভর কণিকা অভিজ্ঞাপক যন্ত্রে বাস্তব কণিকা অর্থাৎ ভরবাহী কণিকার মত প্রত্যক্ষভাবে সনাক্ত করা সম্ভব নয়, তবে এগুলোর এমন একটা মাপনযোগ্য অভিক্রিয়া রয়েছে যার কারণে তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা অবগত হতে পারিবিজ্ঞানের বর্ণনায় বলবাহী মৌল কণিকাগুলো যেমন ফোটন, গ্লুয়ন, গ্র্যাভিটন ইত্যাদি ভরবাহী মৌল কণিকা যেমন কার্ক, নিউট্রিনো থেকেও ক্ষুদ্রতবে এগুলোর মাপনযোগ্য অভিক্রিয়া রয়েছেসুতরাং তা অপেক্ষা ক্ষুদ্র বলতে বলবাহী মৌল কণিকাসমূহের প্রতিই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে
প্রশ্ন আসতে পারে, কুরআনে কেন শুধু ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে? কেন সহজভাবে এবং আরো স্পষ্টভাবে মৌলকণা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়নি?

এর জবাব হচ্ছে-কুরআনুল কারীম নাযিল হয়েছে সবকালের সব মানুষের জন্যতদানীন্তন আরব সমাজ তথা পঞ্চম শতকের বিশ্বে অবতীর্ণ কুরআনে যদি স্পষ্টভাবে এসব তথ্য সন্নিবেশিত করা হতো, তাহলে তা লোকজনের কাছে দুর্বোধ্য মনে হতোদ্বীনের দাওয়াত সহজ করার জন্য কুরআনকে অত্যন্ত সাবলীল এবং ঋজু ভাষায় আল্লাহ রব্বুল আলামীন নাযিল করেছেনতবে, মানব সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে কুরআনের সাংকেতিক ইঙ্গিতগুলোর জট যাতে খুলে যায় এবং কুরআনকে যাতে যুগের সাথে সদা সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয় এ কারণে কুরআন নিয়ে গবেষণা করার জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আয়াতে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে
প্রসঙ্গত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা থাকা জরুরিঅনেক তাফসীরকারক এবং অনুবাদক যাররাতুন এবং মিসক্কালুন শব্দগুলোকে ধুলিকণা এবং বালুকণা হিসেবে বর্ণনা করেছেনএর কারণ হচ্ছে, তাফসীরগুলো সম্প্রতি লিখিত নয় এবং সম্ভবত কণিকা অভিজ্ঞাপক যন্ত্র আবিষ্কারের পূর্বে লিখিত

Faiyaz Al-Muhaimin

কুরআনে বর্ণিত গ্রহ ১১টি

রাসূলুল্লাহ (স) এর জমানায় মাত্র কয়েকটি গ্রহ খালি চোখে দেখা যেতষোড়শ শতাব্দীতে গ্যালিলি কর্তৃক টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর আবিষ্কৃত হয় আরো কয়েকটি গ্রহইউরেনাস, নেপচুন এবং প্লুটো নামক গ্রহ তিনটি আবিষ্কৃত হয় যথাক্রমে ১৭৮১, ১৮৪৬ এবং ১৯৩০ সালেপ্লুটো পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্রহের সংখ্যা নয়টিকিন্তু আল কুরআনের শাশ্বত বাণী ও তথ্য অপরিবর্তিত রয়েছেজ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির কষ্টিপাথরে তা হয়ে উঠেছে আরো দীপ্তিময়মহাকাশের অগ্রগতিতে তা আরো ভাস্বর

আমরা এতদিন জেনে এসেছি সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা নয়টিকিন্তু সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে আমাদের সৌরজগতে আরও গ্রহের অবস্থিতিআল কুরআনের দিকে যদি এবার আমরা অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে তাকাই তবে আমরা দেখতে পাই মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও ধ্বংস এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্বন্ধে তত্ত্বসমৃদ্ধ বহু স্পষ্ট আয়াতসূরা ইউসুফের ৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

إِذْ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَا أَبَتِ إِنِّي رَأَيْتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَأَيْتُهُمْ لِي سَاجِدِينَ
যখন ইউসুফ পিতাকে বলল, পিতা, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি তারকাকে (কাক্বাব) এবং সুর্য চন্দ্রকেআমি তাদেরকে আমার উদ্দেশে সেজদা করতে দেখেছি

গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, চৌদ্দশত বছর পূর্বে আল কুরআনে সৌরজগৎ সম্বন্ধে এক মহাতত্ত্ব জানিয়ে দেয়া হয়েছেএখানে লক্ষণীয়, আরবি كَوْكَبًا (কাক্বাব) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছেএই শব্দটি দ্বারা শুধু তারকাকে বোঝায় না, যে কোনো জ্যোতিষ্ককেও বোঝায়এই আয়াতে كَوْكَبًا (কাক্বাব) শব্দটি দ্বারা গ্রহকেই বোঝানো হয়েছেকারণ, সূর্যের এবং চন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্কিত জ্যোতিষ্কগুলো হল গ্রহকাজেই সৌরজগতে এগারটি গ্রহের অবস্থিতির কথাই আল কুরআন ঘোষণা করেছে
এখন প্রশ্ন হলো, এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্রহের সংখ্যা তো ৯টি (Mercury, Venus, Earth, Mars, Jupiter, Saturn, Uranus, Neptune, Pluto)! কুরআনের কথা যদি সত্য হয়, তাহলে আর দুইটি গ্রহ কোথায়?

আমেরিকার বৈজ্ঞানিকরা সম্প্রতি আরো দু'টি গ্রহ আবিষ্কার করেছেনদশম গ্রহটি যার নামকরণ করা হয়নি১৬০০০ এবং ৩২০০০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্য থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছেপৃথিবীর ওজনের পাঁচগুণ ওজন বিশিষ্ট গ্রহটি ৭০০ বছরে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেঅন্য গ্রহটি ছোটএই গ্রহগুলোর আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন নাসা'র বৈজ্ঞানিক জন এন্ডারসন, ইউরোপীয় জ্যোতির্বিদ ড. রিচার্ড ওয়েস্ট, ড. লুকওটস্কপ্যান্ডার
ম্যালি নামের ছোট গ্রহটি চার বছর চুরাশি দিনে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করেএর কক্ষপথ মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথের মধ্যে অবস্থিতজ্যোতির্বিজ্ঞানের এই চরম উন্নতির যুগে যা আবিষ্কৃত হয়েছে তা চৌদ্দশত বছর পূর্বেই ঘোষণা করা হয়েছে আল-কুরআনে যখন বিজ্ঞান, টেলিস্কোপ কিছুই ছিল না

Faiyaz Al Muhaimin

শূকর-মদ কেন হারাম?

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, শূকর খাওয়ার কারনে মানুষের ৭০ ধরনের রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছেশূকরের মাংস মানুষের শরীরের জন্য অত্যধিক ক্ষতিকরকিছুদিন পূর্বেও মনে করা হত শূকরের মাংসে Trichina Parasite জীবাণুই মানুষের শরীরের জন্য একমাত্র বিপত্তিকিন্তু সম্প্রতিকালে বিজ্ঞানীরা শূকরের মাংসের আরও অনেক ক্ষতিকর দিক আবিষ্কার করেছেন

১. ূকর খাওয়ার ফলে ফিতাকৃমি, গোল কৃমি, হুক কৃমি প্রভৃতির মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ দেহাভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়Taenia Solium নামে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ফিতাকৃমি রয়েছে যারা মানুষের পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অংশে পৌছে যায়এর ডিম রক্তের সাথে মিশে গিয়ে শরীরের প্রায় সর্বস্থানে জমা হয় এমন কি এটা মস্তিষ্কে পৌছে তার প্রভুত ক্ষতি সাধন করতে পারে ফলে মস্তিষ্ক বিকৃতি হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়এটা যদি লিভারে প্রবেশ করে লিভারের প্রচন্ড ক্ষতিসাধন করে। তাছাড়া হৃৎপিণ্ডেরও ক্ষতি করে
২. শূকরের গোশত শরীরকে খুব সহজে মোটা করতে পারে যা উচ্চরক্তচাপ সৃষ্টি করে এজন্যই আমেরিকার ৫০% মানুষই স্থূলতা রোগে ভোগে
. শূকরের মাংসে Sutoxin’ নামে একটি স্বতন্ত্র প্রোটিন রয়েছে, যা বিভিন্ন ধরনের এলার্জি সৃষ্টি করেযেমন, হাঁপানি, খোস পাঁচড়া ও একজিমা ইত্যাদি
. শূকরের মাংসে প্রচুর পরিমাণে Muco polysaccharides (একপ্রকার শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থ) রয়েছেএগুলি সালফার সমৃদ্ধ এবং গিঁটসমূহে ও শরীরের জোড়াগুলিতে ব্যথা সৃষ্টি করে
. শূকরের মাংস রক্তের প্রবাহে চর্বিজাতীয় পদার্থের অনুপাত বাড়িয়ে দেয়প্রাণী মাংসে দুধরনের চর্বি থাকেএকটি হল বাহ্যিক যা মাংসকে ঢেকে রাখেঅপরটি হল অভ্যন্তরীণ, যা থাকে মাংসপেশীর তন্তুসমূহেনিম্নে মাংসের আভ্যন্তরীণ পেশীতে চর্বির পরিমাণ দেয়া হল-বাছুরের মাংস-১০%, ভেড়া-২০% মেষশাবক-২৩% শূকরের মাংস-৩৫%
রক্তে চর্বির উচ্চমাত্রা কতিপয় স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার সৃষ্টি করেযেমন, বার্ধক্য, জ্বরা, প্যারালাইসিস ও বিভিন্ন ধরণের হৃদরোগশূকরের মাংসের উচ্চমাত্রার চর্বি মানব স্বাস্থের জন্য সর্বাধিক বিপজ্জনক
৬. শূকরের মাংসে উচ্চমাত্রার চর্বির আরেকটি ক্ষতিকর দিক হল, তা ভিটামিন এবং -এর অতিরিক্ত ক্ষয়সাধন করে যার ফলে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়
৭. শূকর নোংরা ও ঘৃণিত বস্তু ভোগ ও আহার করে থাকেএজন্য, শূকরের মাংস ভক্ষণের ফলে বিভিন্ন প্রকার এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া ও মানব দেহে Lympatic system-এ নানান ধরণের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়
৮. শূকরের মাংসের কারণে একটি প্রাণঘাতি ব্যধি জন্ম নেয়, যা সঞ্চারিত হয় Trichina নামক জীবাণুর মাধ্যমেযদিও প্রযুক্তির সাম্প্রতিক উৎকর্ষের ফলে এই জীবাণু দূর করা যেতে পারে তথাপি ধারণা করা হয় পৃথিবীতে প্রায় ৩০ মিলিয়ন Trichina victims রয়েছে

যখন কুরআন শূকরের মাংসকে হারাম ঘোষণা করে তখন এসব তথ্য মানুষের জানা ছিল না পবিত্র কুরআনের চার স্থানে শূকর খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে


إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেইনিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু (বাকারা ১৭৩)

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلَامِ
তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যা, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ (মায়িদা ৩)

قُلْ لَا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَىٰ طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا أَنْ يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ
আপনি বলে দিনঃ যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ; যবেহ করা জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয় (আনআম ১৪৫)

إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন রক্ত, শুকরের মাংস এবং যা জবাই কালে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারণ করা হয়েছেঅতঃপর কেউ সীমালঙ্ঘন কারী না হয়ে নিরুপায় হয়ে পড়লে তবে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (নাহল ১১৫)


এখন দেখা যাক, মাদক সম্পর্কে কুরআন এবং বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন।

আদিকাল থেকেই মানবসভ্যতার সাথে মদ এবং মদ জাতীয় দ্রব্যের নিবিড় সম্পর্কমানুষকে আল্লাহবিমুখ করার জন্য শয়তানের একটি মোক্ষম হাতিয়ার এটিকুরআনে যে সমাজে নাযিল হয়েছিল সে সমাজ পুরোপুরি মাদকের সমুদ্রে ডুবে ছিলএমনকি কুরআনে মাদক নিষিদ্ধ হয়ার পূর্ব পর্যন্ত অনেক মুসলমান মদ খেতকিন্তু, আল্লাহ তো তাঁর বান্দাদের জন্য ক্ষতিকর বস্তু কখনো হালাল করতে পারেন না! বিভিন্ন গবেষণা এবং জরিপে উঠে এসেছে-
১. যে মাদকাসক্ত সে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে
২. মাদকাসক্ত ব্যক্তি মা-বাবাকেও গালিগালাজ করে, এমনকি হত্যা পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছে
৩. আমেরিকায় বিচার বিভাগ অপরাধীদের একটি জরিপে দেখেছে প্রতিদিন আমেরিকাতে ২৭১৩ টি ধর্ষ সংগঠিত হয় যার বেশিরভাগ ধর্ষকই মাতাল
৪. অনেক ছোট মেয়ে তার পিতা দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে যখন পিতা মদ্যপায়ী অবস্থায় ছিল।
৫. এইডস ছড়ানোর অন্যতম কারন হলো মাদকাসক্তি

এগুলো হলো সামাজিক সমস্যাএখন প্রশ্ন হলো চিকিৎসা বিজ্ঞান মাদকের ব্যাপারে কী বলে?
১. লিভার নষ্ট হতে পারে
২. দেহের বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার হতে পারে
৩. ওয়েসোপাগিটিস, গস্খাসটরাইটিস, হেপাটাইটিস ইত্যাদি মারাত্মক রোগ হতে পারে
৪. বেরিবেরি ,বুকের প্রদাহ অ্যাজমা ইত্যাদি হাজারো ব্যধি হতে পারে

এত ক্ষতিকর বস্তু তো আল্লাহ মুমিনদের জন্য হালাল করতে পারেন না! এজন্য সরাসরি কুরআনের মাধ্যমেই আল্লাহ মাদককে হারাম করেছেন


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ কিছুই নয়অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাকো যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও (মায়িদা ৯০)

এছাড়া রাসুলুল্লাহর হাদীস দ্বারা মাদককে হারাম করা হয়েছে (ইবনে মাজাহ ৩৩৭১)

সুতরাং, কুরআন যে মানব কল্যাণের জন্যই অবতীর্ণ এবং তা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে পরিপূর্ণরূপে সামঞ্জস্যশীল তা শূকর এবং মাদক নিষিদ্ধকরণের দৃষ্টান্ত থেকেই বোঝা যায়


Faiyaz Al Muhaimin