আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ
করেছে, শূকর খাওয়ার কারনে মানুষের ৭০ ধরনের রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শূকরের মাংস মানুষের শরীরের জন্য অত্যধিক ক্ষতিকর। কিছুদিন পূর্বেও মনে করা হত শূকরের মাংসে Trichina Parasite জীবাণুই মানুষের শরীরের জন্য একমাত্র বিপত্তি। কিন্তু
সম্প্রতিকালে বিজ্ঞানীরা শূকরের মাংসের আরও অনেক ক্ষতিকর দিক আবিষ্কার
করেছেন।
১. শূকর খাওয়ার
ফলে ফিতাকৃমি, গোল কৃমি, হুক কৃমি প্রভৃতির মাধ্যমে
বিভিন্ন রোগ দেহাভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়। Taenia
Solium
নামে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ফিতাকৃমি রয়েছে যারা
মানুষের পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অংশে পৌছে যায়। এর ডিম রক্তের সাথে মিশে গিয়ে শরীরের প্রায় সর্বস্থানে জমা হয়
এমন কি এটা মস্তিষ্কে পৌছে তার প্রভুত ক্ষতি সাধন করতে পারে ফলে মস্তিষ্ক বিকৃতি হবার
সম্ভাবনা দেখা দেয়।এটা যদি লিভারে প্রবেশ করে লিভারের প্রচন্ড
ক্ষতিসাধন করে। তাছাড়া হৃৎপিণ্ডেরও ক্ষতি করে।
২. শূকরের গোশত শরীরকে খুব
সহজে মোটা করতে পারে যা উচ্চরক্তচাপ সৃষ্টি করে। এজন্যই আমেরিকার ৫০% মানুষই স্থূলতা রোগে
ভোগে।
৩. শূকরের মাংসে ‘Sutoxin’ নামে একটি স্বতন্ত্র প্রোটিন রয়েছে, যা বিভিন্ন ধরনের এলার্জি
সৃষ্টি করে। যেমন, হাঁপানি, খোস পাঁচড়া ও একজিমা ইত্যাদি।
৪. শূকরের মাংসে প্রচুর
পরিমাণে Muco
polysaccharides (একপ্রকার শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থ) রয়েছে। এগুলি সালফার সমৃদ্ধ এবং গিঁটসমূহে ও শরীরের জোড়াগুলিতে ব্যথা সৃষ্টি করে।
৫. শূকরের মাংস রক্তের প্রবাহে চর্বিজাতীয় পদার্থের অনুপাত বাড়িয়ে
দেয়। প্রাণী মাংসে দু’ধরনের চর্বি থাকে। একটি হল বাহ্যিক যা
মাংসকে ঢেকে রাখে। অপরটি হল অভ্যন্তরীণ, যা থাকে মাংসপেশীর তন্তুসমূহে। নিম্নে মাংসের আভ্যন্তরীণ
পেশীতে চর্বির পরিমাণ দেয়া হল-বাছুরের মাংস-১০%,
ভেড়া-২০% মেষশাবক-২৩% শূকরের মাংস-৩৫%।
রক্তে চর্বির উচ্চমাত্রা
কতিপয় স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার সৃষ্টি করে। যেমন,
বার্ধক্য, জ্বরা, প্যারালাইসিস ও বিভিন্ন ধরণের
হৃদরোগ। শূকরের মাংসের উচ্চমাত্রার চর্বি মানব স্বাস্থের
জন্য সর্বাধিক বিপজ্জনক।
৬. শূকরের মাংসে উচ্চমাত্রার
চর্বির আরেকটি ক্ষতিকর দিক হল, তা ভিটামিন ‘ই’ এবং ‘এ’-এর অতিরিক্ত ক্ষয়সাধন করে যার ফলে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
৭. শূকর
নোংরা ও ঘৃণিত বস্তু ভোগ ও আহার করে থাকে। এজন্য, শূকরের মাংস ভক্ষণের ফলে বিভিন্ন প্রকার এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া
ও মানব দেহে Lympatic
system-এ নানান ধরণের বিশৃঙ্খলা
দেখা দেয়।
৮. শূকরের
মাংসের কারণে একটি প্রাণঘাতি ব্যধি জন্ম নেয়, যা সঞ্চারিত হয় Trichina নামক জীবাণুর মাধ্যমে। যদিও প্রযুক্তির সাম্প্রতিক
উৎকর্ষের ফলে এই জীবাণু দূর করা যেতে পারে তথাপি ধারণা করা হয় পৃথিবীতে প্রায় ৩০ মিলিয়ন Trichina victims রয়েছে।
যখন কুরআন শূকরের মাংসকে
হারাম ঘোষণা করে তখন এসব তথ্য মানুষের জানা ছিল না। পবিত্র কুরআনের চার স্থানে শূকর খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
إِنَّمَا
حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ
بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ
بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّ
اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
তিনি তোমাদের উপর
হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত,
শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো নামে
উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায়
হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ
নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু। (বাকারা ১৭৩)
حُرِّمَتْ
عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ
اللَّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ
وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى
النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلَامِ
তোমাদের জন্যে হারাম
করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত
হয়,
যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে
পতনের ফলে মারা যা, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র
জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ। (মায়িদা ৩)
قُلْ لَا
أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَىٰ طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا أَنْ
يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ
أَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ
আপনি বলে দিনঃ যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে
আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন
হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র
অথবা অবৈধ; যবেহ করা জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের
নামে উৎসর্গ করা হয়। (আন’আম ১৪৫)
إِنَّمَا
حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ
لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ
بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন
রক্ত, শুকরের মাংস এবং যা জবাই কালে আল্লাহ ছাড়া
অন্যের নাম উচ্চারণ করা হয়েছে। অতঃপর কেউ সীমালঙ্ঘন
কারী না হয়ে নিরুপায় হয়ে পড়লে তবে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (নাহল ১১৫)
এখন দেখা যাক, মাদক সম্পর্কে কুরআন এবং বিজ্ঞানের
দৃষ্টিভঙ্গি কেমন।
আদিকাল থেকেই মানবসভ্যতার সাথে মদ এবং মদ জাতীয় দ্রব্যের নিবিড় সম্পর্ক। মানুষকে আল্লাহবিমুখ করার জন্য
শয়তানের একটি মোক্ষম হাতিয়ার এটি। কুরআনে যে সমাজে নাযিল হয়েছিল সে সমাজও পুরোপুরি মাদকের সমুদ্রে ডুবে ছিল। এমনকি কুরআনে মাদক নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অনেক মুসলমানও মদ খেত। কিন্তু, আল্লাহ তো তাঁর বান্দাদের জন্য ক্ষতিকর বস্তু কখনো হালাল করতে
পারেন না! বিভিন্ন গবেষণা এবং জরিপে উঠে এসেছে-
১. যে
মাদকাসক্ত সে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে
২. মাদকাসক্ত
ব্যক্তি মা-বাবাকেও গালিগালাজ করে, এমনকি হত্যা পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছে
৩. আমেরিকায় বিচার বিভাগ অপরাধীদের একটি জরিপে
দেখেছে প্রতিদিন আমেরিকাতে ২৭১৩ টি ধর্ষণ সংগঠিত হয় যার বেশিরভাগ ধর্ষকই মাতাল।
৪. অনেক ছোট মেয়ে তার পিতা দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে যখন পিতা মদ্যপায়ী অবস্থায় ছিল।
৫. এইডস ছড়ানোর অন্যতম কারন হলো মাদকাসক্তি।
এগুলো হলো
সামাজিক সমস্যা। এখন প্রশ্ন হলো
চিকিৎসা বিজ্ঞান
মাদকের ব্যাপারে কী বলে?
১. লিভার নষ্ট হতে পারে।
২. দেহের বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার হতে পারে।
৩. ওয়েসোপাগিটিস, গস্খাসটরাইটিস, হেপাটাইটিস ইত্যাদি
মারাত্মক রোগ হতে পারে।
৪. বেরিবেরি ,বুকের প্রদাহ অ্যাজমা ইত্যাদি হাজারো ব্যধি হতে পারে।
এত ক্ষতিকর বস্তু তো আল্লাহ মুমিনদের জন্য হালাল করতে পারেন না! এজন্য সরাসরি
কুরআনের মাধ্যমেই আল্লাহ মাদককে হারাম করেছেন।
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ
وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ
تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের
অপবিত্র কার্য বৈ কিছুই নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাকো যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত
হও। (মায়িদা ৯০)
এছাড়া রাসুলুল্লাহর হাদীস দ্বারাও মাদককে হারাম করা হয়েছে (ইবনে মাজাহ ৩৩৭১)।
সুতরাং, কুরআন যে মানব কল্যাণের জন্যই অবতীর্ণ এবং তা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে
পরিপূর্ণরূপে সামঞ্জস্যশীল তা শূকর এবং মাদক নিষিদ্ধকরণের দৃষ্টান্ত থেকেই বোঝা
যায়।
Faiyaz Al Muhaimin
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন