বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০১৫

মৌলকণা

আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা জানি, পরমাণুগুলির একটি আভ্যন্তরীণ গঠন আছেএতে রয়েছে একটি কেন্দ্র (Nucleus), যা গঠিত হয় একটি বৈদ্যুতিক আধান যুক্ত কণিকা প্রোটন ও একটি আধান বিহীন কণিকা নিউট্রন সমন্বয়েকেন্দ্রের চতুর্পাশে আবর্তিত হচ্ছে কতগুলো ঋণাত্মক আধানযুক্ত কণিকা ইলেকট্রনপ্রথমে মনে করা হতো, প্রোটন ও নিউট্রনই মৌলকণা (Elementary particle)কিন্তু কতগুলো পরীক্ষায় নির্দেশ পাওয়া যায়, আসলে এগুলি আরো ক্ষুদ্রতম কণা দ্বারা গঠিতক্যালটেক পদার্থবিদ মারে গেলম্যান এই কণাগুলির নাম দেন কোয়ার্ক (Quark) বলবাহী কণিকাগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হল, তারা অপবর্জন নীতি (exclusion principle) মানে না
প্রতিটি প্রোটন ও নিউট্রন তিনটি কোয়ার্ক দিয়ে গঠিতএকটা প্রোটনে রয়েছে দুটি উঁচু কোয়ার্ক (up quark) এবং একটি নিচু কোয়ার্ক (down)নিউট্রনে রয়েছে দুটি নিচু (down) কোয়ার্ক আর একটি উঁচু কোয়ার্কশক্তিশালী কেন্দ্রীয় বলকে (Strong nuclear force) বলা হয় চতুর্থ শ্রেণীর বলএই বল প্রোটন ও নিউট্রনের কোয়ার্কগুলিকে একত্রে ধরে রাখেতাছাড়া একত্রে ধরে রাখে পরমাণুর কেন্দ্রকের প্রোটন ও নিউট্রনগুলিকেবিশ্বাস করা হয় গ্লুয়ন (gluon) নামক এক চক্র বিশিষ্ট আর একটি কণিকা এই বল বহন করেবলবাহী কণিকাগুলিকে কণিকা অভিজ্ঞাপক যন্ত্রে বাস্তব (real) কণিকার মতো প্রত্যক্ষভাবে শনাক্ত করা যায় নাকিন্তু তাদের অস্তিত্ব আমরা জানতে পারিতার কারণ, তাদের একটি মাপন যোগ্য অভিক্রিয়া রয়েছেতারা পদার্থ কণিকাগুলির অন্তর্বর্তী বল সৃষ্টি করে
কুরআনে যে মৌলকণা বর্ণনা সাংকেতিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো কোয়ার্ক, নিউট্রিনো প্রভৃতি ক্ষুদ্রতম ভর বিশিষ্ট সূক্ষ্মতম কণিকাসূরা সাবার ৩নং আয়াত থেকে এ বিষয়টির ব্যাখ্যা করা যায়


وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَأْتِينَا السَّاعَةُ ۖ قُلْ بَلَىٰ وَرَبِّي لَتَأْتِيَنَّكُمْ عَالِمِ الْغَيْبِ ۖ لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَلَا أَصْغَرُ مِنْ ذَٰلِكَ وَلَا أَكْبَرُ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِين
কাফেররা বলে, আমাদের উপর কেয়ামত আসবে নাবলুন কেন আসবে না? আমার পালনকর্তার শপথ-অবশ্যই আসবেতিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাতনভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে তাঁর আগোচরে নয় অণু পরিমাণ কিছু, না তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এবং না বৃহৎ-সমস্তই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে

আয়াতটির কতিপয় শব্দ লক্ষ্য করা যাক(সূত্র : কুরআনের অভিধান, মুনির উদ্দীন আহমদ)

ذَرَّةٍ (যাররাতুন)-অণু ,বস্তুর সূক্ষ্ম অংশ
مِثْقَالُ (মিছক্কালুন)-ভর বিশেষ
أَصْغَرُ (আছগারু)- অনেক ছোট, ক্ষুদ্র

مِثْقَالُ অর্থ যার ভর আছে অর্থাৎ ওজন করা যায় এমন কিছু কে বোঝানো হয়েছে এবং ذَرَّةٍ অর্থ বস্তু বা পদার্থের সূহ্মতম অংশ কে বোঝানো হয়েছেসুতরাং مِثْقَالُ ذَرَّةٍ  অর্থ বস্তুর সূক্ষ্মতম ভরবিশিষ্ট অংশ (the smallest weightable portion of the particle)
অর্থাৎ পদার্থের যে অংশকে ওজন করা সম্ভব, এখানে সেটার প্রতিই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছেআজ আমরা বিজ্ঞানের মাধ্যমে জেনেছি যে, কোয়ার্ক, নিউট্রিনো ইত্যাদি এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত পদার্থের সবচেয়ে সূক্ষ্মতম অংশ বা কণিকা এবং যেগুলোর ওজন কণিকা অভিজ্ঞাপক যন্ত্রের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে সনাক্ত করা সম্ভবসুতরাং আদি পদার্থ কণিকা কোয়ার্ক, নিউট্রিনো ইত্যাদিকে মিছক্কালু যাররাতুন হিসেবে গ্রহণ করে নেয়া যুক্তিসংগত হবে

أَصْغَرُ مِنْ ذَٰلِكَ অর্থ তা অপেক্ষা ক্ষুদ্র বলতে এমন কিছুকে হয়ত বোঝানো হয়েছে যেগুলোর ভর কণিকা অভিজ্ঞাপক যন্ত্রে বাস্তব কণিকা অর্থাৎ ভরবাহী কণিকার মত প্রত্যক্ষভাবে সনাক্ত করা সম্ভব নয়, তবে এগুলোর এমন একটা মাপনযোগ্য অভিক্রিয়া রয়েছে যার কারণে তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা অবগত হতে পারিবিজ্ঞানের বর্ণনায় বলবাহী মৌল কণিকাগুলো যেমন ফোটন, গ্লুয়ন, গ্র্যাভিটন ইত্যাদি ভরবাহী মৌল কণিকা যেমন কার্ক, নিউট্রিনো থেকেও ক্ষুদ্রতবে এগুলোর মাপনযোগ্য অভিক্রিয়া রয়েছেসুতরাং তা অপেক্ষা ক্ষুদ্র বলতে বলবাহী মৌল কণিকাসমূহের প্রতিই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে
প্রশ্ন আসতে পারে, কুরআনে কেন শুধু ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে? কেন সহজভাবে এবং আরো স্পষ্টভাবে মৌলকণা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়নি?

এর জবাব হচ্ছে-কুরআনুল কারীম নাযিল হয়েছে সবকালের সব মানুষের জন্যতদানীন্তন আরব সমাজ তথা পঞ্চম শতকের বিশ্বে অবতীর্ণ কুরআনে যদি স্পষ্টভাবে এসব তথ্য সন্নিবেশিত করা হতো, তাহলে তা লোকজনের কাছে দুর্বোধ্য মনে হতোদ্বীনের দাওয়াত সহজ করার জন্য কুরআনকে অত্যন্ত সাবলীল এবং ঋজু ভাষায় আল্লাহ রব্বুল আলামীন নাযিল করেছেনতবে, মানব সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে কুরআনের সাংকেতিক ইঙ্গিতগুলোর জট যাতে খুলে যায় এবং কুরআনকে যাতে যুগের সাথে সদা সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয় এ কারণে কুরআন নিয়ে গবেষণা করার জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আয়াতে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে
প্রসঙ্গত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা থাকা জরুরিঅনেক তাফসীরকারক এবং অনুবাদক যাররাতুন এবং মিসক্কালুন শব্দগুলোকে ধুলিকণা এবং বালুকণা হিসেবে বর্ণনা করেছেনএর কারণ হচ্ছে, তাফসীরগুলো সম্প্রতি লিখিত নয় এবং সম্ভবত কণিকা অভিজ্ঞাপক যন্ত্র আবিষ্কারের পূর্বে লিখিত

Faiyaz Al-Muhaimin

1 টি মন্তব্য:

  1. খুব সুন্দর লিখেছেন।পড়ে ভাল লাগল।আরও লিখবেন আশা করি ।ধন্যবাদ ।😊

    উত্তরমুছুন