অনেক ‘মুক্তমণা’ নামধারী নাস্তিক
বলে-কুরআনের সাথে পৌরাণিক কাহিনীর কোনো পার্থক্য নেই। রেফারেন্স হিসেবে তারা সূরা নাহল এবং সূরা নামলের কথা
উল্লেখ করে। অথচ, সূরা নামল (পিঁপড়া)-এ
পিঁপড়ার কথপোকথনের যে কাহিনী আল্লাহ বর্ণনা করেছেন তা নিছক কল্পনা নির্ভর নয়। আজকের আধুনিক বিজ্ঞান
কুরআনের তথ্যকে পরিপূর্ণরূপে সমর্থন দিয়েছে। একাবিংশ শতাব্দীতে এসে পিঁপড়ার মতো ক্ষুদ্র একটি প্রাণীর
উপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে-
১। পিঁপড়া
মানুষের মত মৃতদেহ দাফন করে।
২। তাদের মধ্যে উন্নতমানের শ্রমবিভাগ
আছে। রয়েছে-পরিচালক, তত্বাবধায়ক, শ্রমিক।
৩। তারা গল্পের
জন্য কোন কোন সময় এক সাথে বসে।
৪। নিজেদের
মধ্যে যোগাযোগের জন্য তাদের রয়েছে Advanced
Communication System.
৫। দ্রব্য বিনিময়ের জন্য তাদের বাজার
বসে।
৬। পিঁপড়ারা দীর্ঘ শীতকালের জন্য খাদ্য দ্রব্য গোলাজাত করে। খাদ্য শস্যের মুকুল বের হলে
এবং মুকুলিত অবস্থায় রেখে দিলে যদি শষ্যটি পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখনই তারা মুকুলটির গোড়া কেটে দেয়। তাদের গোলাজাতকৃত শস্যদানা যদি বৃষ্টির কারণে ভিজে যায়, তখন তারা এটাকে রোদে নিয়ে শুকায় এবং শুকানোর পর পুনরায় ভেতরে
নিয়ে আসে। মনে হয় তারা এটা জানে যে,আর্দ্যতার কারণে শষ্যদানায় মুকুল বের হতে পারে। ফলে শষ্য দানাটি পঁচে যেতে পারে।
এখন দেখা যাক, কুরআনের
পিপীলিকাদের সম্পর্কে আল্লাহ কী বলেছেন।
وَحُشِرَ
لِسُلَيْمَانَ جُنُودُهُ مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ وَالطَّيْرِ فَهُمْ يُوزَعُونَ
حَتَّىٰ إِذَا أَتَوْا عَلَىٰ وَادِ النَّمْلِ قَالَتْ نَمْلَةٌ يَا أَيُّهَا النَّمْلُ
ادْخُلُوا مَسَاكِنَكُمْ لَا يَحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمَانُ وَجُنُودُهُ وَهُمْ لَا
يَشْعُرُونَ
সুলায়মানের সামনে তার সেনাবাহিনীকে
সমবেত করা হল। জ্বিন-মানুষ
ও পক্ষীকুলকে, অতঃপর
তাদেরকে বিভিন্ন ব্যূহে বিভক্ত করা হল। যখন তারা পিপীলিকা অধ্যূষিত উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক (স্ত্রী) পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের ঘরগুলিতে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট
করে ফেলবে। (নামল
১৭-১৮)
দ্বিতীয়
আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে পিঁপড়াদের সম্পর্কে কতগুলো তথ্য দিয়েছেন। ‘একটি পিপীলিকা
(স্ত্রী) বলেছিল’ -পিঁপড়া এখানে স্ত্রী লিঙ্গ, পুরুষ
লিঙ্গ নয়। বাসার বাইরে স্ত্রী পিঁপড়া থাকে, পুরুষ পিঁপড়া নয়। আমরা এখন জানি স্ত্রী পিঁপড়ারা কর্মী পিঁপড়া, পুরুষরা শুধুই প্রজনন কাজের জন্য বেঁচে থাকে।
হে পিপীলিকার
দল– বহুবচন, যার অর্থ একটি স্ত্রী পিঁপড়া এক সাথে অন্য
একাধিক পিঁপড়াদেরকে নির্দেশ দিতে পারে। পিঁপড়া ফেরোমোন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থের প্রতি সংবেদনশীল
এবং এর দ্বারা তারা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করে। এছাড়াও কিছু প্রজাতির পিঁপড়ারা নিয়ারফিল্ড শব্দ তৈরি
করে আশেপাশের পিঁপড়াদের সাথে যোগাযোগ করে। এভাবে একটি পিঁপড়া একই সাথে একাধিক পিঁপড়াকে সংকেত দিতে পারে। এই আয়াতে আল্লাহ “বলেছিল” ব্যবহার করেছেন, একই শব্দ মানুষের কথা বলার বেলায়ও ব্যবহার করা হয়। যার অর্থ মানুষ যেমন শব্দ দিয়ে
কথা বলে, সে রকম পিঁপড়াও শব্দ ব্যবহার করে যোগাযোগ করে, যা বিজ্ঞানীরা মাত্র কয়েক বছর আগে আবিস্কার করেছেন। কয়েক বছর আগেও বিজ্ঞানীরা মনে
করতেন পিঁপড়া কোন শব্দ করতে পারেন না এবং তাদের শব্দ শোনার ক্ষমতা নেই।
তোমাদের ঘরগুলোতে প্রবেশ কর-এই প্রত্যয় দ্বারা বোঝায়, পিঁপড়াদের একাধিক ঘর রয়েছে। একটি পিঁপড়ার
বাসা অনেকগুলো সংযুক্ত ঘর এবং নির্দিষ্ট পিঁপড়া নির্দিষ্ট ঘরে থাকে। স্ত্রী
পিঁপড়া জানে পিঁপড়ারা যদি বাসায় ঢুকে পড়ে, তাহলে তাদের কোন ক্ষতি হবে না। পিঁপড়ার
বাসা আর্কিটেক্টের জন্য এক বিস্ময় এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অসাধারণ নিদর্শন।
স্ত্রী পিঁপড়াটি নবী সুলায়মানকে চিনতে পেরেছিল। যার অর্থ
স্ত্রী পিঁপড়া অনেক মানুষের মধ্যে কোন একজনকে চিনতে পারে। মানুষের
গা থেকেও ফেরোমোন বের হয়। ধারণা করা হয় স্ত্রী পিঁপড়া হয়ত নবী সুলায়মানের
গা থেকে বের হওয়া ফেরোমোন সিগনেচার দিয়ে তাকে চিনতে পেরেছিল, যেভাবে কুকুর প্রতিটি মানুষকে
চিনতে পারে। এছাড়াও এখানে লক্ষণীয় যে, স্ত্রী পিঁপড়া আগাম বিপদ অনুধাবন করে সংকেত
দিতে পারে। অর্থাৎ তাদের এতটুকু বুদ্ধিমত্তা আছে যে তারা বিপদ আগে থেকেই
আঁচ করতে পারে।
“এবং তার বাহিনী”– এই কথাটি দ্বারা বোঝা
যায়, পিঁপড়া
বুঝতে পেরেছিল যে একটি বাহিনী আসছে। পিঁপড়ারা তাদের পা দিয়ে মাটিতে কম্পন অনুভব করতে
পারে। একারণে তারা দূরে থেকেই বুঝতে পারে কেউ তাদের দিকে আসছে কিনা। একটি বাহিনী
মাটিতে ব্যাপক কম্পন তৈরি করবে।
বিজ্ঞানীদের জন্য এই আয়াতে আল্লাহ অনেকগুলো ইঙ্গিত দিয়ে
রেখেছেন।
প্রথমত, বাসার বাইরে যে পিঁপড়ারা থাকে তারা সবাই স্ত্রী
পিঁপড়া। পুরুষ পিঁপড়া সবসময় বাসার ভিতরে থাকে। সমস্ত
কর্মী পিঁপড়া স্ত্রী।
দ্বিতীয়ত, একটি পিঁপড়া হাজার হাজার পিঁপড়ার সাথে যোগাযোগ
করে রাসায়নিক পদার্থ এবং গন্ধ দিয়ে, যা একটি অত্যন্ত সফল মাধ্যম, নির্ভরযোগ্যভাবে তথ্য সম্প্রচার করার জন্য।
তৃতীয়ত, এককভাবে প্রতিটি পিঁপড়ার বুদ্ধি অল্প, কিন্তু হাজার হাজার পিঁপড়া সম্মিলিত
ভাবে উচ্চতর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয় যাকে ‘সোয়ার্ম
ইন্টেলিজেন্স’ বলে।
চতুর্থত, পিঁপড়ার কোন সামাজিক শ্রেণী
বিন্যাস নেই। তাদের কোন দলনেতা নেই। কিভাবে
হাজার হাজার পিঁপড়া কোন দলনেতা, রাজা বা রাণী পিঁপড়ার নিয়ন্ত্রণ ছাড়া প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজ সুশৃঙ্খলভাবে করে যায়, তা আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টির একটি নমুনা।
Faiyaz Al Muhaimin