কল্পবিলাসী
মানুষ যখন আকাশকে একটি অখন্ড
অংশ হিসেবে জল্পনা করতো তখন কল্পনির্ভর পরিবেশে
অবতীর্ণ বিজ্ঞানময় কোরআনে অলৌকিকভাবে বলা হলো যে, এটি সাতটি ভিন্ন ভিন্ন স্তরে গঠিত। অন্য দিকে, অতি সম্প্রতি আধুনিক বিজ্ঞান এ সত্যটি উদঘাটন
করেছে যে পৃথিবীকে ঘিরে থাকা বায়ুমন্ডল সাতটি স্তর নিয়ে গঠিত। সেগুলি হলো-
১. ট্রপোস্ফিয়ার
ট্রপোস্ফিয়ার
ভূপৃষ্ঠ থেকে
শুরু হয়
এবং প্রায়
১২ কিলোমিটার
উচ্চতায় ট্রপোপজ
পর্যন্ত বিস্তৃত,
যদিও এই
উচ্চতার তারতম্য
ঘটে আবহাওয়ার
কারণে যা
মেরুতে প্রায়
৯ কিলোমিটার
(৩০,০০০ ফুট)
এবং বিষুবরেখায়
প্রায় ১৭
কিলোমিটার (৫৬,০০০
ফুট)।
২. স্ট্রাটোস্ফিয়ার
পৃথিবী
থেকে ১২
কিলোমিটার (৭.৫
মাইল বা ৩৯,০০০
ফুট) উপরে
ট্রপোপজ হতে
শুরু হয়ে
স্ট্র্যাটোপজ পর্যন্ত
৫০ থেকে
৫৫ (৩১-৩৪
মাইল; ১৬০,০০০
বা ১৮০,০০০
ফুট) কিলোমিটার
এলাকা জুড়ে
বিস্তৃত।
৩. ওজোনোস্ফিয়ার
স্ট্রাটোস্ফিয়ারের
ওপরে ওজন
গ্যাসের স্তরটিকে
ওজোনোস্ফিয়ার বলা
হয়। ভূপৃষ্ঠ
থেকে ২০-৫০
কি.মি.
উচ্চতার মধ্যে
এ স্তরটি
দেখা যায়। এ
ওজোনের স্তরটির
সূর্যরশ্মির অতিবেগুনি
রশ্মি শোষণ
করে থাকে।
৪. মেসোস্ফিয়ার
সমুদ্রপৃষ্ট
হতে ৫০
কিলোমিটার (৩১
মাইল) উপরে
স্ট্র্যাটোপজ থেকে
শুরু হয়ে
মেসোপজ পর্যন্ত
প্রায় ৮০
থেকে ৮৫
(৫০-৫৩
মাইল বা ২৬০০০০-২৮০০০০
ফুট) কিলোমিটার
এলাকা জুড়ে
বিস্তৃত।উল্কাপিন্ড
সাধারণত ৭৬
কিমি থেকে
১০০ কিমি
এর মধ্যে
উচ্চতায় মেসোস্ফিয়ার
দেখা যায়।তাপমাত্রা
মেসোস্ফিয়ারে উচ্চতা
বাড়ার সঙ্গে
সঙ্গে হ্রাস
যায়।
৫. থার্মোস্ফিয়ার
প্রায়
৮০ কিলোমিটার
(৫০ মাইল
বা ২৬০,০০০
ফুট) উপরে
অবস্থিত এবং
মেসোপজ থেকে
থার্মোপজ পর্যন্ত
এই স্তরের
তাপমাত্রা উচ্চতা
বৃদ্ধি সঙ্গে
সঙ্গে বাড়তে
থাকে যা
এক্সোস্ফিয়ারে প্রবেশ
করলে উচ্চতার
সঙ্গে সঙ্গে
ধ্রুবক হয়। যেহেতু
থার্মোপজ এক্সোস্ফিয়ার
নীচে অবস্থিত
তাই একে
এক্সোবেসও বলা
হয়।এর
গড় উচ্চতা
পৃথিবী থেকে
প্রায় ৭০০
কিলোমিটার কিন্তু
প্রকৃতপক্ষে সৌর
ক্রিয়া ও
ব্যাপ্তি সঙ্গে
পরিবর্তিত হয়
৫০০ থেকে
১০০০ (৩১০-৬২০
মাইল বা ১৬০০০০০-৩৩০০০০০
ফুট) কিলোমিটার
পর্যন্ত।
৬. আয়নোস্ফিয়ার
ভূপৃষ্ঠের
ঊর্ধ্বে ৮০
কিমি থেকে
৪৮০ কিমি
পর্যন্ত উচ্চতায়
বিস্তৃত হালকা
বায়ুস্তরকে
আয়নোস্ফিয়ার বলা
হয় । স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের
ওপরে ভূপৃষ্ঠ
থেকে ৮০
কিলোমিটার উচ্চতায়
বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা
–৯৩° সেলসিয়াস
থেকে বাড়তে
বাড়তে ৪৮০
কিলোমিটার উচ্চতায়
প্রায় ১২৩২° সেলসিয়াসে
পরিণত হয়
।
৭. এক্সোস্ফিয়ার
পৃথিবীর
বায়ুমন্ডলের সবচেয়ে
দূরবর্তী স্তর।
এক্সোবেস থেকে
শুরু হয়ে
৪৮০-৯৬০ কিলোমিটার
উপরে বিস্তৃত
এবং সমুদ্রতল
হতে প্রায়
চাঁদের দূরত্বের
অর্ধেক পথ।এটি
প্রধানত হাইড্রোজেন, হিলিয়াম
এবং কিছু
ভারী অনুসমূহ
যেমন নাইট্রোজেন, অক্সিজেন
এবং কার্বন
ডাইঅক্সাইড দিয়ে
গঠিত। এই অণু
ও পরমাণুসমূহ
পরস্পর থেকে
এত দূরে
থাকে যে
একে অপরের
সঙ্গে সংঘর্ষে
লিপ্ত হয়
না ফলে
বায়ুমন্ডল
আর গ্যাস
হিসাবে আচরণ
করে না।
[অধিকাংশ
স্থানে উল্লেখ রয়েছে, প্রধান বায়ুস্তর ৫টি। কিন্তু ছোট বড় বায়ুস্তর মিলে ৭টিকেই
অধিকাংশ বিজ্ঞানী সঠিক বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন ]
এবার কুরআন কী
বলছে সেদিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। মহাবিশ্ব সম্পর্কে কোরআনের তথ্য গুলোর একটি হলো যে, আকাশ সাতটি স্তর নিয়ে গঠিত।
هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي
الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ اسْتَوَىٰ إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ
سَمَاوَاتٍ ۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ অর্থ: তিনি এমন যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের কল্যাণের জন্য পৃথিবীর
সবকিছু। তারপর তিনি মনোযোগ দিলেন আকাশের প্রতি এবং
বিণ্যস্ত করলেন তা সাত আসমানরূপে। আর তিনি সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (বাকারা ২৯)
فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَىٰ فِي كُلِّ
سَمَاءٍ أَمْرَهَا ۚ وَزَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ۚ
ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে
তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে
প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। (ফুসসিলাত ১২)
বিজ্ঞানীগণ পর্যবেক্ষন করেছেন যে, বায়ুমন্ডল বিভিন্ন স্তর নিয়ে গঠিত। চাপ ও গ্যাসের প্রকারের মত ভৌত গুণাবলী দ্বারা স্তরসমূহ ভিন্নতা
প্রদর্শন করে। ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে নিকটতম স্তর হলো ট্রপোস্ফিয়ার। বায়ুমন্ডলের ৯০ শতাংশ নিয়ে এই স্তর গঠিত। ট্রপোস্ফিয়ারের উপরের স্তরটিকে বলা হয় স্ট্রাটোস্ফিয়ার। ওজোন স্তর স্ট্রাটোস্ফিয়ারেরই একটি অংশ যেখানে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি
শোষিত হয়ে থাকে। স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উপরের স্তরটিকে বলা হয়
মেসোস্ফিয়ার। মেসোস্ফিয়ারের উপরে থাকে থার্মোস্ফিয়ার। এই স্তরে আয়নে পরিণত গ্যাসগুলো একটি স্তর তৈরী করে যাকে বলা
হয় আয়নোস্ফিয়ার। পৃথিবীর বাযুমন্ডলের সবচেয়ে বাইরের স্তরটি
৪৮০ কিলোমিটার থেকে ৯৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্তরটিকে বলা হয় এক্সোস্ফিয়ার। এ সকল স্তর সম্পর্কে পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে। মজার ব্যাপার
হলো, প্রত্যেকটি স্তরই ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য
সম্বলিত এবং তারা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে পৃথিবীর উপর
সামান্যতম হলেও
প্রভাব ফেলে। স্তরগুলোর মধ্যে এই ভিন্নতার ব্যাখ্যা সূরা ফুসসিলাতের ১২ নং আয়াত
থেকে পাওয়া
যায়। এখানে আল্লাহ বলেছেন-
فَقَضَاهُنَّ
سَبْعَ سَمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَىٰ فِي كُلِّ سَمَاءٍ أَمْرَهَا অর্থাৎ অতঃপর তিনি আকাশ মন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে
তার জন্য আদেশ প্রেরণ করলেন।
অন্য কথায় বলা যায় যে, আয়াতটিতে আল্লাহ তা’আলা এটাই উল্লেখ করেছেন যে, তিনি প্রতিটি আসমানের জন্য তাদের করণীয় কাজ বন্টন করে দিয়েছেন। সত্যিই পূর্বের আয়াতগুলোতে আমরা দেখতে পেয়েছি যে, ভূ-পৃষ্ঠে বসবাসকারী অন্যান্য প্রাণীসহ মানবজাতির
উপকারার্থে প্রতিটি স্তরই অতি প্রয়োজনীয় কাজ করে যাচ্ছে। বৃষ্টি উৎপন্ন করা থেকে শুর করে ক্ষতিকর রশ্মিসমূহকে বাধা দান, বেতারতরঙ্গ প্রতিফলিত করা, উল্কা পিণ্ডসমূহের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাধা দেয়া বা
নিরোধ করা পর্যন্ত বিশেষ বিশেষ কাজগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্তর ভিন্ন ভিন্নভাবে সম্পন্ন করে
থাকে। উদাহরণস্বরূপ, বৈজ্ঞানিক সূত্রে বায়ুমন্ডলের সর্বনিম্ন
স্তর হলো ট্রপোস্ফিয়ারের কথা ধরা
যাক। বৃষ্টি, বরফ আর বাতাস কেবল এ স্তরটিতেই ঘটে থাকে। এটি একটি বড় ধরণের অলৌকিক ব্যাপার যে, এই যে বিষয়গুলো বিংশ শতাব্দীর টেকনোলজী ব্যতীত
উদঘাটন করা সম্ভব হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু সেগুলোই কোরআনে ১৪০০ বছর পূর্বে স্পষ্টভাবে উল্লেখ
করা হয়েছে।
Faiyaz Al-Muhaimin
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন