যদিও প্রাচীন গ্রীসের
রুপকথায় এটি প্রচলিত ছিলো, তবুও এই তত্ত্ব নতুন করে উনিশ শতকে বিজ্ঞান জগতের সামনে আনা
হয়। বিবর্তন তত্ত্ব সর্বপ্রথম ফ্রেন্স জীববিজ্ঞানী
ল্যামার্ক তার Zoological
Philosophy (1809) নামক গ্রন্থে তুলে ধরেন। লামার্ক ভেবেছিলেন যে, প্রতিটি জীবের মধ্যেই
একটি জীবনী শক্তি কাজ করে যেটি তাদেরকে জটিল গঠনের দিকে বিবর্তনের জন্য চালিত করে। তিনি এটাও ভেবেছিলেন যে, জীবেরা তাদের জীবনকালে
অর্জিত গুণাবলি তাদের বংশধরে প্রবাহিত করতে পারে। এ ধরনের যুক্তি পেশ করার ক্ষেত্রে তিনি প্রস্তাবনা করেছিলেন যে জিরাফের লম্বা ঘাড়
বিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে তখন, যখন তাদের পূর্ববর্তী কোন খাটো ঘাড়ের প্রজাতি ঘাসে
খাবার খোঁজার পরিবর্তে গাছের পাতা খুঁজতে থাকে। কিন্তু লামার্কের এই বিবর্তনবাদী মডেল বংশানুক্রমিকতার জিনতত্ত্বীয় মডেল দ্বারা
বাতিল প্রমাণিত হয়েছে।
এখানে একটা প্রাসঙ্গিক
কৌতুক মনে পড়ে গেল। শিক্ষক ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন- পৃথিবীর সবচেয়ে
প্রাচীন প্রানী কোনটি। ছাত্র তৎক্ষণাৎ উত্তর
দিল- জেব্রা। শিক্ষক আবার জিজ্ঞাসা করলেন কেন? ছাত্রটি আবার বলল, স্যার পৃথিবীতে প্রথমে তো সব সাদা কালো ছিলো। জেব্রা তো এখনও সাদা কালো। তাই এটাই সবচেয়ে প্রাচীন প্রানী!!
বিংশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী
সময়ে DNA
এর গঠন আবিষ্কারের ফলে প্রকাশিত হয় যে, জীবিত বস্তুর কোষের নিউক্লিয়াস বিশেষ ধরণের জৈবিক সঙ্কেত ধারণ করে এবং এ তথ্য অন্য
কোন অর্জিত গুণ দ্বারা পরিবর্তনযোগ্য নয়। অন্য কথায় জিরাফের জীবনকালে জিরাফ যদি গাছের উপরের শাখাগুলোর দিকে ঘাড় লম্বা করতে
গিয়ে তার ঘাড়কে কিছুটা লম্বা করে ফেলতে সক্ষম হয়ও তবুও তা তার বংশধরে পৌছাবে না। সংক্ষেপে, লামার্কের তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার দ্বারা বাতিল
হয়ে গেছে এবং তা একটি ত্রুটিপূর্ণ ধারণা হিসেবে ইতিহাসে
রয়ে গেছে।
এর পরে ফাঁটা ঢাক
সারাই করতে আদা-জল খেয়ে নামেন প্রকৃতি বিজ্ঞানী
এবং দার্শনিক চার্লস রবার্ট ডারউইন। তার দেয়া তত্ত্বটি
সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় এবং এই তত্ত্বটি Darwinism বা ডারউইনের বিবর্তনবাদ
নামে পরিচিত।
ডারউইন ১৮৩১ সালে পাঁচ
বছরের জন্য সমুদ্র ভ্রমণে বের হন। এই ভ্রমণে তিনি বিভিন্ন
প্রজাতির জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে প্রচণ্ড প্রভাবিত হন, বিশেষ করে গালাপাগোস দ্বীপের Finch পাখির ঠোঁট দেখে। এই পাখি গুলোর বিভিন্ন রকমের ঠোঁট দেখে তিনি মনে করেন যে পরিবেশের সাথে অভিযোজনের
ফলাফল।
ডারউইন এগুলোকে গালাপাগোস
দীপপুঞ্জে দেখেছিলেন এবং তার তত্ত্বের প্রমাণ হিসেবে ধরেছিলেন। আসলে, পাখির ঠোটের এ বিভিন্নতার কারণ হল Genetic Variation কোন Macroevolution
নয়।
চার্লস ডারউইন তার
এই ভ্রমণ শেষে তিনি লন্ডনের একটি পশু মার্কেট পরিদর্শন করেন। তিনি এখানে দেখতে পান যে, ব্রিডাররা সংকরায়নের মাধ্যমে
নতুন চরিত্রের গরু উদ্ভাবন করছে।
এই সব অভিজ্ঞতা লাভের
পর তিনি ১৮৫৯ সালে তার একটি বই প্রকাশ করেন The Origin of Species নামে। এই বইয়ে তিনি তার মতবাদকে তুলে ধরেন। তিনি এখানে বলেন- সকল প্রজাতি একটি কমন পুর্বপুরুষ থেকে এসেছে। অবশ্য এই কমন পূর্বপুরুষটি কোথা থেকে এসেছে তার ব্যাখ্যা তিনি
দেননি।
মূল কথা হলো,
আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী বর্তমানে এটি প্রমাণিত, ডারউইনের বিবর্তনবাদ কেবল মনগড়া
কল্পকথা ব্যতীত আর কিছুই নয়। সম্প্রতি জর্জিয়ার
দামিনিসে প্রাপ্ত ১৮ লক্ষ বছরের পুরনো একটা মাথার খুলির উপর গবেষণা করে জানা গেছে যে,
এখন আমরা যেমন মানুষ, ১৮ লক্ষ বছর পূর্বেও সেরকম মানুষই ছিল। জিনগত পরিবর্তন হয়েছে মাত্র! ‘সায়েন্স’ সাময়িকীতে এটা প্রকাশিত হয়েছে।
বিবর্তনবাদ তত্ত্ব অনুযায়ী যেখানে প্রাণ স্রষ্টার ভুমিকা ছাড়াই স্বতস্ফূর্তভাবে
হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা, সেখানে স্রষ্টাকে আনাটা বাহুল্যতা। বিবর্তনবাদ মানুষকে
পশুর একটি উন্নত রূপ হিসেবেই দেখে থাকে। অপরদিকে ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, প্রথম মানুষ আদম (আ) স্রষ্টার সরাসরি সৃষ্টি। বিবর্তনবাদ অনুসারে
যে প্রাইমেট থেকে মানুষ এর সৃষ্টি তা একক কোন ব্যক্তি বা প্রাণী নয়, বিবর্তন ঘটার কথা একটি প্রাণীসমষ্টিতে। কিন্তু কুরআনের ভাষ্যমতে প্রাণী সমষ্টিকে
পাওয়া যায় না।
يَا أَيُّهَا
النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا
وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন
জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। (হুজরাত ১৩)
এছাড়া আদম (আ)-কে মাটি থেকে সরাসরি তৈরীর কথাই পাওয়া যায়, কিন্তু কোন চক্রের কথা পাওয়া যায় না।
إِنَّ مَثَلَ
عِيسَىٰ عِنْدَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ ۖ خَلَقَهُ
مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে
তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে
গেলেন।(ইমরান ৫৯)
আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে-
يَا أَيُّهَا
النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ
مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً ۚ
وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ ۚ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا
হে মানবসমাজ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো যিনি তোমাদেরকে একই আত্মা থেকে
সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দুজন থেকে বহু
নরনারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর তোমরা ভয় করো আল্লাহ্কে যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে দাবি কর। আর তোমরা মাতৃগর্ভকে
(অর্থাৎ জ্ঞাতিবন্ধন ছিন্ন করাকে) ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের ওপর তীক্ষ্ণ
দৃষ্টি রাখেন। (নিসা ১)
উপরোক্ত আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, আদম (আ) একক ব্যক্তি এবং তার মাধ্যমেই পৃথিবীতে
মানবযাত্রার সূচনা ঘটেছে।
সুতরং, কুরআন এবং বিজ্ঞান সম্পূর্ণরূপে সাদৃশ্যপূর্ণ। পক্ষান্তরে, ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিছক
রূপকথার গল্প বৈ অন্য কিছুই নয়। অত্যন্ত হাস্যকর ব্যাপার হলো, ডারউইনের বিবর্তনবাদই ক্রমে
বিবর্তিত হচ্ছে। বিবর্তনবাদের অসারতা সম্পর্কে ডারউইন নিজেই ধারণা করেছিলেন। কিন্তু, নিজেদেরকে
মুক্তমনা পরিচয় দানকারী এক শ্রেণির মানুষ বিবর্তনবাদকে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে পরিণত
করার জন্য নানান ধরণের যুক্তি দিয়ে বিভিন্ন ব্লগ এবং পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করে
চলেছে। তাদের জন্য কুরআনের চ্যালেঞ্জ হলো-
أَمْ
يَقُولُونَ افْتَرَاهُ ۖ قُلْ فَأْتُوا بِسُورَةٍ
مِثْلِهِ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ
صَادِقِين
মানুষ কি বলে যে, এটি বানিয়ে এনেছ? বলে দাও, তোমরা নিয়ে এসো একটিই সূরা, আর ডেকে নাও, যাদেরকে নিতে সক্ষম
হও আল্লাহ ব্যতীত, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। (ইউনুস ৩৮)
Faiyaz Al-Muhaimin
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন