স্যার Van Allen পৃথিবীবাসীর কাছে
গবেষনালব্ধ ফলাফল প্রকাশ করে বলেন যে, আমাদের পৃথিবী পৃষ্ঠের নীচে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী
Magnetic field আছে যা আমাদের বায়ুমণ্ডলের
চারপাশে একটি বেল্টের মতো বলয় সৃষ্টি করেছে, পরবর্তীতে আরো অনেক গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীগণ এ বিষয়ে নিশ্চিত হন। স্যার Van Allen-এর নামানুসারে
এ বলয়ের নামকরণ হয় “Van Allen belt”। জীবনের অবিরাম গতিধারা বজায় রাখার জন্য
পৃথিবীকে ঘিরে যে বায়ুমণ্ডল রয়েছে তা বেশ গুরত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে। যখন ছোট-বড় বহু
উল্কা পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, তখন বায়ুমণ্ডল এদের বেশিরভাগকেই ভূপৃষ্ঠে পতিত হতে দেয় না। এভাবে পৃথিবীর জীবজগতকে উল্কা পতনের ক্ষতিকর
দিক থেকে বাঁচিয়ে দেয় বায়ুমণ্ডল। তা ছাড়া মহাশূণ্য থেকে জীবিত বস্তু সমূহের জন্য ক্ষতিকর যে রশ্মি নির্গত হয়
তাকে ফিল্টার করে বা ছেঁকে শোধন করে বায়ুমন্ডল। কৌতুহলের ব্যাপারটি হলো এই যে, যেসব রশ্মিসমূহ
জীবের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং উপকারী; যেমন- সূর্যের আলো, Near Ultraviolet Ray, বেতার তরঙ্গকেই
বায়ুমণ্ডল অতিক্রম করতে দেয়। এ সমস্ত রশ্মি জীবনের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। Ultraviolet Ray, যেটি কিনা কেবল আংশিকভাবে বায়ুমণ্ডল কর্তৃক আসতে পারে, তা উদ্ভিদের সালোক
সংশ্লেষণ আর সমস্ত জীবসমূহের টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। সূর্য থেকে যে অতি গাঢ় আল্ট্রভায়োলেট রশ্মি
নির্গত হয়, তা বায়ুমন্ডলের
ওযোন স্তর দিয়ে ফিল্টার হয়; এভাবে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির অত্যন্ত সীমিত আর অতি প্রয়োজনীয় অংশ ভূপৃষ্ঠে এসে
পোঁছে। বায়ুমন্ডলের সুরক্ষার
কাজ এখানেই শেষ হয়না, মহাশূণ্যের প্রায় -২৭০০ সেলসিয়াসের মতো বরফ ঠাণ্ডা তাপমাত্রা থেকেও
বায়ুমন্ডল পৃথিবীকে রক্ষা করে থাকে। কুরআনের মধ্যে আল্লাহ তা’আলা আকাশের একটি
অত্যন্ত কৌতুহলোদ্দীপক বৈশিষ্ট্যের প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন-
وَجَعَلْنَا
السَّمَاءَ سَقْفًا مَحْفُوظًا ۖ وَهُمْ عَنْ
آيَاتِهَا مُعْرِضُونَ
আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। (আম্বিয়া ২১)
সূর্যে প্রতি মিনিটে বিস্ফোরণের ফলে নির্গত
শক্তি যে কি পরিমাণ ক্ষমতা রাখে তা আমাদের কল্পনাতীত। এর একটিমাত্র বিস্ফোরণ
হিরোশিমায় পতিত ১০০বিলিয়ন এটম বোমার সমতুল্য। বায়ুমণ্ডলের ভ্যান
অ্যালেন বেল্টের জন্য এই শক্তির ক্ষতিকর দিক থেকে মহাবিশ্ব নিরাপদ রয়েছে। মানব জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সৃষ্ট পৃথিবী থেকে বায়ুমণ্ডলের
বাইরে মহাশূণ্যে যদি আমরা সরে যাই, তবে প্রচন্ড বরফ
শীতল ঠাণ্ডার কবলে পড়বো। পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড দ্বারা তৈরী
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার স্তর পৃথিবীকে মহাশূণ্যজাত বস্তুর ক্ষতিকর কসমিক রশ্মি এবং কণাসমূহ
থেকে নিরাপদে রাখার জন্য বর্ম হিসেবে কাজ করে। পৃথিবী থেকে সহস্র
সহস্র কিলোমিটার উপরে অবস্থিত এই বেল্টটি মারাত্মক ক্ষতিকর শক্তি থেকে পৃথিবীর জীব
জগৎকে রক্ষা করে যাচ্ছে, নচেৎ মহাশূণ্য থেকে ভয়ানক এই শক্তি পৃথিবীতে এসে পৌঁছাত। এ সমস্ত বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি প্রমাণ করে যে, বিশেষ এক পদ্ধতিতে
পৃথিবী নিরাপদ রয়েছে। গুরত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো যে , ১৪০০ বছর পূর্বে এ আয়াতটি দ্বারা এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার
কথা জানানো হয়েছে।
سَقْفًا مَحْفُوظًا বা সুরক্ষিত ছাদ-প্রত্যয়টি ব্যবহারের
মাধ্যমে আল্লাহ সহজভাবে ভ্যান অ্যালেন বেল্টের প্রয়োজনীয়তার কথা বর্ণনা করেছেন।
ভ্যান এলেন বেল্ট যদি না থাকতো তবে সূর্যের
ভেতরে ঘন ঘন সংঘঠিত বিশাল বিস্ফোরনের শক্তি যা Solar Flare নামে পরিচিত তা
পৃথিবীর সমগ্র প্রাণী জগতকে ধ্বংস করে দিতো। আমাদের জীবনের জন্য
ভ্যান এলেন বেল্টের গুরত্বের কথা বলতে গিয়ে ড. হিউগ রস বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে সৌরজগতের অন্য যে কোন গ্রহের চাইতে আমাদের পৃথিবীর
ঘনত্ব অনেক বেশী। বিশাল নিকেল-লৌহ
স্তর আমাদের বিশাল ম্যাগনেটিক ফিল্ড-এর জন্য দায়ী। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডটিই
ভ্যান এলেন রেডিয়েশন বর্মটি তৈরী করেছে যা রেডিয়েশনজনিত গোলাবর্ষণ থেকে ভূপৃষ্ঠকে রক্ষা
করছে। এই বর্ম বা ঢালটি না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের
অস্তিত্ব অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতো।’
Faiyaz Al-Muhaimin
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন