বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা)
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কেয়ামত
দিবসের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে যে ব্যক্তি
নিজ চোখে দেখার মত করে জানতে চায়, সে যেন এ সূরা তিনটি পড়ে নেয়। সূরাগুলো হচ্ছে-তাকভীর, ইনফিতার এবং ইনশিকাক।
আমরা সূরা তাকভীরের প্রথম আয়াতের
আলোকে কিয়ামতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করবো। আয়াতটি বলা
হয়েছে-
إِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَت অর্থ-যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে।
এখানে সূর্যের রূপান্তরের
ধারাকে নয়, বরং কেয়ামতের পূর্বক্ষণে সূর্যের জ্যোতিহীন
অর্থাৎ জ্যোতি হ্রাস পাওয়া জনিত বিশেষ অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সূর্যটা নিভে যাবেনা, বরং আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু তাপ ও আলো বিকিরণ করা দরকার সূর্যটা তখনও তা করবে। সূর্যের পারমানবিক
জ্বালানী যে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এবং প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে তা তো আজ অজানা নয়। এটিও যেমন একটি কারন, তেমনি Maunder Minimum সম্পর্কে যদি ধারনা থাকে তাহলে প্রকৃত বিষয়টি
বোঝা সহজ হবে।
এই আয়াতে সূর্যের নিভে
যাবার সাথে কিয়ামতের সম্পর্কের কথা বলা হয়নি, বরং ‘যখন’ শব্দটি দ্বারা কিয়ামতের
বেশ কিছু সময় পূর্বের কথা বলা হয়েছে এবং সূর্যের জ্যোতিহীন অর্থাৎ জ্যোতি হ্রাস পাওয়া
জনিত বিশেষ অবস্থার কথা বোঝানো হয়েছে। মূলত জ্যোতির হার
কমে আসার দিকেই দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে। আর আলো কমে আসার সাথে সাথে সূর্যের
তাপ ও আলোক বিকিরণের হার কমে আসারও একটা সম্পর্ক আছে। সুতরাং এখানে সূর্যের জ্যোতিহীন বা জ্যোতি হ্রাস প্রাপ্তির
সময় অর্থাৎ সূর্যের তাপ ও আলোক বিকিরণের পরিমান কমে আসার
সময় বলতে sunspots (সূর্যকলঙ্ক)-এর স্বল্পতার বা অনুপস্থিতির কারণে solar radiation এর ঘাটতির (Deficiency of Solar Irradiance) সময়কেই বোঝানো হয়েছে।
সূর্যের পারমানবিক
জ্বালানী যে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এবং প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে তা আজ অজানা নয়। সূর্যের দীপ্তি বা ঔজ্জ্বল্যের পরিবর্তন হতে পারে এবং সূর্য কলঙ্কের অনুপস্থিতি ও উপস্থিতির উপর তা নির্ভর করে। নিচে
উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত কিছু তথ্য দেয়া হল-
The Sun is currently
behaving unexpectedly in a number of ways. It is in the midst of an unusual
sunspot minimum, lasting far longer and with a higher percentage of spotless
days than normal, since May 2008.
It is measurably
dimming; its output has dropped 0.02% at visible wavelengths and 6% at EUV
wavelengths in comparison with the levels at the last solar minimum. Over the
last two decades, the solar wind’s speed has dropped by 3%, its temperature by
13%, and its density by 20%. Its magnetic field is at less than half strength
compared to the minimum of 22 years ago. The entire heliosphere, which fills
the Solar System, has shrunk as a result, resulting in an increase in the level
of cosmic radiation striking the Earth and its atmosphere.
সূর্যের প্রচণ্ড উত্তাপের
কারনে এর মধ্যে অবস্থিত সকল পদার্থই গ্যাস ও প্লাজমার আকারে থাকে। মহাকর্ষের প্রভাবে এই গ্যাস ও প্লাজমা ক্রমাগত আবর্তিত হচ্ছে। দেখা গেছে যে, এই আবর্তন সূর্যের
অক্ষাংশ অপেক্ষা নিরক্ষবৃত্ত বা বিষুবরেখা বরাবর দ্রুত গতিতে হয়। আবর্তনের গতির এই পার্থক্যের কারনে সূর্যের পৃষ্ঠদেশ থেকে চুম্বকীয়
ফাঁস সবেগে বিদীর্ন হতে থাকে এবং সূর্য-কলঙ্ক গঠনে মুখ্য ভূমিকা
রাখে। প্রায় এগার বছর পর পর সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রের
মেরুদ্বয় পরস্পর উল্টে গিয়ে দিক পরিবর্তন করে। উত্তর-মেরু, এগার বছর পর দক্ষিণ-মেরু। আবার দক্ষিণ-মেরু, এগার বছর পর উত্তর-মেরু
হতে থাকে।
সূর্য কলঙ্কের উপস্থিতিতে
পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। সূর্য-কলঙ্কের উপস্থিতি
বৃদ্ধি পাওয়ায় ১০০০-১৩০০ সাল পর্যন্ত সময়কে “Medieval maximum” বলা হয়ে থাকে। এ সময় সূর্যের ঔজ্জ্বল বৃদ্ধির সাথে সাথে
তাপ ও আলো বিকিরনের হারও বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর উষ্ণতাও স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গিয়েছিল। অপরদিকে গবেষণায় দেখা গেছে ১৬৪৫ সাল থেকে পরবর্তী ৭৫ বছর পর্যন্ত
সূর্যে সূর্য-কলঙ্ক প্রায় ছিল না বললেই চলে। এই সময় টিকে “Maunder Minimum” এবং একই কারনে ১৪০০-১৫১০
সাল পর্যন্ত “Sporer minimum” বলাহয়। এ সময় সূর্যের ঔজ্জ্বল্য হ্রাস পাবার সাথে সাথে
তাপ ও আলো বিকিরনের হারও হ্রাস পেয়েছিল। পৃথিবীর উষ্ণতাও স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গিয়েছিল। তাই এই সময়কে little ice age বলা হয়ে থাকে।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে, “Maunder Maximum” অপেক্ষা “Maunder
Minimum” এর সময়ই প্রকৃতির উপর বিভিন্ন দিক থেকে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব
পড়ে। নাসার গবেষণায় দেখা
গেছে ১৯৯০ সালের মধ্যভাগ থেকে সৌরবায়ুর চাপ প্রায় ২০% কমে এসেছে। নাসার আরো এক গবেষণামতে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা
হলো-১৯৯৬ সালের “solar minimum” এর সময় থেকে সূর্যের
ওজ্জ্বল্য প্রায় ০.০২% হ্রাস পেয়েছে।
যেহেতু “Maunder Maximum” ও “Maunder Minimum” ঘুরে ঘুরে আসে এবং পূর্ববর্তী “Maunder Minimum” অপেক্ষা পরবর্তী “Maunder Minimum” এর Sunspot অর্থাৎ সৌর-কলঙ্কের কর্মশীলতা হ্রাস পাওয়ার আভাস মিলেছে। তাই এই আয়াতে “যখন” শব্দটি দ্বারা সূর্যের লাল-দানব বা শ্বেত-বামন হওয়ার সময় পর্যন্ত
অপেক্ষা নয়। বরং বর্তমান এই হলুদ-সূর্যটা হলুদ থাকাকালীন
অবস্থায় ভবিষ্যতের কোন এক “Maunder Minimum” এর সময়কালীন একটি নির্দিষ্ট
দিনে কেয়ামত সংঘটিত হবার ইংগিত দেয়া হয়েছে। কেয়ামত সংঘটনের সেই নির্দিষ্ট ক্ষণটিকে সম্পূর্ণ
সঠিকভাবে আবিষ্কার করা অসম্ভব। তথাপি এর নিকটবর্তী
কিছু পূর্ব লক্ষণ জানানোর জন্য মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর কিতাবে বেশ কিছু ইঙ্গিত
(টেলিগ্রাফিক ম্যাসেজ) দিয়েছেন।
কুরআনে কিয়ামতের
আগে অন্যান্য অনেক নক্ষত্র শ্বেতবামনে পরিণত হবার ইঙ্গিত থাকলেও সরাসরি সূর্যের শ্বেতবামনে পরিণত
হবার কোন ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। বরং সূর্যটা জ্যোতিহীন হবে অর্থাৎ এর জ্যোতির মাত্রা শুধুমাত্র
হ্রাস পেতে থাকবে এমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এই আয়াতে কিয়ামত সংঘটনের সময় সূর্যের জ্যোতিহীন হওয়া অর্থাৎ
জ্যোতির মাত্রা হ্রাস পাওয়ার সময়ের যে ইংগিত দেয়া হয়েছে তার সাথে সূর্যের একেবারে
নিভে যাওয়া বা শ্বেত-বামনে পরিণত হবার যে কোন সম্পর্ক নেই তা তো নিশ্চয় এবার পরিষ্কার
হয়েছে। সুতরাং কেয়ামতের জন্য সূর্যের লাল-দানব বা
শ্বেত-বামন হওয়ার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা নয়, বরং বর্তমান এই হলুদ-সূর্যটা
হলুদ থাকাকালীন অবস্থায় এবং মানবজাতির উপস্থিতিতে ভবিষ্যতের কোন এক “Maunder Minimum” এর সময়কালীন আল্লাহ তা’আলার নির্ধারিত একটি
দিনে কেয়ামত সংঘটিত হতে পারে!
Faiyaz Al Muhaimin
অই হালার পুত
উত্তরমুছুনসূর্য যে বড় হয়ে যাবে,এ কথা কে বলবে?