কুরআনুল কারীমের মধ্যে চন্দ্র এবং
সূর্যের গতিশীলতার মাধ্যমে গ্রহ-নক্ষত্রের আবর্তনের বিষয়টি সুষ্পষ্টভাবে তুলে ধরা
হয়েছে। এ সম্পর্কে সবচেয়ে সাধারণ আয়াত হচ্ছে-
وَهُوَ
الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ
كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং
সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে
বিচরণ করে। (আম্বিয়া ৩৩)
সূর্য যে স্থির নয়, বরং একটি সুনির্দিষ্ট
কক্ষপথে বিচরণশীল সেটি আরো একটি আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়।
وَالشَّمْسُ تَجْرِي
لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ
الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
অর্থাৎ সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর
নিয়ন্ত্রণ। (ইয়াসিন ৩৮)
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের গণনানুসারে সূর্য Solar
Apex নামক একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘণ্টায় ৭,২০,০০০ কিলোমিটার বেগে
Vega নামক একটি নক্ষত্রের
দিকে প্রচণ্ড বেগে গতিশীল বা ভ্রমণরত রয়েছে। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, সূর্য প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৭,২৮০,০০০ কিলোমিটার পথ
অতিক্রম করে থাকে। সূর্যের সঙ্গে সঙ্গে
সূর্যের মাধ্যাকর্ষণজনিত সিস্টেমের আওতায় অন্তর্ভূক্ত অন্যান্য গ্রহ, নক্ষত্রগুলোও একই
দূরত্ব অতিক্রম করে। অধিকন্তু মহাবিশ্বের সমস্ত নক্ষত্রপুঞ্জ ঠিক অনুরূপভাবে পরিকল্পিত গতিতে চলনশীল
রয়েছে। ঠিক এর মতোই গোটা
মহাবিশ্ব যে একই ধরণের অসংখ্য কক্ষপথে পরিপূর্ণ তা আয যারিয়াতের ৭নং আয়াত থেকে জানা
যায়।
وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الْحُبُكِ অর্থাৎ কসম বহু পথ আর কক্ষপথ বিশিষ্ট
আসমানের। (যারিয়াত ৭)
মহাবিশ্বে প্রায় ২০০ বিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে, প্রতিটি গ্যালাক্সি
২০০ বিলিয়ন নক্ষত্রপুঞ্জ নিয়ে গঠিত। বেশীর ভাগ নক্ষত্রের রয়েছে গ্রহ আর গ্রহের রয়েছে উপগ্রহ। আকাশমণ্ডলীর সমস্ত বস্তুগুলোই সঠিকভাবে
গণনাকৃত কক্ষপথসমূহে ঘুর্ণায়মানরত রয়েছে। মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে এদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে পরস্পরের সঙ্গে সম্পূর্ণ
সামঞ্জস্য ও সঠিক বিন্যাস বজায় রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রচণ্ড বেগে। এছারাও রয়েছে অগণিত
ধুমকেত যা নির্ভূলভাবে নিয়ন্ত্রিতরূপে আবর্তন করছে। মহাবিশ্বের কক্ষপথরাজি
কেবল এই আকাশমণ্ডলীর গ্রহ-নক্ষত্রের জন্য নয়। গ্যালাক্সিগুলোও সঠিকভাবে গণনাকৃত পরিকল্পিত কক্ষপথসমূহে
বিশাল গতিতে বিচরণ করে। এই আবর্তণের সময় মহাকাশের ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন গ্রহ-নক্ষত্র বা ধুমকেতু কোন একটি
আরেকটির পথে চলে যায়না কিংবা সংঘর্ষে লিপ্ত হয় না। প্রত্যেক সূর্য, গ্রহ, উপগ্রহ সঠিক নিয়মে নির্ভূলভাবে নিজের কক্ষ পথ ধরে কোটি কোটি বছর পরিভ্রমন
করছে। যদি কোন গ্রহ বা
উপগ্রহের বা সূর্যের বা ধূমকেতুর কক্ষপথে ছন্দপতন হতো, তাহলে সুনিপুনভাবে নিয়ান্ত্রিত
এই বিশাল ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংসযজ্ঞের ভয়ঙ্কর তাণ্ডবে মেতে উঠতো।
মাত্র কয়েক মিলিমিটারও যদি আমাদের এ অনিন্দ্যসুন্দর
পৃথিবী কক্ষচ্যুত হয় তবে কি ঘটবে? এক্ষেত্রে Astor Physicist-দের একটি সুন্দর উদাহরণ তুলে ধরা হল যা প্রকাশিত হয়েছিল
Bilim ve Teknik (Science and Technology Journal)-এ জুলাই
১৯৮৩ সালে।
“সূর্যকে কেন্দ্র
করে পৃথিবী ঘূর্ণনের প্রতি 18 কি.মি থেকে যদি মাত্র
2.5 millimeters সরে যায় বা বিচ্যূত
হয় তবে পুরো পৃথিবীটা বরফে আবৃত হয়ে পড়বে। যদি 3.1mm বিচ্যূত হয় তবে আমরা সকলেই মৃত্যুমুখে পতিত হবো।”
কুরআনের আরো একটি আয়াত দ্বারা
আবর্তনশীল মহাবিশ্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।
وَالسَّمَاءِ
ذَاتِ الرَّجْعِ
অর্থাৎ আমি শপথ করছি শৃঙ্খলিত বৃত্তাকারে আবতর্নশীল মহাকাশের।(সুরা তারিক ১১)
এ আয়াত সুষ্পষ্টরূপে এক আবতর্নশীল মহাবিশ্বের
কথা আমাদের জানান দেয়। ১৪০০ বছর আগের সময়ে যখন সাধারন একটি টেলিস্কোপও
ছিল না তখনই কুরআন জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি নির্ভুলভাবে প্রদান
করেছে।
কুরআন নাযিলের সময়ে যে ধুমকেতুটি মহাশূণ্যে
অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাল মিলিয়ে ঘূর্ণনরত ছিল ১৪০০ বছর তা এখনো একই
পথে আল্লাহর নির্দেশে বিচরন করে চলছে, ১ মিলিমিটারও কক্ষচ্যূত হয়নি। যদি হতো, তবে এই সাধের পৃথিবীটা দুমড়ে-মুচড়ে ধ্বংস হয়ে যেত, প্রাণ ধারনের কোন
পরিবেশ থাকতোনা। গ্রহরাজি, গ্রহগুলোর উপগ্রহসমূহ, নক্ষত্রপুঞ্জ আর এমনকি গ্যালাক্সিসমূহ-সব মহাশূণ্যজাত বস্তুরই
রয়েছে নিজ নিজ কক্ষপথ যেগুলো অত্যন্ত সুক্ষ্ম গণনা দ্বারা নির্ণয় করা হয়েছে (যারিয়াত
৭)। সেই আল্লাহ যিনি সমগ্র মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তিনি এই সঠিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তিনিই তা বজায়
রেখে যাচ্ছেন ।
ফাইয়াজ আল-মুহাইমিন
বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল কিন্তু কুরআন অপরিবর্তনীয় যাকে কুরানুল হাকিম অর্থাৎ বিজ্ঞানের রাজা বলা হয়।
উত্তরমুছুন