একটি গবেষনায় প্রমাণিত
হয়েছে যে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে রয়েছে অত্যধিক ভারী নিকেল, লৌহ,
হীরা আর অনেক ধরনের যৌগিক উচ্চ ভরবিশিষ্ট বস্তু। গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণ হিসাবে
বর্ণনা করেছেন পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ উচ্চ ভর বিশিষ্ট এই বস্তুগুলোকে। ওজন যত ভারী হবে আর্কষণ ক্ষমতা ততোধিক শক্তিশালী ও প্রবলতর হবে। গবেষনালব্ধ ফলাফল বলে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে যত যাওয়া যায়,
বস্তুর ওজন তত বাড়তে থাকে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীগণ পৃথিবীর
গভীরে (প্রায় মাঝামাঝি পযার্য়ে) এক ধরনের ভারী তরল পদার্থ
পেয়েছেন যা সেখানে অবিরত পাক খেয়ে স্থান পরিবর্তন করে চলছে। অভ্যন্তরে তার এই চলাচলটা একটা পথে পরিণত
হয়েছে, যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলা হয় Magnetic running root অথবা চুম্বকপথ। এ অত্যাশ্চর্য সিষ্টেমের আবিষ্কারক আল্লাহপাক ভূঅভ্যন্তরস্থ
Magnet-কে এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে আমাদের বায়ুমন্ডলের উপরে অবস্থিত Van Aleen Belt কে কয়েক হাজার মাইল দূর হতে কন্ট্রোল করে । অথাৎ মাটির সুগভীর নীচ হতে আকাশের বহু উপরে (পৃথিবীর চারিদিক) অতীব শক্তিশালী এক
চুম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি করে।
[Van Aleen Belt : মাধ্যাকর্ষণ
বলের টানে পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে উচ্চশক্তিসম্পন্ন ইলেকট্রন এবং প্রোটন কণার অদৃশ্য দু'টি বৃত্ত। বিজ্ঞানী জেমস ভ্যান
অ্যালেনের নাম অনুসারে এদের ‘ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন
বেল্ট'ও বলা হয়। সূর্যে মাঝেমধ্যেই
ছোটবড় ঝড় লেগে থাকে। এই সৌরঝড়ের ফলেই
‘রেডিয়েশন বেল্টে' এসে জমা হয় ইলেকট্রন-প্রোটন কণার স্তর। কিছুটা কসমিক রশ্মির প্রভাবও থাকে]
Ozone Layer এর কর্মপদ্বতি আভ্যন্তরীণ বলয়ের অনুরুপ।
এর ব্যপ্তি আমরা বায়ুমন্ডলের শেষ সীমানায় পর্যন্ত দেখতে পাই
(প্রায় 50-100 কিমি পর্যন্ত)। একটা হাতিকে যদি চিপসের
উপর হাটতে বলা হয় তাহলে চিপসের যে করুন পরিনতি হবে, ঠিক তেমনি Magnetic root অথবা চুম্বকপথ ছাড়া আমাদের অবস্থা হবে আরো শোচনীয় । উদাহরন স্বরুপ সৌরঝড়ের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে! আসলে সৌরঝড়ের প্রভাব কি পৃথিবীর
সাধারণ কোন ঝড়ের মতো? না তা নয়! এমনটা ভাবলে ভুল হবে। একটা ছোটখাট সৌরঝড় যদি আমাদের পৃথিবীর উপর দিয়ে কয়েক সেকেণ্ডের
জন্য বয়ে যায় আমাদের এ সাধের পৃথিবী হবে স্রেফ উনুনের জলন্ত কয়লার মতো! একটা মানুষ তো দুরের কথা ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকবে কিনা Geologist- গন সন্দেহ পোষণ করেন।
মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থাকার কারণেই মানুষ পৃথিবীর উপর চলাফেরা করতে পারছে, বৃষ্টির পানি জমিনে আসে, গাছের ফল জমিনে পড়ে, বাতাস পৃথিবীর সাথে
লেগে থাকে। শুধু তাই নয় পৃথিবী হতে কোন বস্তুর দুরত্ব যতই বাড়তে থাকে ততই তার ওজন কমতে থাকে। আর যদি মাধ্যাকর্ষণ
শক্তির ব্যবস্থা মহান স্রষ্টা না করতেন তবে পৃথিবীর সব কিছু মহাশূন্যে হারিয়ে যেত, তা আর পাওয়া যেত না। কুরআন কী বলছে এ ব্যাপারে?
إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ
زِلْزَالَهَا
যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে,
وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ
أَثْقَالَهَا
যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে,
وَقَالَ الْإِنْسَانُ مَا لَهَا
এবং মানুষ বলবে, এর কি হল ? (যিলযাল ১-৩)
প্রথম আয়াত দুইটির ব্যাখ্যায় একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সেমিনারে মুসলিমদের
সাথে উপস্থিত হয়েছিলেন আমেরিকার অধিবাসী John Satiklaz। তিনি বলেন:
পৃথিবীর অভ্যন্তরে ভারী বোঝা রয়েছে। আর এই বোঝাগুলো অনতি বিলম্বে বেরিয়ে আসবে ও মধ্যাকর্ষন শক্তি
বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যখন সেগুলো বের হয়ে আসবে তখন অবস্থা কি হবে?
এর জবাব আল্লাহ সূরা ইনশিকাকের ৩-৪ আয়াতের মধ্যে দিয়ে
দিয়েছেন।
وَإِذَا الْأَرْضُ مُدَّت
এবং যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে।
وَأَلْقَتْ مَا فِيهَا
وَتَخَلَّتْ
এবং পৃথিবী তার গর্ভস্থিত সবকিছু বাইরে নিক্ষেপ করবে ও শুন্যগর্ভ
হয়ে যাবে।
ডা. হেমায়েত বলেন, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ থাকবে না যখন গর্ভস্থিত সবকিছু বের হয়ে যাবে, তখন আর তার এই মহাবিশ্বের সুন্দর আইন শৃঙ্খলা ও নিয়ম-নীতি আর
থাকবে না। এসব কিছুই হবে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে। ডা. হেমায়েত নিজের লেখা একটা বইয়ে আরও বর্ণনা
করেছেন, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টান না থাকলে অথবা কম হলে জলীয় বাষ্প উপরের দিকে চলেই
যেত। আবার উপরে ঠাণ্ডা বাতাস জলীয়বাষ্পকে ঘনীভূত করতে না পারলে জলকণা তৈরি হত না। ফলে বৃষ্টিও হত না। তাহলে একদিন পৃথিবীর
সব পানিই বাষ্প হয়ে আকাশে উড়ে বেড়াত। আর ফিরে আসত না। ফলে পৃথিবীতে কোন পানিই খুঁজে পাওয়া যেত না। যার ফলে নিঃশেষ হয়ে
যেত জীবনের অস্তিত্ব। তিনি আরও বলেন, পৃথিবী যদি চাঁদের মত ছোট অর্থাৎ বর্তমান আয়তনের
চারভাগের একভাগ হত তবে এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি হত বর্তমানে যা আছে তার ৬ ভাগের ১ ভাগ। তাহলে সূর্যের তাপে
পানি বাষ্প হয়ে উপরের দিকে চলে গেলে আর ফিরে আসত না কোনদিন। মাধ্যাকর্ষণ কম হওয়ার কারণে চলে যেতেই
থাকতো, আর ফিরে আসতো না। ফলে দ্রুত শেষ হয়ে যেত পৃথিবীর সমুদয় পানি। আল্লাহ বলেন-
وَأَنْزَلْنَا
مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِي الْأَرْضِ ۖ
وَإِنَّا عَلَىٰ ذَهَابٍ بِهِ لَقَادِرُونَ
আমি আকাশ থেকে পানি
বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মত অতঃপর আমি জমিনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম। (মু’মিনূন ২৩ ১৮)
চাঁদ সবসময় পৃথিবীর দিকে একদিক মুখ করে ঘুরে। চাঁদের মত পৃথিবীও যদি সূর্যের দিকে একদিকে
হত তাহলে সেই দিক হতো তীব্র শীত, যার কারণে পানি বরফ
হয়ে যেত আর অন্যদিকে প্রখর গরমের জন্য পানি বাষ্পীয় অবস্থায় বিদ্যমান থাকত। অতি গরম ও অতি শীত
কোন অবস্থায়ই পানি পাওয়া সম্ভব হত না। পৃথিবী যদি সূর্যের সমান বড় হত তবে এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি হত
বর্তমানের ১৫০ গুণ। যার কারণে বায়ুমন্ডলের উচ্চতা ৪ মাইলের চেয়েও কমে যেত। তাহলে পানি আর বাষ্পীভবন হত না। সারা পৃথিবী ডুবে যেত
পানিতে।
সূর্য থেকে পৃথিবীর
দূরত্ব যদি বর্তমানের দ্বিগুণ হত তাহলে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর
তাপ কমে গিয়ে দাঁড়াত বর্তমানের ৪ ভাগের ১ ভাগে। তদুপরি কক্ষপথ বৃদ্ধির কারণেও শীতকালের পরিমাণ
হত বর্তমানের চার গুণ। কাজেই সারা পৃথিবীর পানি বরফে পরিণত হয়ে যেত। এমনকি গ্রীষ্মকালেও
মুক্ত পানি পাওয়া যেত না। তীব্র শীত ও মুক্ত পানির অভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল নিশ্চিহ্ন
হয়ে যেত অতি সহজেই।
সুতরাং, বোঝায় যাচ্ছে, আল্লাহ তা’আলা কতই না
সুনিপুণভাবে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবীকে আমাদের বসবাসের জন্য মনোনীত করেছেন
এবং তাঁরই নির্দেশে সুশৃঙ্খলভাবে মহাবিশ্বের সবকিছু আপন নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন