পৃথিবীর সকল কিছু সৃষ্টির মূল উপাদান পানি। এই মৌলিক উপাদান পৃথিবীর সকল জীবদেহের মধ্যে বিদ্যমান (সূরা আম্বিয়া ৩০ নং আয়াত দ্রষ্টব্য)। কুরআন এবং বিজ্ঞান পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির বিষয়ে একই
ইনফরমেশন দিয়েছে। তবে পার্থক্য হচ্ছে-বিজ্ঞান দিয়েছে শত বছরও হয়নি। অথচ, কুরআন সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে স্পষ্টভাবে একাধিক আয়াতে ঘোষণা করেছে,
পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দনের মূল রহস্য! তবে মানব সৃষ্টির ব্যাপারে কুরআন শুধু টেলিগ্রাফিক
ভাষা ব্যবহার করেনি, বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছে মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া এবং
উদ্দেশ্য।
মানুষের ভ্রূণ তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তাশীলরা
নানা ধরনের ধারণা পোষণ করত প্রাচীনকাল থেকেই। এরিস্টটল মনে করতেন,
মাসিকের রক্তের সঙ্গে পুরুষের বীর্যের মিলন হলে ভ্রূণ তৈরি হয়। অনেকে আবার মনে করতেন, মানুষের ভ্রূণ
কেবল পুরুষের বীর্য থেকে তৈরি হয়।
এ দুটি ধারণা যে ভুল, তা প্রমাণ করেন ইতালিয়ান
বিজ্ঞানী স্পিলিজার ১৭৭৫ সালে। ব্রাভি ১৮৮৮-১৯০৯ সালের মধ্যে প্রমাণ করেন
ক্রোমোজম বিভিন্ন ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঠিক করে। মরগান ১৯১২ সালে
মানুষের ভ্রূণ তৈরিতে জীবের ভূমিকা প্রমাণ করেন।
মূল কথা হচ্ছে, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আঠারশ শতকের আগে ভ্রূণ তৈরি সম্পর্কে
কোনো ধারণাই লাভ করতে পারেনি; কিন্তু পবিত্র কুরআন সেটার ১৩০০ বছর পূর্বেই ভ্রূণ তৈরির
প্রক্রিয়া সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছিল যা আজ প্রমাণিত সত্য! কুরআন বলছে-
إِنَّا خَلَقْنَا
الْإِنْسَانَ مِنْ نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا
بَصِيرًا
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু
থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। (আল ইনসান ২)
আবার সকল জীবদেহ কোষ দ্বারা গঠিত। আর এই কোষ গঠনের
মূল উপাদান হচ্ছে পানি। আরবি ব্যাকরণের একটি মত অনুযায়ী, এই ‘পানি’ অর্থ শুক্র (কুরতুবী)। তাছাড়া আকাশ ও পৃথিবী বন্ধ ছিল অর্থাৎ
পূর্বে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হত না এবং যমীনে তরুলতা জন্মাত না।
আল্লাহর ইচ্ছায় বৃষ্টি বর্ষিত হ’ল এবং মাটি তা থেকে উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করল। পৃথিবীর জীব কোষের
মূল উপাদান যেমন পানি (প্রোটোপ্লাজমের ৯৫% পানি), তেমনি এই পানিই মাটির উৎপাদন ক্ষমতা লাভের
প্রধান উপাদান। মহান আল্লাহ এই
ধরণীতে মাটি থেকে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করেন এবং তারপর তা থেকে ক্রমশ সারা বিশ্বে
ছড়িয়ে পড়েছে এই মানব জাতি। সূরা হুজুরাতের ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ
إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا
وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং
তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে ‘মানব ক্লোন’। এই ক্লোন পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দিতে গেলে
পুরুষের জীব কোষের প্রয়োজন। অর্থাৎ একজন পুরুষের জীব কোষ বা শুক্রাণু ব্যতীত একজন নারী সন্তান জন্ম দানে
অক্ষম। কেননা নারীর ডিম্বাণু
ক্রোমোসোম (XX) এবং পুরুষের শুক্রাণু
ক্রোমোসোম (XY) পুত্র-কন্যা সন্তান
গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
এখানে হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম সম্পর্কে প্রশ্ন
হতে পারে। কিন্তু মহান আল্লাহ এ প্রশ্নের সমাধান পবিত্র কুরআনে যথাযথভাবে
দিয়েছেন। তিনি বলেন,
إِنَّ مَثَلَ
عِيسَىٰ عِنْدَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ ۖ خَلَقَهُ
مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকটে ঈসার দৃষ্টান্ত
হচ্ছে আদমেরই মত। তাকে মাটি দিয়ে
সৃষ্টি করেছিলেন অতঃপর তাকে বলেছিলেন, হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেল। (ইমরান ৫৯)
ভ্রুণতত্ত্ব এবং ড. কিথ মুর
ভ্রূণতত্ত্ব (embryology) বলতে বুঝায়, জন্মের পূর্বে
জীবের বিকাশ সম্পর্কিত বিদ্যা।
কুরআন এবং হাদীসে ভ্রূণতত্ত্ব সম্পর্কিত বর্ণনাগুলোকে একত্রিত করে ইংরেজীতে
অনুবাদের পর কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রূণতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান এবং আধুনিক
ভ্রূণতত্ত্বের বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. কিথ মুরকে সেগুলোর ব্যাপারে মন্তব্য করতে
বলা হয়। ড. মুর ভালভাবে
সেগুলো অধ্যায়নের পর বলেন, কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসে ভ্রূণতত্ত্ব সম্পর্কে যা এসেছে, ভ্রূণবিদ্যার ক্ষেত্রে
আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাথে সেগুলোর অধিকাংশের পূর্ণ মিল রয়েছে, কোন অমিল বা বৈসাদৃশ্য
নেই। তিনি কিছু সংখ্যক আয়াতের মর্মের যথার্থতা
সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেননি। তিনি সেগুলোর বক্তব্য সত্য না মিথ্যা বলতে পারছেন না। কেননা সে তথ্যগুলো সম্পর্কে তিনি নিজেও ওয়াকিফহাল নন। আধুনিক ভ্রূণবিদ্যায় বা লেখায় সেগুলোর
কোন উল্লেখ দেখা যায়না। এরকম একটি আয়াত হল- خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ
তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত
থেকে। (সূরা আলাক ২)
আরবী ভাষায় عَلَقٍ শব্দের অর্থ হল, জমাট রক্ত। অপর একটি অর্থ
হল, দৃঢ়ভাবে আটকে থাকে
এমন আঠলো জিনিস। যেমন, জোঁক কামড়
দিয়ে আটকে থাকে।
ড. মুর জানতেন না যে, প্রাথমিক অবস্থায় ভ্রূণকে জোঁকের মত দেখায় কিনা ! তিনি এটা যাঁচাই করার জন্য
এক শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে ভ্রূণের প্রাথমিক অবস্থা গবেষণা করেন এবং বলেন
যে, ভ্রূণের চিত্র
দেখতে অনেকটা জোঁকের মত। তিনি এ দু’টোর মধ্যে অদ্ভুত সামঞ্জস্য দেখে অভিভূত হয়ে যান। তিনি ভ্রূণতত্ত্ব সম্পর্কে কুরআন থেকে আরো বহু জ্ঞান অর্জন
করেন যা তাঁর জানা ছিল না। ড. মুর কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত ভ্রণতত্ত্ব সম্পর্কিত ৮০টি প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, কুরআন ও হাদীসে
উল্লেখিত তথ্যগুলো ভ্রূনতত্ত্ব সম্পর্কে সর্বশেষ আবিষ্কৃত তথ্যের সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল। তিনি আরো বলেন, আমাকে যদি আজ থেকে
৩০ বছর আগে এ সকল প্রশ্ন করা হত, তাহলে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অভাবে আমি সেগুলোর অর্ধেকেরও উত্তর দিতে পারতাম
না।
ড. কিথ মুর কুরআন নিয়ে রিসার্চ করার পূর্বে 'The Developing Human' নামক একটা বই লিখেছিলেন। কিন্তু কুরআন থেকে জ্ঞান সংগ্রহের পরপরই
তিনি তার ঐ বইয়ের ৩য় সংস্করণ প্রকাশ করেন। বইটি একক লেখকের সর্বোত্তম চিকিৎসা বই হিসেবে পুরষ্কার লাভ করে। বইটি বিশ্বের অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে
এবং ১ম বর্ষের মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের জন্য ভ্রূণবিদ্যায় পাঠ্যবই হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
এবার দেখা যাক, ভ্রুণবিদ্যা সম্পর্কিত
কুরআনের তথ্যগুলো যা কিথ মুরকে এতটাই অভিভূত করেছিল যে, অমুসলিম হয়েও দাম্মামে
অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি কুরআনকে ‘সৃষ্টিকর্তা
প্রদত্ত’ বলে স্বীকার করে নিতে বাধ্য
হয়েছিলেন!
সূরা তা’রিকের ৫-৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন-
فَلْيَنْظُرِ
الْإِنْسَانُ مِمَّ خُلِق خُلِقَ مِنْ مَاءٍ دَافِقٍ يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ
الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ
অতএব, মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে। সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে। এটা নির্গত হয় মেরুদন্ড
ও বক্ষপাজরের মধ্য থেকে।
কুরআনের কমপক্ষে ১১টি স্থানে মানুষকে ‘নুতফাহ’ (শুক্র ) থেকে সৃষ্টির কথা বলেছে। ‘নুতফাহ’ অর্থ
হলো-সামান্য পরিমাণ তরল পদার্থ কিংবা পেয়ালার নীচে অবশিষ্ট সামান্য পরিমাণ তরল জিনিস। ভ্রুণতত্ত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়ার জন্য কুরআনের একটি আয়াতের
ব্যাখ্যা করাই যথেষ্ট!
يَا
أَيُّهَا النَّاسُ إِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِنَ الْبَعْثِ فَإِنَّا
خَلَقْنَاكُمْ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ مِنْ
مُضْغَةٍ مُخَلَّقَةٍ وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ لِنُبَيِّنَ لَكُمْ ۚ
وَنُقِرُّ فِي الْأَرْحَامِ مَا نَشَاءُ إِلَىٰ أَجَلٍ مُسَمًّى ثُمَّ
نُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوا أَشُدَّكُمْ ۖ
وَمِنْكُمْ مَنْ يُتَوَفَّىٰ وَمِنْكُمْ مَنْ يُرَدُّ إِلَىٰ أَرْذَلِ الْعُمُرِ
لِكَيْلَا يَعْلَمَ مِنْ بَعْدِ عِلْمٍ شَيْئًا ۚ وَتَرَى
الْأَرْضَ هَامِدَةً فَإِذَا أَنْزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَاءَ اهْتَزَّتْ وَرَبَتْ
وَأَنْبَتَتْ مِنْ كُلِّ زَوْجٍ بَهِيجٍ
হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও, তবে (ভেবে দেখ-)
আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত
থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট
ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে
যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা
যৌবনে পদার্পণ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা
বয়স পর্যন্ত পৌছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে পতিত
দেখতে পাও, অতঃপর আমি যখন তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা সতেজ ও স্ফীত হয়ে যায় এবং সর্বপ্রকার
সুদৃশ্য উদ্ভিদ উৎপন্ন করে। (সূরা হজ্জ ৫)
উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও কুরআনের অন্য যেসব
আয়াতের নুতফাহ’র কথা এসেছে তা হল-
মু’মিনুন ১৩, নাহল ৪, কাহফ ৩৭, ফাতির ১১, মুমিন ৬৭, নাজম
৪৬, ক্বিয়ামাহ ৩৭, ইনসান ২, আবাসা ১৯
আদি মানব আদম (আ) মাটি থেকে সৃষ্টি
একটি প্রশ্ন অনেক সময় দূর্বল ঈমানদার
এবং নাস্তিকদের মুখে শোনা যায়। সবকিছুর যদি স্রষ্টা থেকে থাকে, তাহলে
আল্লাহর স্রষ্টা কে? ড. জাকির নায়েকের উত্তরটি দিয়ে তাদের
শান্ত করা যায়। সবকিছুরই স্রষ্টা রয়েছে-এই ধারণা ভুল। কেবলমাত্র যা সৃষ্টি হয়েছে তারই স্রষ্টা রয়েছে। আল্লাহকে কেউ
সৃষ্টি করেনি। তাই তাঁর কোনো স্রষ্টাও নেই।
আদম (আ) এর সৃষ্টি সম্পর্কেও এরকম
একটি উদ্ভট প্রশ্ন শোনা যায়। আদম (আ) যদি
প্রথম মানুষ হবে, তাহলে তাঁর কি পিতা-মাতা নেই, অথবা পৃথিবীতে তাঁর উদ্ভব কিভাবে
হলো? মূল প্রশ্ন হলো-পৃথিবীতে প্রথম
মানুষের পদযাত্রা শুরু হলো কিভাবে? مِنْ
نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ
থেকে তো সম্ভব নয়। সেটা হলে তো আদমেরও পিতামাতা থাকা
উচিত ছিল! এই উদ্ভট প্রশ্নের জবাব কুরআন দিচ্ছে এভাবে- الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ
شَيْءٍ خَلَقَهُ ۖ وَبَدَأَ خَلْقَ
الْإِنْسَانِ مِنْ طِينٍ
যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর
করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। (আস সাজদাহ ৭)
وَلَقَدْ
خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ
আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক
ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি। (হিজর ২৬)
فَاسْتَفْتِهِمْ
أَهُمْ أَشَدُّ خَلْقًا أَمْ مَنْ خَلَقْنَا ۚ إِنَّا
خَلَقْنَاهُمْ مِنْ طِينٍ لَازِبٍ
আপনি তাদেরকে (মানুষকে) জিজ্ঞেস করুন, তাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিনতর, না আমি অন্য যা সৃষ্টি করেছি? আমিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এঁটেল মাটি থেকে। (সফফাত ১১)
خَلَقَ
الْإِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ
তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির
ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে। (আর রাহমান ১৪)
আদম (আ) বাদে বাকি সব মানুষ সৃষ্ট ‘নুতফাহ’ থেকে
আদম একাই কেবল মাটি থেকে সৃষ্টি। বাকি সবাই পিতা-মাতার মাধ্যমে সৃষ্ট।
ثُمَّ جَعَلَ
نَسْلَهُ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ مَاءٍ مَهِين
অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেছেন তুচ্ছ
পানির নির্যাস থেকে। (আস সাজদাহ ৮)
وَهُوَ
الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاءِ بَشَرًا فَجَعَلَهُ نَسَبًا وَصِهْرًا ۗ
وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرًا
তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল
করেছেন। তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম। (ফুরকান ৫৪)
‘নুতফাহ’ সম্পর্কিত আয়াতগুলো পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। যারা বলে থাকে, “কুরআন শরীফের বহুস্থানে
বলা হয়েছে সকল মানুষ মাটির তৈরী, তাই সকল মানুষ মাটির তৈরী”-তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
হযরত হাওয়া (আ) কিভাবে সৃষ্ট?
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসতে পারে, হযরত
আদম (আ) মাটি থেকে সৃষ্টি, কিন্তু মা হাওয়া (আ) কি দিয়ে সৃষ্ট? কারণ, কুরআনের বলা হয়েছে, এক পুরুষ এবং এক নারী থেকে
আমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু আদম যখন একা ছিলেন, তখন
হাওয়াকে কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে? এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
خَلَقَكُمْ
مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا
তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একই ব্যক্তি
থেকে। অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন। (যুমার ৬)
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ
وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا
وَنِسَاءً
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে
ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি
করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ
ও নারী। (নিসা ১)
وَمِنْ
آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا
وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ
এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের
সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের
কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। (রূম ২১)
মহান আল্লাহ হযরত আদম (আ)-এর পাঁজরের বাঁকা
হাড় থেকে মা হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ، وَإِنَّ
أَعْوَجَ شَىْءٍ فِى الضِّلَعِ أَعْلاَهُ، فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيْمُهُ كَسَرْتَهُ،
وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ، فَاسْتَوْصُوْا بِالنِّسَاءِ - ‘নারী জাতিকে পাঁজরের
বাঁকা হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের মধ্যে একেবারে উপরের
হাড়টি অধিক বাঁকা। যদি তা সোজা করতে যাও, ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তা ছেড়ে দাও, তবে সব সময় বাকাই থাকবে। সূতরাং তোমরা নারীদের সাথে উত্তম ও উপদেশমূলক কথাবার্তা বলবে’।
গর্ভে সন্তান গঠনের গূঢ় রহস্য
গর্ভে সন্তান গঠনের চক্র সাধারণত দীর্ঘ
২৮০ দিন যাবৎ চলতে থাকে। যা ৪০ দিন অন্তর সুনির্দিষ্ট ৭ টি চক্রে
বিভক্ত। নারী-পুরুষের যৌন মিলনের সময় নারীর ডিম্বনালীর ফানেলের মত
অংশে ডিম্বাণু নেমে আসে এবং ঐ সময় পুরুষের নিক্ষিপ্ত বীর্যের শুক্রাণু জরায়ু বেয়ে উপরে
উঠে আসে ও তা ডিম্বনালীতে প্রবেশ করে।
প্রথমে একটি শক্তিশালী শুক্রাণু ডিম্বাণুটির
দেহে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে অন্য কোন শুক্রাণু প্রবেশ করতে পারে না। এভাবে নারীর ডিম্বাণুটি নিষিক্ত (Fertilization) হয় এবং নিষিক্ত
ডিম্বাণুটি জরায়ুতে নেমে প্রোথিত (Embedded) হয়। তাছাড়া নারীর ডিম্বাণুর বহিরাবরণে প্রচুর সিয়ালাইল-লুইস-এক্সসিকোয়েন্স
নামের চিনির অণুর আঠালো শিকল শুক্রাণুকে যুক্ত করে পরস্পর মিলিত হয়। আর এই শুক্রাণু দেখতে ঠিক মাথা মোটা ঝুলে থাকা জোঁকের মত।
জোঁক যেমন মানুষের রক্ত চুষে খায়, শুক্রাণু ঠিক তেমনি ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করে মায়ের রক্তে
থাকা প্রোটিন চুষে বেড়ে উঠে। নিষিক্ত ডিম্বাণুটি সন্তান জন্মের রূপ
নিলে সাধারণত নিম্নে ২১০ দিন ও উর্ধ্বে ২৮০ দিন জরায়ুতে অবস্থান করে এবং ঐ সময়ের মধ্যে
ডিম্বাশয়ে নতুন করে আর কোন ডিম্বাণু প্রস্তুত হয় না। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ خَلَقْنَا
الْإِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِي ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ
مَكِي ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً
فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ
أَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ ۚ فَتَبَارَكَ
اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ
আমরা মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি
করেছি। অতঃপর আমরা তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত
আধারে (জরায়ুতে) স্থাপন করেছি। এরপর শুক্র বিন্দুকে
জমাট রক্ত রূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে
গোশতপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর গোশতপিন্ড
থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে গোশত
দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন
রূপে দাঁড় করেছি। (মুমিনুন ১২-১৪)।
তিনি আরো বলেন, إِلَىٰ قَدَرٍ
مَعْلُوم، فَقَدَرْنَا فَنِعْمَ الْقَادِرُون
এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত, অতঃপর আমি পরিমিত আকারে সৃষ্টি করেছি, আমি কত সক্ষম স্রষ্টা!’ (মুরসালাত ২২-২৩)
ثُمَّ
سَوَّاهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِنْ رُوحِهِ ۖ وَجَعَلَ
لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ ۚ
قَلِيلًا مَا تَشْكُرُونَ
অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন এবং তাতে রূহ
সঞ্চার করেন। (সাজদাহ ৯)
এখানে মানব সৃষ্টির ৭টি স্তর উল্লেখ করা
হয়েছে। স্তরগুলো হল মাটির সারাংশ, বীর্য, জমাট রক্ত, মাংসপিণ্ড, অস্থি পিঞ্জর, অস্থিকে গোশত দ্বারা
আবৃতকরণ ও সৃষ্টির পূর্ণত্ব অর্থাৎ রূহ সঞ্চারণ।
রাসূলুল্লাহ (স) মাতৃগর্ভে মানব শিশু জন্মের
স্তর সম্পর্কে এভাবে বলেছেন,
إِنَّ أَحَدَكُمْ
يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِىْ بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِيْنَ يَوْمًا، ثُمَّ يَكُوْنُ
عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَكُوْنُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَبْعَثُ
اللهُ مَلَكًا، فَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ، وَيُقَالُ لَهُ اكْتُبْ عَمَلَهُ
وَرِزْقَهُ وَأَجَلَهُ وَشَقِىٌّ أَوْ سَعِيْدٌ ثُمَّ يُنْفَخُ فِيْهِ الرُّوْحُ
তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান আপন
মাতৃগর্ভে বীর্যের আকারে ৪০ দিন, জমাট বাধা রক্তে
পরিণত হয়ে ৪০ দিন, গোশত আকারে ৪০ দিন। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে পাঠান এবং
চারটি বিষয়ে আদেশ দেন যে, তার (শিশুর) আমল, রিযিক্ব, আয়ুষ্কাল ও ভালো
না মন্দ সব লিপিবদ্ধ কর। অতঃপর তার মধ্যে
রূহ ফুঁকে দেয়া হয়।
অন্যত্র এসেছে,
إِنَّ اللهَ
عَزَّ وَجَلَّ وَكَّلَ بِالرَّحِمِ مَلَكًا يَقُولُ يَا رَبِّ نُطْفَةٌ، يَا رَبِّ
عَلَقَةٌ، يَا رَبِّ مُضْغَةٌ. فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَقْضِىَ خَلْقَهُ قَالَ
أَذَكَرٌ أَمْ أُنْثَى شَقِىٌّ أَمْ سَعِيْدٌ فَمَا الرِّزْقُ وَالأَجَلُ فَيُكْتَبُ
فِىْ بَطْنِ أُمِّهِ
আল্লাহ মাতৃগর্ভে একজন ফেরেশতা মোতায়েন
করেন। ফেরেশতা বলেন, হে রব! এখনো তো ভ্রূণ মাত্র। হে রব! এখন জমাট
বাঁধা রক্তপিন্ডে পরিণত হয়েছে। হে রব! এবার গোশতের
টুকরায় পরিণত হয়েছে।
আল্লাহ যদি তাকে সৃষ্টি করতে চান, তখন ফেরেশতাটি বলেন, হে আমার রব! (সন্তানটি)
ছেলে না মেয়ে হবে, পাপী না নেক্কার, রিযিক্ব কি পরিমাণ ও আয়ুষ্কাল কত হবে? অতএব এভাবে তার তাক্বদীর মাতৃগর্ভে লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়। নারী ও পুরুষের বীর্যের সংমিশ্রণ ঘুরতে থাকে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এর চতুর্দিকে
একটি ঝিল্লীর সৃষ্টি হয়, যাতে ভ্রূণটি ধ্বংস হতে না পারে।
এরপর আস্তে আস্তে এক বিন্দু রক্তকণায় পরিণত
হয় এবং সেই রক্তকণা মাংসপিণ্ডে ও অস্থিমজ্জায় পরিণত হয়, এভাবেই সৃষ্টি হয় মানব শিশু। মাতৃগর্ভে শিশুকে
সংরক্ষণের জন্য মাতৃ জঠরের তিনটি পর্দা বা স্তরের কথা কুরআনে বলা হয়েছে।
১.পেট বা গর্ভ, ২.রেহেম বা জরায়ু এবং
৩.ভ্রূণের আবরণ বা গর্ভফুল (Placenta)
এই তিন স্তর সম্পর্কে মহান আল্লাহ সূরা
যুমারের ৬ নং আয়াতে বলেন,
يَخْلُقُكُمْ
فِي بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ خَلْقًا مِنْ بَعْدِ خَلْقٍ فِي ظُلُمَاتٍ ثَلَاثٍ ۚ
ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ ۖ
তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে পবিত্র
কুরআনে যে, ‘ত্রিবিধ অন্ধকারের’ কথা বলা হয়েছে তা হল- ১. রেহেম, ২. المشيمة বা গর্ভফুল এবং
৩. মায়ের পেট। রেহেমে রক্তপিন্ড ব্যতীত সন্তানের আকার-আকৃতি কিছুই তৈরী
হয় না। আর গর্ভফুল (Placenta) ভ্রূণ বৃদ্ধি, সংরক্ষণ, প্রতিরোধ ইত্যাদি
কাজে অন্যতম ভূমিকা রাখে। গর্ভফুল মায়ের শরীর থেকে রক্তের মাধ্যমে
নানা পুষ্টি ভ্রূণের দেহে বহন করে, খুব ধীর গতিতে রেচন
পদার্থ মায়ের দেহের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়।
গর্ভফুলের সাহায্যে ভ্রূণ অক্সিজেন (O2) গ্রহণ ও কার্বনডাই অক্সাইড (CO2) ত্যাগ করে মায়ের ফুসফুসের মাধ্যমে, জীবাণু (Infection) থেকে ভ্রূণকে রক্ষা
করে। এছাড়া ভ্রূণটি ঠিকমত জরায়ুতে আটকে রাখা, পুষ্টি সঞ্চয়, সম্পর্ক রক্ষা, হর্মোন সৃষ্টি ইত্যাদি কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এভাবে ভ্রূণটি জরায়ুতে বেড়ে উঠতে থাকে ও ১২০ দিন অতিবাহিত হলে শিশুর রূহ ফুঁকে
দেয়া হয়। আর শিশু নড়েচড়ে উঠে ও আঙ্গুল চুষতে থাকে এবং পূর্ণ-পরিণত
হওয়ার পরে সেখান থেকে বাইরে ঠেলে দেওয়া হয় (আবাসা ১৮-২০)। কুরআনে মহান আল্লাহ
‘ঠেলে দেয়া হয়’-প্রত্যয়টি ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ ২১০ দিন
পর একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হবার উপযুক্ত হয়।
আর সন্তানটির যখন ভূমিষ্ঠ হবার উপযুক্ত
সময় হয়ে যায়, তখন Overy-Placenta
থেকে এক প্রকার গ্রন্থিরস নিঃসৃত হয়, যা প্রসব পথ পিচ্ছিল
ও জরায়ুর মুখ ঢিলা করে দেয়। আর মানব সন্তান ঐ সময় বিভিন্নভাবে নড়াচড়া
করতে থাকে এবং প্রসব পথ পিচ্ছিল থাকায় বাচ্চা অনায়াসে বেরিয়ে আসে। সবচেয়ে মজার কথা হ’ল মানবশিশুর যে অঙ্গ সর্বপ্রথম গঠিত হয়
তা হ’ল কর্ণ। আর সন্তান গর্ভে
ধারণের ২১০ দিন পর চক্ষু গঠিত হয় এবং একটি পূর্ণাঙ্গ মানব শিশুতে পরিণত হয়।
সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ-
নারীর গর্ভ সঞ্চার হওয়ার পর ২৮০ দিনের
মধ্যে ১২০ দিন অতিবাহিত হলে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায়, সন্তানের লিঙ্গ
কী হবে অথাৎ সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে! ছেলে-মেয়ে সৃষ্টি সম্পর্কে আল্লাহ
বলেন-
لِلَّهِ
مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ يَخْلُقُ مَا
يَشَاءُ ۚ يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا
وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا ۖ
وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيمًا
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদের পুত্র-কন্যা উভয় দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা
করে দেন। (শুআরা ৪৯-৫০)
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (স) এর একটি
হাদীস উল্লেখযোগ্য-পুরুষের বীর্য স্ত্রীর বীর্যের উপর প্রাধান্য লাভ করলে পুত্র
সন্তান জন্ম নেয়। আবার স্ত্রীর বীর্য
পুরুষের বীর্যের উপর প্রাধান্য লাভ করলে কন্যা সন্তান জন্ম নেয়।
আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের মতে, জরায়ুতে যদি কন্যা ভ্রূণ সৃষ্টি হয়, তাহলে করটেক্স কম্পোন্যান্টগুলি (Cortics Componant) বৃদ্ধি প্রাপ্ত হতে থাকে এবং মেডুলার কম্পোন্যান্টগুলি
(Medullar Componant) কমতে থাকে। পক্ষান্তরে জরায়ুতে যদি পুত্র ভ্রূণ সৃষ্টি হয়, তাহলে করটেক্স কম্পোন্যান্টগুলি (Cortics Componant) কমতে থাকে এবং মেডুলার কম্পোন্যান্টগুলি
(Medullar Componant) বৃদ্ধি প্রাপ্ত
হতে থাকে। তাছাড়া মানুষের প্রতিটি দেহকোষে মোট ২৩
জোড়া ক্রোমোসোম থাকে। তার মধ্যে ২২ জোড়া অটোসোম এবং এক জোড়া
থাকে সেক্স ক্রোমোসোম। নারীর ডিম্বাণুতে
XX ক্রোমোসোম এবং পুরুষের শুক্রাণুতে XY ক্রোমোসোম থাকে। সুতরাং নারীর ডিম্বাণুর
X ক্রমোজমকে যদি পুরুষের শুক্রাণুর X ক্রমোজম নিষিক্ত করে, তবে জাইগোটের ক্রমোজম
হবে XX এবং কন্যা সন্তানের জন্ম হবে। পক্ষান্তরে নারীর ডিম্বাণুর X ক্রমোজমকে যদি পুরুষের
শুক্রাণুর Y ক্রমোজম নিষিক্ত করে, তবে জাইগোটের ক্রমোজম হবে XY এবং পুত্র সন্তান জন্ম হবে।
মূল কথা হলো, যখন ডিম্বাণুর ও শুক্রাণুর
জাইগোটের ক্রোমোসোম একই গোত্রীয় (XX) হয়, তখন কন্যা সন্তান এবং যখন ডিম্বাণুর ও শুক্রাণুর জাইগোটের
ক্রমোজম একই গোত্রীয় (XY) না হয়, তখন পুত্র সন্তান
জন্ম নেয়। অতএব সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ নির্ভর করে পুরুষের দেহে উৎপন্ন
শুক্রাণুর উপর। আর যমজ সন্তান জন্ম দানের জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা স্ত্রীর।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, নারীর ডিম্বাশয় থেকে যখন একটি ডিম্বাণু জরায়ুতে নেমে আসে, তখন একটি শক্তিশালী শুক্রাণু তাতে প্রবেশ করে একটি সন্তানের
জন্ম হয়। কিন্তু যদি দু’টি ডিম্বাণু জরায়ুতে
নেমে আসে, তখন দু’টি শক্তিশালী শুক্রাণু
তাতে আলাদা আলাদা প্রবেশ করে। ফলে যমজ সন্তানের জন্ম হয়।
কুরআনের শুরুতেই আল্লাহ বলে দিয়েছেন,
এ কুরআনের মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। তাই কুরআনে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে,
সেটাই ঠিক, কেবলমাত্র সেটাই ঠিক। বিজ্ঞানের সাথে যদি সে তথ্য মিলে যায়,
তবু কুরআন সঠিক। যদি না মেলে তবুও কুরআনই সঠিক। বিজ্ঞান ভুল।
আধুনিক বিজ্ঞান যেটা নিয়ে তটস্থ থাকে,
সে বিষয়ে আল্লাহর একটা ইশরাই যথেষ্ট। যেমনটি কুরআনের মধ্যে আল্লাহ বলেছেন, كُنْ
فَيَكُونُ-হয়ে যাও, অমনি তা হয়ে যায়!
তাই, আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
কুরআনে
ভ্রুণবিদ্যার স্পষ্টতা দেখে ইসলাম গ্রহণ-
কুরআনে তালাকের পর তিন মাস পর্যন্ত ‘ইদ্দত’ পালনের
বিধানসংশ্লিষ্ট রহস্য ভেদ করে অপার বিস্ময়ে
অভিভূত হন ভ্রুণ বিশেষজ্ঞ রবার্ট গিলাম। রবার্ট
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি হেলথ ইনস্টিটিউটে গবেষণারত আছেন। সম্প্রতি
তিনি ইয়াহুদী ধর্ম ত্যা করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। নারীদের সম্ভ্রম প্রহরায় গোটা বিশের ইসলামের অবস্থান একক ও অতুলনীয়
বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন, ইসলামের বিধান বাস্তব অর্থেই স্বাস্থ্যবিধি ও বিজ্ঞানসম্মত। আর কুরআনই পৃথিবীর বুকে একমাত্র গ্রন্থ যা নিজের মধ্যে এরূপ
অসংখ্য গুঢ়রহস্য ধারণ করে আছে।
রবার্ট গিলাম প্রায় পুরো জীবনটাই গাইনি ও ভ্রুণবিদ্যা সম্পর্কিত
গবেষণায় ব্যয় করেছেন। তার জীবনের বড় অংশ কেটেছে প্রজনন প্রক্রিয়া, সন্তান জন্ম ও তার পূর্ববর্তী ধাপসমূহ, জরায়ুতে ভ্রুণের বেড়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায় ইত্যাদি সম্পর্কিত
গবেষণাতে। মিসরীয় ওয়েবসাইট ‘আল মুহিত’ এর দেয়া
তথ্য মতে, মিসরের ন্যাশনাল হেল্থ সেন্টারের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুল বাসেত
তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখা এক নিবন্ধে বলেছেন, কুরআন অধ্যয়নই
ইয়াহুদি বিজ্ঞানী রবার্ট গিলামের ইসলাম গ্রহণের পথ তৈরি করেছে। তাঁর চিন্তার রাজ্যে বিপ্লব এনেছে তালাকের পর স্ত্রীর পবিত্রতা
অর্জনের জন্য তিন মাস অবধি ইদ্দত পালনের এর বিধান সম্বলিত আয়াত। বিখ্যাত এই বিজ্ঞানী আলোচ্য বিষয়ের আয়াতগুলো অধ্যয়ন করে অপার
বিস্ময়ের স্রোতে ভেসেছেন। ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে তিনি আর কালক্ষেপণ
করতে পারেননি।
প্রতিবেদন মতে, রবার্ট
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরে ইয়াহুদিদের পরিচালিত একটি গাইনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভ্রুণ
গবেষণায় রত ছিলেন। ২০১২ সালের জুলাই মাসে ইসলাম গ্রহণের প্রকাশ্য
ঘোষণা দিয়ে তিনি সকলকে অবাক করে দেন। তিনি শুধু ইসলাম গ্রহণ করেই থেমে যাননি, বরং
সঙ্গে সঙ্গে তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেন, ‘মুসলিম
নারীরাই পৃথিবী শ্রেষ্ঠ পবিত্র মহিলা। তাঁর ইসলাম গ্রহণের রহস্য কিনারা করতে অনেকেই
অনুসন্ধানে নেমে পড়েছেন।
বৃদ্ধ রবার্টকে ইসলামের দুর্বল করে ফেলার
মতো বিষয়টা কী ছিল? সেই কৌতুহল নিবারণে তৎপর হয়েছেন অনেকেই। সেই রহস্যের পর্দাটি
উন্মোচন করেছেন মিসরীয় চিকিৎসক আবদুল বাসেত। তিনি বলেন, ইসলামে একজন নারী যদি বৈবাহিক বন্ধন ছিন্ন হবার পর আরেকজন পুরুষকে
স্বামী হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার বেলায় তিন মাস অপেক্ষা করার বিধানসম্বলিত কুরআনের
আয়াত ও হাদিসগুলোর অধ্যয়নই রবার্টের ইসলাম গ্রহণের কারণ। যেহেতু রবার্ট নিজস্ব গবেষণায় এ সিদ্ধান্তের
চূড়ান্ত পর্যায় উপনীত হয়েছিলেন যে, তিন মাসের আগে জরায়ুতে ভ্রুণের আলামতসমূহ পরিস্কার বা নিঃশেষিত
হয় না। এ সময়টি অতিবাহিত হবার
পর জরায়ু সম্পূর্ণ পরিস্কার হয়ে যায় এবং নারী অপর স্বামীর বিবাহে আবদ্ধ হবার উপযুক্ত
হয়ে উঠে। এ সময়টি অতিক্রান্ত
হবার আগেই যদি মেয়েটি নতুন পুরুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে তখন পূর্বের শুক্রাণু জরায়ুতে
থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে যা মারাত্মক ক্ষতিকর বিবেচিত হয়। চিকিৎসাবিদ্যা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে একজন
স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হবার পর অথবা অন্যকোনও পন্থায় শারীরিক সম্পর্ক
স্থাপিত হবার পর উল্লিখিত পুরো সময়টি বিরতি না দিয়ে পরবর্তী স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য
জীবন শুরু করে তখন তা গর্ভবতী মা এবং নবজাতক উভয়ের জন্য নানান বিপদের ঝুঁকি বহন করে। এর ফলে স্বাস্থ্যগত
বিবিধ সমস্যার সংক্রমণ ঘটে এবং এক পর্যায়ে রোগগুলো বংশপরম্পরায় বয়ে বেড়াতে হয়।
কুরআন যখন কঠোরভাবে নিষেধ করলো যে, কোনও নারী স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের পর
ইদ্দতের সময়টি সম্পূর্ণ শেষ হবার আগে যেন কোনোক্রমেই পরবর্তী স্বামীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে
আবদ্ধ না হয় এবং হাদিসেও যখন নির্দেশনা প্রদান করা হল যে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ
ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান এনেছে সে যেন অন্যের ক্ষেতে সেচ না দেয়।’ অর্থাৎ ইদ্দত শেষ হবার আগে যেন তালাকপ্রাপ্তা
নারীর সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ না হয়। ডা. রবার্ট আমেরিকায় আফ্রিকান অভিবাসী মুসলিম নারীদের ওপর ব্যাপক
অনুসন্ধান চালিয়ে বিবাহিত মহিলাদের জরায়ুতে কেবলই একজন পুরুষের (স্বামী) শুক্রাণুর
অস্তিত্ব মিলেছে। অথচ মার্কিন সমাজে
বেড়েওঠা হাজার হাজার উন্মুক্ত জীবনযাপনে অভ্যস্ত অমুসলিম নারীর জরায়ুর অবস্থা তার সম্পূর্ণ
বিপরীত। এতে তিনি এই সিদ্ধান্তে
উপনীত হলেন, আমেরিকান ও ইউরোপীয়
নারীদের সঙ্গে একাধিক পুরুষের যৌনসম্পর্কের রেওয়াজ চালু আছে। অন্যদিকে ইসলামি অনুশাসন মেনে চলেন এমন মুসলিম
নারীরা তো প্রথমত, বিয়ে বহির্ভূত যৌনসম্পর্ক বৈধই মনে করে না। দ্বিতীয়ত, একজন স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন
হয়ে গেলেও তিন মাস অপেক্ষা না করে নতুন পুরুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে না। প্রতিবেদনের বরাতে
জানা গেছে, বিষয়টিতে নিকটজনদের
অবস্থা যাচাই করতে গিয়ে উঠে আসা হতাশাব্যঞ্জক রিপোর্টে পশ্চিমা সমাজের অন্তর্নিহিত
চেহারা তাঁর মনকে আরও বিষিয়ে তোলে। খোদ নিজের তিন পুত্র সন্তানের মধ্যে কেবল একজনই তাঁর ঔরসজাত-এই
রিপোর্ট ছিল তার জন্যে বজ্রঘাততূল্য। পরিশেষে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছুলেন-‘মুসলিম নারীরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সতী ও পবিত্র
নারী’। তিনি যেই হারানো সম্পদের
খোঁজে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অলিগলি তন্ন তন্ন করেছেন তা কতো সরল ও ঋজু ভাষায় কুরআনের আয়াতে
বিবৃত হয়েছে, হাদিসের প্রাঞ্জল ভাষায়
বর্ণিত হয়েছে, এ বিস্ময়ের ধাক্কা তাঁকে পৌঁছেদেয় বিশ্বাসের
ভূবনে। সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা
করছিল আলোকিত জীবনের সুবহে সাদিক।
Faiyaz Al-Muhaimin
তার মানে এই য়ে যারা ভালো কোরান জানে তারা সব কিছু আবিস্কার করতে পারবে কিন্তু আমার জানা মতে বিশ্বে মুসলমান দের আবিস্কার কি আমার জানা নায়।প্রায় আবিস্কার ইহুদিদের।
উত্তরমুছুনমুসলমানের আবিষ্কার নেই কে বলছে আপনাকে?ইতিহাস পড়ুন তা হলেই জানতে পারবেন।মুসলমানদের ডিস্ক্রাইভ করার জন্য মিডিয়া নেই।তবে আপনার কথাও ভুলেনয় কারন আধুনিক বিজ্ঞানে মুসলমানের অবদান নেই বললেই চলে কারন তারা তাদের সঠিক পথে নাই।
মুছুনএগুলো অন্য কোথা থেকে কপি করা মনে হচ্ছে আয়াত গুলা ভুল দেখাচ্ছে। ঠিক করে দিলে ভাল হতো।
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর একটি লেখা, এটা পড়লে সত্যিই ঈমান বেড়ে যাবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস তৈরি হবে।
উত্তরমুছুনআমি গল্প লিখার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো ব্যবহার করতে পারি?
উত্তরমুছুন