কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত
যে, এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে। তাঁরা আরো নিশ্চিত যে, এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণ করছে। বিষয় দুটি আসলে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। সম্প্রসারণ করছে বলেই
শুরু আছে। অর্থাৎ এমন একটা সময় ছিল যখন এই মহাবিশ্ব
বর্তমান অবস্থায় ছিল না।
কুরআন বলছে-
بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَإِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا
يَقُولُ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
তিনি আকাশমন্ডলী ও জমিনকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনয়নকারী; তিনি যখন কিছু করতে
চান তখন সেটিকে বলেন, ‘হয়ে যাও’। অমনি তা হয়ে যায়। (বাকারা ১১৭)
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ
فَيَكُونُ
বস্তুত তাঁর সৃষ্টিকার্য এরূপ যে, যখন তিনি কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছে করেন, তখন তিনি তাকে বলেন, ‘হও’, অমনি তা হয়ে যায়। (ইয়া-সীন ৮২)
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, কোরআন অনুযায়ীও এই মহাবিশ্বের একটি শুরু আছে – অর্থাৎ এই মহাবিশ্বকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে নিয়ে আসা হয়েছে, তা ‘পরম শূন্য’ থেকে
হোক বা অন্য যেকোনো ভাবেই হোক না কেন। উপরোল্লেখিত আয়াতে উল্লেখিত ‘Be’ কম্যান্ডমেন্টকে ‘Big Bang’ এর সাথে অত্যন্ত যৌক্তিক ভাবেই তুলনা করা যেতে পারে– অর্থাৎ মহাবিশ্বের শুরুর মুহূর্ত। বিজ্ঞানীরা যেমন বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুতি
নিয়ে ‘সুইচ টিপে’ কৃত্রিম বিগ ব্যাং
শুরু করতে যাচ্ছেন। এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা ‘Be’ কম্যান্ডমেন্ট এর মাধ্যমে
আজ থেকে প্রায় পনের বিলিয়ন বছর আগে বাস্তব বিগ ব্যাং শুরু করেছিলেন। কেউ কেউ আবার এই ‘Be’ কম্যান্ডমেন্টকে নিয়ে বেশ কৌতুক করার চেষ্টা করে। কারো মধ্যে সামান্যতম
সাধারণ বোধ বলে কিছু থাকলে এই বিষয়টা নিয়ে কৌতুক করার আগে দু’বার করে ভেবে দেখা উচিত। অনস্তিত্ব থেকে কোনো কিছুকে অস্তিত্বে নিয়ে
আসতে হলে ‘Be’ কম্যান্ডমেন্ট ছাড়া অন্য কোনো পন্থা আছে কি?
বিগ ব্যাং সম্পর্কে উইকিপিডিয়া বলে, “বিজ্ঞানী এডুইন হাবলের ধারণা মতে, দূরবর্তী ছায়াপথসমূহের
বেগ
সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এরা পরষ্পর দূরে সরে যাচ্ছে অর্থাৎ মহাবিশ্ব ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের ফ্রিদমান-ল্যমেত্র্-রবার্টসন-ওয়াকার মেট্রিক অনুসারে এটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই তত্ত্বসমূহের সাহায্যে অতীত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সমগ্র মহাবিশ্ব একটি সুপ্রাচীন বিন্দু অবস্থা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই অবস্থায় সকল পদার্থ এবং শক্তি অতি উত্তপ্ত এবং ঘন অবস্থায় ছিল। কিন্তু এ অবস্থার আগে কী ছিল তা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীদের
মধ্যে
কোন
ঐক্যমত্য
নেই। অবশ্য সাধারণ আপেক্ষিকতা এর আগের সময়ের ব্যাখ্যার জন্য মহাকর্ষীয় অদ্বৈত বিন্দু (সিংগুলারিটি) নামক একটি শব্দের প্রস্তাব করেছে। মহা বিস্ফোরণ শব্দটি স্থূল অর্থে প্রাচীনতম একটি বিন্দুর অতি শক্তিশালী বিস্ফোরণকে বোঝায় যার মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল, আবার অন্যদিকে এই বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও গঠন নিয়ে বিশ্বতত্ত্বে যে মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে তাকেও বোঝায়।”
বিজ্ঞানী হাবলের এই প্রস্তাব থেকেই মহাবিষ্ফোরণ ধারনাটির ভিত্তি মজবুত হয়। এখন দেখা যাক,
এডুইন
হাবল
যে
ধারনাটি
১৯২৫
সালে
দিয়েছিলেন, সেই সম্পর্কে কুরআন প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে কি বলেছে?
আল হাদীদের ৪৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-
وَالسَّمَاءَ بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ
“আমি
স্বীয়
ক্ষমতাবলে
আকাশ
নির্মাণ
করেছি
এবং
আমি
অবশ্যই
এর
প্রসারনকারী।”
উল্লেখ্য
যে, ১৯২০
সালের পূর্ব
পর্যন্ত বিজ্ঞানিদের
ধারনা ছিলো
যে মহাবিশ্বের
আকৃতি নির্দিষ্ট। অর্থাৎ
অসম্প্রসারনশীল। কিন্তু কোরআনের কথা ছিল তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এডুইন হাবল
আল্লাহর কথাই নতুন করে আবিষ্কার করেছিলেন ১৯২৫
সালে।
বিগ
ব্যাং এর
আর একটি
গুরুত্তপূর্ন ধারনা
হলো সিংগুলারিটি। ষ্টিফেন
হকিংস তাঁর
বইটিতে এই
কথাটাই প্রতিষ্ঠিতি
করার চেষ্টা
করেছেন-যে
একটি মাত্র
ক্ষুদ্র বিন্দু
এবং তাতে
হঠাৎ মহাবিষ্ফরনের
ফলে মহাবিশ্ব
তৈরি।
আসুন
দেখা যাক, উনিশ
শতকে হকিংস
যে কথা
বলেছেন, যেই সম্পর্ক
কুরআন কী
বলে!
َوَلَمْ يَرَ
الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا
فَفَتَقْنَاهُمَا ۖ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ
কাফেররা
কি
ভেবে
দেখে
না
যে, আকাশমন্ডলী
ও পৃথিবীর
মুখ
বন্ধ
ছিল, অতঃপর
আমি
উভয়কে
খুলে
দিলাম
এবং
প্রাণবন্ত
সবকিছু
আমি
পানি
থেকে
সৃষ্টি
করলাম।(আম্বিয়া ৩০)
ডা. জহুরুল
হকের অনুবাদ অনুযায়ী,“যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা কি দেখেনা যে মহাকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবী উভয়ে একাকার ছিল তারপর আমরা স্ববেগে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন
করে দিলাম।”
এখানে
আল্লাহ বলেছেন
যে, আকাশ ও
পৃথিবী অর্থাৎ পুরো
মহাবিশ্ব একত্রিত অবস্থায় ছিলো, যা
তিনি স্ববেগে আলাদা
করে দিয়েছেন। এখানে
অত্যন্ত স্পষ্ট
ভাবে Big Bang বা মহাবিষ্ফোরণ
সংঘটিত হওয়ার
মুহূর্তের কথা
ইজ্ঞিত করা
হয়েছে।
এছাড়াও
কুরআনে বিগ
ব্যাং সম্পর্কে
অনেক ধাপ
এবং অবস্থার
কথা বলা
হয়েছে। আমরা
বিস্ফোরণের
পরবর্তী অবস্থার
কথা জানি।
বিজ্ঞানীরা
বলেন, বিষ্ফোরণের
পরে দীর্ঘকাল
মহাবিশ্ব ধুমায়মান
অবস্থায় ছিলো
এবং পরে
তা একত্রে
ঘনীভূত হয়ে
গ্রহ-গ্রহাণু
তৈরি হয়। এ সম্পর্কে
কুরআন বলছে-
ثُمَّ اسْتَوَىٰ إِلَى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا
وَلِلْأَرْضِ ائْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِعِينَ
“অতঃপর
তিনি
আকাশের
দিকে
মনোযোগ
দিলেন
যা
ছিল
ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর
তিনি
তাকে
ও পৃথিবীকে
বললেন, তোমরা
উভয়ে
আস
ইচ্ছায়
অথবা
অনিচ্ছায়। তারা
বলল, আমরা
স্বেচ্ছায়
আসলাম।” (ফুসিসলাত
১১)
আমাদের এই মহাবিশ্বটি সৃষ্টির প্রারম্ভিক হতে আকৃতি, রঙ ও প্রকৃতিতে পৌছাঁতে
সর্বমোট ৬টি অনির্দিষ্ট সময়কাল অতিবাহিত করেছে। বিভিন্ন আয়াতে তা বর্নিত করেছেন যার মধ্যে সূরা হাদীদের
৪ নং আয়াত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
هُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ
ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْش
“তিনিই নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন ছয়টি সময়ে, অতঃপর আরশের উপর সমাসীন
হয়েছেন।”
আধুনিক বিজ্ঞান
মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময়কালকে মোট
৬টি Period-এ বিশ্লেষন করেছে।
১. Time Zero
২. Inflation
৩. Annihilation
৪. Proton and Neutron
৫. Atomic Nuclei
৬. Stable atom
এখন দেখি আল
কুরআন কী বলছে এ সম্পর্কে!
هُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ
ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۚ يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِي الْأَرْضِ وَمَا
يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيهَا ۖ
“তিনি
নভোমন্ডল
ও ভূ-মন্ডল
সৃষ্টি
করেছেন
ছয়টি সময়কালে, অতঃপর
আরশের
উপর
সমাসীন
হয়েছেন। তিনি
জানেন
যা
ভূমিতে
প্রবেশ
করে
ও যা
ভূমি
থেকে
নির্গত
হয়
এবং
যা
আকাশ
থেকে
বর্ষিত
হয়
ও যা
আকাশে
উত্থিত
হয়।” (হাদীদ ৪)
পবিত্র কুরানের বিভিন্ন স্থানে ৬ টি
সময়কালে পৃথিবী
সৃষ্টির বর্ননা উল্লেখ করা হয়েছে।
إِنَّ
رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ
ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ
حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ ۗ أَلَا
لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
নিশ্চয়
তোমাদের
প্রতিপালক
আল্লাহ। তিনি
নভোমন্ডল
ও ভূমন্ডলকে
ছয়
দিনে
সৃষ্টি
করেছেন। অতঃপর
আরশের
উপর
অধিষ্টিত
হয়েছেন। তিনি
পরিয়ে
দেন
রাতের
উপর
দিনকে
এমতাবস্থায়
যে, দিন
দৌড়ে
রাতের
পিছনে
আসে। তিনি
সৃষ্টি
করেছেন
সূর্য, চন্দ্র
ও নক্ষত্র
দৌড়
স্বীয়
আদেশের
অনুগামী। শুনে
রেখ, তাঁরই
কাজ
সৃষ্টি
করা
এবং
আদেশ
দান
করা। আল্লাহ, বরকতময়
যিনি
বিশ্বজগতের
প্রতিপালক। (আল
আরাফ ৫৪)
إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي
سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۖ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ ۖ مَا
مِنْ شَفِيعٍ إِلَّا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ ۚ ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ
فَاعْبُدُوهُ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
নিশ্চয়ই
তোমাদের
পালনকর্তা
আল্লাহ
যিনি
তৈরী
করেছেন
আসমান
ও যমীনকে
ছয়
দিনে, অতঃপর
তিনি
আরশের
উপর
অধিষ্ঠিত
হয়েছেন। তিনি
কার্য
পরিচালনা
করেন। কেউ
সুপারিশ
করতে
পাবে
না
তবে
তাঁর
অনুমতি
ছাড়া
ইনিই
আল্লাহ
তোমাদের
পালনকর্তা। অতএব, তোমরা
তাঁরই
এবাদত
কর। তোমরা
কি
কিছুই
চিন্তা
কর
না?
(ইউনুস ৩)
অনেক অ্যান্টি ইসলামিক ওয়েব
সাইটে মুক্তমনা
নামধারী কাফির এবং মুরতাদেরা সাধারন মুসলিমদের কটাক্ষ করে
‘কুরআনের বৈজ্ঞানিক অসামঞ্জস্যতা’ নির্দেশ করে যুক্তি
দেখায় যে, 24

6 = 144 ঘন্টায় মহাবিশ্বের সৃষ্টি অবাস্তব! কিন্তু প্রকৃতার্থে শাব্দিক বিশ্লেষনে যদি আমরা
যাই তাহলে দেখবো উপরোক্ত আয়াতগুলোতে ‘ইয়ম’ ব্যবহার না করে ‘আইয়াম‘ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। Arabic Dictionary তে ‘আইয়াম’ শব্দের অর্থ লম্বা সময়।এটি ১ দিন, ১০০ বছর অথবা অনির্দ্দিষ্ট
সময়কাল হতে পারে। আর ‘ইয়ম’ মানে একদিন। এই আয়াতে আইয়াম শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। যদি ‘ইয়ম’ ব্যবহৃত হতো তাহলে তাদের
যুক্তিকে গ্রাহ্য করা যেত।

বিশ্ব সৃষ্টি
এবং বিকাশের ক্ষেত্রে কোরআনের আয়াতগুলো বিশ্লেষণ করলে কুরআনকে
বিজ্ঞানময় না বলার কোন অবকাশ থাকে না।
فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَىٰ فِي كُلِّ
سَمَاءٍ أَمْرَهَا ۚ وَزَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ۚ
ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
অতঃপর
তিনি
আকাশমন্ডলীকে
দু’দিনে
সপ্ত
আকাশ
করে
দিলেন
এবং
প্রত্যেক
আকাশে
তার
আদেশ
প্রেরণ
করলেন। আমি
নিকটবর্তী
আকাশকে
প্রদীপমালা
দ্বারা
সুশোভিত
ও সংরক্ষিত
করেছি। এটা
পরাক্রমশালী
সর্বজ্ঞ
আল্লাহর
ব্যবস্থাপনা।
(ফুসসিলাত ১২)
إِنَّا
زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ অর্থ-নিশ্চয়
আমি
নিকটবর্তী
আকাশকে
তারকারাজির
দ্বারা
সুশোভিত
করেছি। (আস সফফাত ৬)
পৃথিবীর সবচেয়ে
রোমাঞ্চকর এবং রহস্যময় বিষয় জ্যোতির্বিজ্ঞান
সম্পর্কে কুরআনে সবচেয়ে বেশি ইঙ্গিত দেয়া
হয়েছে।
تَبَارَكَ الَّذِي جَعَلَ فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا
سِرَاجًا وَقَمَرًا مُنِيرً
কল্যাণময়
তিনি, যিনি
নভোমন্ডলে
রাশিচক্র
সৃষ্টি
করেছেন
এবং
তাতে
রেখেছেন
সূর্য
ও দীপ্তিময়
চন্দ্র। (আল ফুরকান
৬১)
أَلَمْ تَرَوْا كَيْفَ خَلَقَ اللَّهُ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا
وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِيهِنَّ نُورًا وَجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا
তোমরা
কি
লক্ষ্য
কর
না
যে, আল্লাহ
কিভাবে
সপ্ত
আকাশ
স্তরে
স্তরে
সৃষ্টি
করেছেন? এবং
সেখানে
চন্দ্রকে
রেখেছেন
আলোরূপে
এবং
সূর্যকে
রেখেছেন
প্রদীপরূপে! (নূহ ১৫-১৬)
اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا
তিনিই আকাশসমূহ দৃশ্যমান
খুঁটি ছাড়াই উচ্চে রেখেছেন এবং তিনি অধীন করেছেন সূর্য্য এবং চন্দ্রকে। (আর
রা’দ
২)
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ وَالْفُلْكَ
تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ وَيُمْسِكُ السَّمَاءَ أَنْ تَقَعَ عَلَى
الْأَرْضِ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوفٌ رَحِيمٌ
তুমি কি দেখ না যে, ভূপৃষ্টে যা আছে এবং সমুদ্রে চলমান নৌকা তৎসমুদয়কে আল্লাহ নিজ
আদেশে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তিনি আকাশ স্থির রাখেন, যাতে তাঁর আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্টে পতিত না হয়। (সূরা
হজ্জ ৬৫)
মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে যারা সন্দেহ
পোষণ করে তাদের ব্যাপারে সূরা নাযিয়াতের ২৭-২৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
أَأَنْتُمْ أَشَدُّ خَلْقًا أَمِ السَّمَاءُ ۚ بَنَاهَا رَفَعَ سَمْكَهَا
فَسَوَّاهَا وَأَغْطَشَ لَيْلَهَا وَأَخْرَجَ ضُحَاهَا
কি সৃষ্টি করা অধিক কঠিন, মানুষ না আকাশ যা আল্লাহ
সৃষ্টি করেছেন? নীলাকাশের চাঁদোয়া তিনি উচ্চে তুলেছেন এবং তাকে সামঞ্জস্য করে
সাজিয়েছেন। রাত্রিকে অন্ধকার করা হয়েছে; তারপর এই অন্ধকার রাতের পর ধীরে ধীরে প্রভাতের আলো ফুটতে থাকে, প্রকাশ করা হয় দিবস।
অনেকে মন্তব্য
করে থাকে, কুরআনে বিজ্ঞানের সকল তত্ত্ব বিদ্যমান। আসলে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত তত্ত্বের বর্ননা নয়, কুরআন মানবজাতির নিকট প্রতিটি প্রয়োজনীয় তত্বের
sign বা সাংকেতিক অথবা টেলিগ্রাফিক বার্তা সমন্বয়ে অবতীর্ণ হয়েছে যার বেশিরভাগই এখনো অনাবিষ্কৃতই রয়ে
গেছে। মানুষের
জ্ঞানের পরিধি যত বাড়ছে ততই আল-কুরআনের বিজ্ঞানের সত্যের উদ্ভাসিত সৌন্দর্যে সারা বিশ্ব
হয়ে পড়ছে মুগ্ধ। ইসলামের দিকে মানুষ আকৃষ্ট হবার একমাত্র কারন, বর্তমানে প্রমানিত তথ্য ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার সাথে
কুরআনের নির্ভূল বর্ননাশৈলীর অতুলনীয় মিল।
এই নির্দশন মানুষকে সত্য পথের আলোয় উদ্ভাসিত হতে আহবান করে যাতে
সে সৃষ্টিকর্তা প্রণীত নিয়ম কানুন অনুযায়ী পৃথিবীর প্রকৃতির সাথে নিজের জীবনকে সাজাতে পারে। এতো নির্দশন দেখার পর যারা সঠিক পথে ফিরে আসেনা, পবিত্র কুরআনে তাদের
সম্পর্কে বলেছে-
صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَرْجِعُونَ
“তারা বোবা, কালা ও অন্ধ। সুতরাং তারা ফিরে আসবে না।” (বাকারা ১৮)
ফাইয়াজ আল-মুহাইমিন
জাজাকাল্লাহু খায়রান ভাই😊
উত্তরমুছুনঅসাধারণ,ভাই
উত্তরমুছুন//অনেক অ্যান্টি ইসলামিক ওয়েব সাইটে মুক্তমনা নামধারী কাফির এবং মুরতাদেরা সাধারন মুসলিমদের কটাক্ষ করে ‘কুরআনের বৈজ্ঞানিক অসামঞ্জস্যতা’ নির্দেশ করে যুক্তি দেখায় যে, 24 6 = 144 ঘন্টায় মহাবিশ্বের সৃষ্টি অবাস্তব! কিন্তু প্রকৃতার্থে শাব্দিক বিশ্লেষনে যদি আমরা যাই তাহলে দেখবো উপরোক্ত আয়াতগুলোতে ‘ইয়ম’ ব্যবহার না করে ‘আইয়াম‘ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। Arabic Dictionary তে ‘আইয়াম’ শব্দের অর্থ লম্বা সময়।এটি ১ দিন, ১০০ বছর অথবা অনির্দ্দিষ্ট সময়কাল হতে পারে। আর ‘ইয়ম’ মানে একদিন। এই আয়াতে আইয়াম শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। যদি ‘ইয়ম’ ব্যবহৃত হতো তাহলে তাদের যুক্তিকে গ্রাহ্য করা যেত।//
উত্তরমুছুনএবার আমরা সহিহ মুসলিমের একটি হাদিস দেখে আসি।
http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=19120
পরিচ্ছেদঃ ২. সৃষ্টির সূচনা এবং আদম (আঃ) এর সৃষ্টি
৬৭৯৭। সুরায়জ ইবনু ইউনুস ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তাআলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন। রোববার দিন তিনি এতে পর্বত সৃষ্টি করেন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি আপদ বিপদ সৃষ্টি করেন। বুধবার দিন তিনি নূর সৃষ্টি করেন। বৃহস্পতিবার দিন তিনি পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর তিনি আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ জুমুআর দিনের সময়সমূহের শেষ মুহূর্তে (মাখলূক) আসর থেকে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন।
باب ابْتِدَاءِ الْخَلْقِ وَخَلْقِ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ
حَدَّثَنِي سُرَيْجُ بْنُ يُونُسَ، وَهَارُونُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالاَ حَدَّثَنَا حَجَّاجُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ قَالَ ابْنُ جُرَيْجٍ أَخْبَرَنِي إِسْمَاعِيلُ بْنُ أُمَيَّةَ، عَنْ أَيُّوبَ بْنِ خَالِدٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ رَافِعٍ، مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِي فَقَالَ " خَلَقَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ التُّرْبَةَ يَوْمَ السَّبْتِ وَخَلَقَ فِيهَا الْجِبَالَ يَوْمَ الأَحَدِ وَخَلَقَ الشَّجَرَ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَخَلَقَ الْمَكْرُوهَ يَوْمَ الثُّلاَثَاءِ وَخَلَقَ النُّورَ يَوْمَ الأَرْبِعَاءِ وَبَثَّ فِيهَا الدَّوَابَّ يَوْمَ الْخَمِيسِ وَخَلَقَ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ بَعْدَ الْعَصْرِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فِي آخِرِ الْخَلْقِ وَفِي آخِرِ سَاعَةٍ مِنْ سَاعَاتِ الْجُمُعَةِ فِيمَا بَيْنَ الْعَصْرِ إِلَى اللَّيْلِ " .
قَالَ إِبْرَاهِيمُ حَدَّثَنَا الْبِسْطَامِيُّ، - وَهُوَ الْحُسَيْنُ بْنُ عِيسَى - وَسَهْلُ بْنُ عَمَّارٍ وَإِبْرَاهِيمُ ابْنُ بِنْتِ حَفْصٍ وَغَيْرُهُمْ عَنْ حَجَّاجٍ، بِهَذَا الْحَدِيثِ .
حدثني سريج بن يونس، وهارون بن عبد الله، قالا حدثنا حجاج بن محمد، قال قال ابن جريج أخبرني إسماعيل بن أمية، عن أيوب بن خالد، عن عبد الله بن رافع، مولى أم سلمة عن أبي هريرة، قال أخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم بيدي فقال " خلق الله عز وجل التربة يوم السبت وخلق فيها الجبال يوم الأحد وخلق الشجر يوم الاثنين وخلق المكروه يوم الثلاثاء وخلق النور يوم الأربعاء وبث فيها الدواب يوم الخميس وخلق آدم عليه السلام بعد العصر من يوم الجمعة في آخر الخلق وفي آخر ساعة من ساعات الجمعة فيما بين العصر إلى الليل " . قال إبراهيم حدثنا البسطامي، - وهو الحسين بن عيسى - وسهل بن عمار وإبراهيم ابن بنت حفص وغيرهم عن حجاج، بهذا الحديث .
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৩/ কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ (كتاب صفة القيامة والجنة والنار) 53/ Characteristics of the Day of Judgment, Paradise, and Hell
এই হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, ছয়দিন বলতে ২৪×৬=১৪৪ ঘন্টাই বুঝানো হয়েছে।
আসমানসমূহ ও জমিনকে আলাদা করা কিভাবে বিগ ব্যাং হয়???
উত্তরমুছুনবিগ ব্যাং এর সময় তো পৃথিবীর জন্মই হয়নি! বিগ ব্যাং হয়েছে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে, আর পৃথিবীর বয়স মাত্র ৪.৫ বিলিয়ন বছর। অর্থাৎ, বিগ ব্যাং এর ৯.৩ বিলিয়ন বছর পরে এই পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে! উইকিপিডিয়ার বিগ ব্যাং পেজটা ঘুরে আসুন, ওখানে বিস্তারিত সব পাবেনই, সেই সাথে একটা টাইমলাইন দেয়া আছে বিগ ব্যাং সম্পর্কিত, বিগ ব্যাং কবে হলো, বিগ ব্যাং এর কত পরে পৃথিবীর সৃষ্টি হলো, এরপর ধাপে ধাপে কিভাবে আধুনিক যুগে আমরা পৌছলাম তার টাইমলাইন।
বিগ ব্যাং এর ৯.৩ বিলিয়ন বছর পরে এই পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে
তো, সূরা আম্বিয়া ৩০ নং আয়াতে কিভাবে বিগ ব্যাং খুজে পেলেন মুমিন ভাইয়েরা? বিজ্ঞান বলে বিগ ব্যাং এর সময় পৃথিবী ছিলো না, কিন্তু আল্লাহ পৃথিবী আর আকাশ আলাদা করলেন!
মুসিউন অর্থ মহাসম্প্রসারণকারী।
উত্তরমুছুনপ্রমাণঃ https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=4722
চলুন, দেখে নিই, সূরা আয-যারিয়াতের ৪৭ নং আয়াতটি আসলে কি বলছে,
51:47
وَ السَّمَآءَ بَنَیۡنٰہَا بِاَیۡىدٍ وَّ اِنَّا لَمُوۡسِعُوۡنَ ﴿۴۷﴾
English – Sahih International
And the heaven We constructed with strength, and indeed, We are [its] expander.
Bengali – Mujibur Rahman
আমি আকাশ নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতা বলে এবং আমি অবশ্যই মহাসম্প্রসারণকারী,
Bengali – Abu Bakar Zakaria
আর আসমান আমরা তা নির্মাণ করেছি আমাদের ক্ষমতা বলে এবং আমরা নিশ্চয়ই মহাসম্প্রসারণকারী।
Bengali – Ahsanul Bayaan
আমি আকাশ নির্মাণ করেছি আমার (নিজ) ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহা সম্প্রসারণকারী।
এ আয়াতে আল্লাহ নিজেকে মহা সম্প্রসারণকারী বলেছেন, আল্লাহ কিন্তু বলেননি যে তিনি মহাবিশ্বকে সম্প্রসারণ করেন বা করছেন বা করে চলেছেন। আল্লাহর “এবং আমি অবশ্যই মহা সম্প্রসারণকারী” কথাটি থেকে কোনোভাবেই নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, আল্লাহ প্রতিনিয়ত মহাবিশ্বকে সম্প্রসারণ করে চলেছেন। কিন্তু এডুইন হাবলের তত্ত্ব মতে মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। সুতরাং উক্ত আয়াতে কোনোভাবেই এডুইন হাবলের তত্ত্ব পাওয়া যায় না।
এবার চলুন সুরা ফুসসিলাত এর ১১ নাম্বার আয়াতের দিকে নজর দেই।
উত্তরমুছুনঅতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।
উক্ত আয়াত অনুযায়ী, আকাশ ছিলো ধোঁয়ার কুন্ডলী। এরপর আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীকে নিজ নিজ অবস্থানে আসতে বললেন। আচ্ছা, এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির কোন পর্যায়ে তা ধোয়ার মত ছিলো বলুন তো? সিঙ্গুলারিটিতে সবকিছু ছিলো শক্তিরুপে, আর বিগ ব্যাং এর অনেক পরে পদার্থ গঠিত হওয়ার সুযোগ পায়। আর, গ্রহ নক্ষত্রগুলো গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে তা কি ধোয়ার মত কিংবা বায়বীয় অবস্থায় ছিলো? অবশ্যই না, গ্রহ নক্ষত্রগুলো গঠিত হওয়ার আগে সেগুলো ছিলো প্লাজমা অবস্থায়। ধোয়া বলেন আর বায়বীয় অবস্থা বলেন, কোনটার সাথেই সাদৃশ্য নেই প্লাজমা অবস্থার।