খুব ছোট বেলা থেকেই আমাদের শেখানো হয়,
“সৃষ্টির আদিতে পৃথিবী একটি উত্তপ্ত গ্যাস
পিণ্ড ছিল। অতঃপর সেটি ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে আকার
ধারন করে জীব জগতের সৃষ্টি হয়।”
আসলে এ মহাবিশ্ব কিভাবে পরিপূর্নতা লাভ
করেছে বা হাজার কোটি বছর পেরিয়ে এখন আমাদের সামনে স্বরুপ মেলে ধরেছে তা নিয়ে অবশ্য
মতভেদ রয়েছে এবং সবই মতবাদ, একটাও প্রমানিত সত্য নয়। তবুও বিজ্ঞান জগতে যত প্রমাণিত সত্য রয়েছে, সেগুলো আগে কখনো
না কখনো অবশ্যই Theory বা বৈজ্ঞানিক কল্পনা ছিল।
Interstellar মেটার থিওরি
বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে সবচেয়ে জনপ্রিয়
বিজ্ঞানের মত হলো, ইন্টারস্টেলার মতবাদ। Interstaller মেটার থিওরি হলো, আমাদের সৌর-জগৎ
এই ক্ষুদ্র গ্যালাক্সি বিভিন্ন প্রকার ধুলোবালি , গ্যাস, ও বিভিন্ন মৌল ও যৌগের সংমিশ্রনের মাধ্যমে গ্রহ নক্ষত্রের
সৃষ্টি। এখানে গ্যাস বলতে মূলত হাউড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসকে বুঝানো
হয়। তবে ধারনা করা হয়, এমন কিছু গ্যালাক্সি আছে তাদের উপাদান
এ হিলিয়াম বা হাইড্রোজেন নয়, অন্যকিছু। আর ইন্টারস্টেলার
ধুলাবালি বা ডাষ্ট বলতে বুঝানো হয়েছে-পানি, বরফ, সিলিকন, গ্রাফাইট, তার সাথে যোগ হয়েছে কালো মেঘ, ধুলোবালি এবং গ্যাস। সাধারন মহাবিশ্বের
সৃষ্টির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায় যে মহাবিশ্বের অবস্থা সর্বপ্রথমে এত উত্তপ্ত
ও সংকুচিত ছিল যা কিনা একটি Sugar Cube-এর সমান। মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে সেটি প্রচণ্ড রুপে পাক খেতে খেতে বাস্পীয় চেহারা ধারন
করে এবং ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সৃষ্টি করে গ্যালাক্সি ও নক্ষত্র। এ মহাবিশ্ব এখনো বৃদ্ধি হচ্ছে এবং সময়ের আবর্তনে এর বৃদ্ধির দ্রুততা কমছে না;
বেড়ে চলছে অবিরাম গতিতে।
কিন্তু প্রশ্ন জাগে ইন্টারস্টেলার থিওরির
ও বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে কুরআনের সাথে এই সম্পর্ক কোথায়?
ইন্টারস্টেলার থিওরির উপরোক্ত মতে বিশ্ব
সৃষ্টির মূল উপাদান মূলত হাইড্রেজেন এবং হিলিয়াম গ্যাস। ইতোমধ্যে বিগ
ব্যাং থিওরি আলোচনা করতে গিয়ে আমরা সূরা ফুসসিলাতের ১১ নম্বর আয়াতটি উল্লেখ করেছি
যেখানে বলা হয়েছে-
ثُمَّ
اسْتَوَىٰ إِلَى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ ائْتِيَا
طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِعِينَ
অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায়
আসলাম।
অর্থাৎ সমগ্র মহাবিশ্ব ও গোটা সৃষ্টিকুল
ধুমায়মান অবস্থায় ছিল। আপাত দৃষ্টিতে, ধূম্র বলতে বাস্পকে বুঝায়। আমরা জানি, হাজার হাজার নক্ষত্র রয়েছে যেগুলোর মূল উপাদান হলো হাইড্রেজেন গ্যাস। বিজ্ঞান অনুযায়ী হাইড্রোজেন গ্যাস নিজে জ্বলে। মহাশূন্যের কোটি কোটি নক্ষত্র ও আলোকসজ্জা মূলত এই জ্বলন্ত
হাইড্রোজেন গ্যাসেরই একটা সমষ্টি।
ড. মাজহার কাজি
অত্যান্ত সুন্দরভাবে বিষয়টি বিশ্লেষন করেছেন।
“এই আয়াত নির্দেশ
করে, গ্রহ-নক্ষত্র সমেত
বিভিন্ন ছায়াপথ গঠিত হওয়ার পূর্বে, সূচনালগ্নে মহাকাশ ছিল কেবল একটি ধুম্রকঞ্জ। Big Bang
(মহা বিস্ফোরণ) তত্ত্বের একটি পরিমার্জিত
রূপ, যার নাম Inflationary theory (স্ফীতি তত্ত্ব)। এটি একটি শূন্যস্থান থেকে আদি ঘনীভূত বস্ত্তর উদ্ভব হওয়ার বর্ণনা দেয়। বর্তমানে জ্যোতির্বিদদের
কাছে অন্যান্য ছায়াপথগুলি মহাজাগতিক স্বর্পিল বাষ্পকুণ্ডলী ঘনীভূত হওয়ার মাধ্যমে গঠিত
হওয়ার ছবি রয়েছে। সাম্প্রতিককালের এই দুই আবিষ্কার কুরআন মাজিদের উপরোক্ত আয়াতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা হোক, এখানে লক্ষণীয় বিষয়
হল, জ্যোতির্বিদরা যাকে
Mist বা ‘বাষ্প’ বলেছে, কুরআন মাজিদ তাকে বলেছে Smoke
বা ‘ধুম’। এ কথা বলার অপেক্ষা
রাখে না যে, ‘বাষ্প’ হল পানির একটি শীতল ও শান্ত উড়ন্ত ধারা বা স্প্রে। পক্ষান্তরে ধুম্র
হল একটি উষ্ণ বায়বীয় পিণ্ড যা কিছু উড়ন্ত অনুকণা ধারণ করে। মূলত, এটিও কুরআন মাজিদের একটি সাহিত্যগত মু’জিজার দৃষ্টান্ত
যে, এটি আলোচ্য বিষয়
সম্পর্কে যথোপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করে তার যথার্থ বর্ণনা পেশ করে।”
ফাইয়াজ আল-মুহাইমিন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন