বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০১৫

পানিচক্র




সর্বপ্রথম পানিচক্রের আধুনিক ধারনা দেন বার্নার্ড পলিসি, ১৫০০ খ্রিস্টাব্দেতিনি সাগর থেকে পানির বাষ্পাকারে উড়ে যাওয়া এবং পরে তা ঠাণ্ডা হয়ে মেঘে পরিণত হবার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দেন যা এখনো নির্ভুল বলে প্রমাণিতমেঘমালা সাগর থেকে দূরবর্তী ভূখণ্ডের ওপর ঘনীভূত হয় এবং ক্রমান্বয়ে তা বৃষ্টি আকারে নিচে পতিত হয়এ পানি খাল-বিল ও নদ-নদীতে জড়ো হয় এবং পুনরায় সাগরে ফিরে আসেখ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীতে মিলেটাস-এর থেলিস এ ধারণা পোষণ করতেন যে, সমুদ্রের উপরিভাগে ছিটানো পানিকণাকে বাতাস ধারন করে ওপরে তুলে নেয় এবং সমুদ্র দূরবর্তী স্থানে নিয়ে তা বৃষ্টি আকারে বর্ষণ করে
আদিকালের মানুষ ভূগর্ভস্থ পানির উৎস সম্পর্কে জানত নাতারা ভাবত যে, বাতাসের তাড়নায় সাগরের পানি সজোরে মহাদেশের অভ্যন্তরভাগে এসে পরেতারা আরও বিশ্বাস করত যেগোপন পথে কিংবা গভীর জলরাশি থেকে পানি পুনরায় ফিরে আসে যা সাগরের সাথে জড়িতএকে প্লেটোর যুগে টারটারাস বলা হতএমনকি অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিখ্যাত চিন্তাবিদ ডিসকার্টিজও একই ধারণা পোষণ করতেনঊনবিংশ শতাব্দীতেও এরিস্টটল তত্ত্ব সর্বত্র বিদ্যমান ছিলএ তত্ত্ব অনুসারে , পাহাড়ের ঠাণ্ডা গভীর গুহায় পানি ঘনীভূত হয় এবং মাটি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হ্রদ ঝর্ণাগুলোকে পানি সরবরাহ করেবর্তমানে, আমরা জানি যে, বৃষ্টির পানি মাটির ফাটল দিয়ে ভেতরে চুইয়ে পড়ার কারণে ওই পানি পাওয়া যায়
কুরআনে পানিচক্রের বর্ণনা এসেছে এভাবে-

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَلَكَهُ يَنَابِيعَ فِي الْأَرْضِ ثُمَّ يُخْرِجُ بِهِ زَرْعًا مُخْتَلِفًا أَلْوَانُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَجْعَلُهُ حُطَامًا ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَذِكْرَىٰ لِأُولِي الْأَلْبَابِ
তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর সে পানি যমীনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেছেন, এরপর তদ্দ্বারা বিভিন্ন রঙের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তোমরা তা পীতবর্ণ দেখতে পাওএরপর আল্লাহ তাকে খড়-কুটায় পরিণত করে দেননিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্যে উপদেশ রয়েছে। (যুমার ২১)

وَمِنْ آيَاتِهِ يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَيُحْيِي بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
 তাঁর আরও নিদর্শনঃ তিনি তোমাদেরকে দেখান বিদ্যুৎ, ভয় ও ভরসার জন্যে এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তদ্দ্বারা ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেননিশ্চয় এতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (রূম ২৪)

وَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِي الْأَرْضِ ۖ وَإِنَّا عَلَىٰ ذَهَابٍ بِهِ لَقَادِرُونَ
আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মত অতঃপর আমি জমিনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম। (মুমিনুন ১৮)

বাতাস মেঘকে পূর্ণ করে

وَاللَّهُ الَّذِي أَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ إِلَىٰ بَلَدٍ مَيِّتٍ فَأَحْيَيْنَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا
আল্লাহই বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর সে বায়ু মেঘমালা সঞ্চারিত করেঅতঃপর আমি তা মৃত ভূ-খন্ডের দিকে পরিচালিত করি, অতঃপর তদ্বারা সে ভূ-খন্ডকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করে দেই। (ফাতির ৯)
وَأَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَسْقَيْنَاكُمُوهُ وَمَا أَنْتُمْ لَهُ بِخَازِنِين
আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু পরিচালনা করি অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদেরকে তা পান করাইবস্তুতঃ তোমাদের কাছে এর ভান্ডার নেই। (হিজর ২২)
এখানে ব্যবহৃত আরবি শব্দটি হচ্ছে لَوَاقِحَ যা لَقِحَ শব্দের বহুবচন এবং এর উৎপত্তি লাক্বাহ থেকে যার অর্থ হচ্ছে পূর্ণ করা, গর্ভবতী করা বা উর্বর করাএখানে পূর্ণ করার অর্থ হচ্ছে যে, বাতাস মেঘ তৈরি ও মেঘমালাকে ঘনীভূত করেযার ফলে বৃষ্টিপাত হয়
এই আয়াত থেকে দেখা যায় বৃষ্টি তৈরীর প্রথম ধাপ হল বাতাসকিন্তু বিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত বাতাস আর বৃষ্টিপাত এর মধ্যে কোন প্রকার সম্পর্ক কারো জানা ছিল নামানুষ কেবল জানত, বাতাস মেঘকে ভাসিয়ে নিয়ে চলেকিন্তু আধুনিক আবহাওয়া গবেষণায় বৃষ্টিপাতের জন্য বাতাসের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়েছে

সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির বাস্পীকরণ এবং স্রোতের দ্বারা অসংখ্য বুদবুদ তৈরী হয় এবং এই ছোট বুদবুদগুলো ফেটে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি কনা তৈরী করেএই পানিকণাগুলো বাতাসের ধূলিকণার সাথে মিশে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে পৌছে যায়সেখানে এই কণাগুলি বাষ্পের সংস্পর্শে আসে এবং বাষ্প এই কনাগুলিকে কেন্দ্র করে ঘনীভূত হয়ে ছোট পানির বিন্দুতে পরিনত হয়এরকম পানির অনেক বিন্দু মিলে মেঘ তৈরী হয় যা থেকে পরে বৃষ্টিপাত হয়দেখা যাচ্ছে বাতাসের এই ধুলিকনা বহন, তারপর তার মাধ্যমে পানিকনা কে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে পৌছে দেয়ার কাজটি অত্যন্ত জরুরি বাতাসের এই বৈশিষ্ট্য না থাকলে কখনই মেঘ তৈরী হতে পারত না, আর কখনই বৃষ্টি হত না আল্লাহ বলছেন-

اللَّهُ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهُ فِي السَّمَاءِ كَيْفَ يَشَاءُ وَيَجْعَلُهُ كِسَفًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهِ ۖ فَإِذَا أَصَابَ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُونَ
তিনি আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চারিত করেঅতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে স্তরে স্তরে রাখেনএরপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বৃষ্টিধারাতিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়। (রূম ৪৮)

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُزْجِي سَحَابًا ثُمَّ يُؤَلِّفُ بَيْنَهُ ثُمَّ يَجْعَلُهُ رُكَامًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهِ وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مِنْ جِبَالٍ فِيهَا مِنْ بَرَدٍ فَيُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ وَيَصْرِفُهُ عَنْ مَنْ يَشَاءُ ۖ يَكَادُ سَنَا بَرْقِهِ يَذْهَبُ بِالْأَبْصَارِ
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন; অতঃপর তুমি দেখ যে, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়তিনি আকাশস্থিত শিলাস্তুপ থেকে শিলাবর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা, তা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেনতার বিদ্যুৎঝলক দৃষ্টিশক্তি যেন বিলীন করে দিতে চায়। (আন নূর ৪৩)

وَهُوَ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا أَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَيِّتٍ فَأَنْزَلْنَا بِهِ الْمَاءَ فَأَخْرَجْنَا بِهِ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۚ كَذَٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتَىٰ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেনএমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ন মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি এ মেঘমালাকে একটি মৃত শহরের দিকে হাঁকিয়ে দেইঅতঃপর এ মেঘ থেকে বৃষ্টি ধারা বর্ষণ করিঅতঃপর পানি দ্বারা সব রকমের ফল উৎপন্ন করিএমনি ভাবে মৃতদেরকে বের করব-যাতে তোমরা চিন্তা কর। (আরাফ ৫৭)

পানি বিজ্ঞানের আধুনিক মতবাদের সাথে কুরআনের পরিপূর্ণরূপে মিলে যায়উপরোক্ত আয়াতগুলো ছাড়াও কুরআনের আরো যেসব স্থানে পানি চক্রের বর্ণনা এসেছে-

أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَابِيًا ۚ وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ مِثْلُهُ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ ۚ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً ۖ وَأَمَّا مَا يَنْفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ
তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেনঅতঃপর স্রোতধারা প্রবাহিত হতে থাকে নিজ নিজ পরিমাণ অনুযায়ীঅতঃপর স্রোতধারা স্ফীত ফেনারাশি উপরে নিয়ে আসেএবং অলঙ্কার অথবা তৈজসপত্রের জন্যে যে বস্তুকে আগুনে উত্তপ্ত করে, তাতেও তেমনি ফেনারাশি থাকেএমনি ভাবে আল্লাহ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত প্রদান করেনঅতএব, ফেনা তো শুকিয়ে খতম হয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকেআল্লাহ এমনিভাবে দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন। (রাদ ১৭)

وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مِنْ رِزْقٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ آيَاتٌ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
দিবারাত্রির পরিবর্তনে, আল্লাহ আকাশ থেকে যে রিযিক (বৃষ্টি) বর্ষণ করেন অতঃপর পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন, তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (যারিয়াত ৫)
أَفَرَأَيْتُمُ الْمَاءَ الَّذِي تَشْرَبُونَ  
তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি?

أَأَنْتُمْ أَنْزَلْتُمُوهُ مِنَ الْمُزْنِ أَمْ نَحْنُ الْمُنْزِلُونَ
তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন, না আমি বর্ষন করি?

لَوْ نَشَاءُ جَعَلْنَاهُ أُجَاجًا فَلَوْلَا تَشْكُرُونَ
আমি ইচ্ছা করলে তাকে লোনা করে দিতে পারি, অতঃপর তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না? (ওয়াক্বিয়াহ ৬৮-৭০)


Faiyaz Al-Muhaimin


২টি মন্তব্য:

  1. এই খানে পানি চক্রের কি আছে? কোনো আয়াতে তো নেই পানি শুকিয়ে বাষ্প হয়ে যায়, সেই বাষ্প থেকে মেঘ তৈরিহ।। গোজামিল ঢুকি,, কোত্থেকেকি বালের যুক্তিতে এইগুলা পানি চক্র হয় তা বুঝি না। এই গুলা কোনো ভাবেই পানি চক্রের ধারণা দেয় না

    উত্তরমুছুন