ডা. ফ্রাঙ্ক প্রেস সর্বপ্রথম বলেছিলেন, পর্বতের অত্যন্ত গভীর
শিকর রয়েছে পৃথিবীর অভ্যন্তরে। সত্যিকার অর্থে পর্বত
একটি ভাসমান বরফ বা খুঁটির মতো যার ৯০% থাকে পানির নীচে ও ১০% থাকে উপরে। কুরআন বলছে-
وَجَعَلْنَا
فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَنْ تَمِيدَ بِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيهَا فِجَاجًا سُبُلًا
لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ
“আর আমি জমিনের উপর
সুদৃঢ় পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি যাতে তাদের নিয়ে জমিন ঝুঁকে না পড়ে এবং তাতে প্রশস্ত পথ রেখেছি, যাতে তারা পথ প্রাপ্ত
হয়। (আম্বিয়া ৩১)
ভূপৃষ্ঠের কম্পন প্রতিরোধে পর্বতমালার যে ভূমিকা রয়েছে সেটি আমরা আয়াতটিতে খেয়াল করেছি। আল কুরআন যে সময়ে নাযিল হয়, তখন কেউ এ ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত ছিল না।
ভূতত্ববিদগনের তথ্যানুসারে, যে ভারী ভারী বৃহদাকার প্লেটগুলো পৃথিবীর উপরের শক্ত স্তর সৃষ্টি করে, সেগুলোর নড়াচড়া আর সংঘর্ষের ফলেই উৎপত্তি ঘটে পর্বতমালাসমূহের। দুটি প্লেট যখন পরস্পর
ধাক্কা খায় তখন শক্তিশালী প্লেটটি অন্য প্লেটের নীচে গড়িয়ে চলে যায়। তখন উপরের প্লেটটি
বেঁকে গিয়ে পর্বত ও উঁচু উচুঁ জায়গার জন্ম দেয়। নিম্নের স্তরটি ভূমির নীচে অগ্রসর হয়ে ভেতরের
দিকে এক গভীর প্রসারণের জন্ম দেয়। এর মানে পর্বতের রয়েছে দুটো অংশ, উপরে সবার জন্য দর্শনযোগ্য একটি অংশ যেমন থাকে, তেমনি নীচের দিকে গভীরে এর সমপরিমাণ বিস্তৃতি রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আধুনিক ভূ-বিজ্ঞানের প্রাপ্ত তথ্যসমূহের মাধ্যমে
মাত্র কিছুদিন আগে বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
পর্বতসমূহ ভূমির উপরে ও নিম্নদেশে বিস্তৃত হয়ে পেরেকের ন্যায় ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন
প্লেটকে দৃঢ়ভাবে আটকে ধরে রাখে। ভূ-পৃষ্ঠের উপরের অংশ বা ক্রাস্ট অবিরাম গতিশীল প্লেট নিয়ে
গঠিত। পর্বতগুলোর দৃঢ়ভাবে ধরে রাখার বৈশিষ্ট্যটিই ভূপৃষ্ঠের উপরের স্তরকে ধরে রাখে ,কম্পন প্রতিরোধ করে অনেকাংশে। অথচ এই ক্রাস্টের রয়েছে গতিশীল গঠন। পাহাড়ের গঠন সম্পর্কে বিজ্ঞানের
দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে-মহাদেশগুলোর যে অঞ্চলসমূহ
পুরু, যেখানে সারি সারি পর্বতমালা
রয়েছে, সেস্থানে ভূ-পৃষ্ঠের শক্ত স্তর বা ক্রাস্ট ম্যান্টলের
ভেতরে গভীরে ঢুকে যায়।
কুরআনের একটি
আয়াতে পাহাড়কে সরাসরি পেরেকের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
وَالْجِبَالَ
أَوْتَادًا أَلَمْ نَجْعَلِ
الْأَرْضَ مِهَادًا
আমি কি জমিনকে করিনি বিছানা সদৃশ এবং পাহাড়সমূহকে পেরেক স্বরূপ ? (আন নাবা ৬-৭)
অন্য কথায়, পর্বতমালাগুলো
ভূপৃষ্ঠের উপরে ও নীচে গভীরে বর্ধিত হয়ে প্লেটগুলোকে তাদেরই সন্ধি বা মিলনস্থলে স্থিরভাবে ধরে রাখে। এভাবে তারা পৃথিবীর
উপরের স্তর বা ক্রাস্টকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে আর ম্যাগমা স্তরের উপরে কিংবা প্লেটগুলোর
মাঝে ক্রাস্ট এর ভেসে যাওয়াকে প্রতিরোধ করে। সংক্ষেপে আমরা পর্বতমালাকে লৌহ পেরেকের সঙ্গে তুলনা করতে পারি
যেগুলো কিনা কাঠের বিভিন্ন টুকরাকে একত্রে আটকে রাখে। পর্বতমালার এরূপ সেটে বা এটে ধরার কাজটিকে আধুনিক বিজ্ঞান Isostacy শব্দ দ্বারা চিহ্নিত করেছে। Isostacy কী? Wikipedia প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, Isostacy হল-
The equilibrium that exists between parts of the earth's
crust, which behaves as if it consists of blocks floating on the underlying
mantle, rising if material (such as an ice cap) is removed and sinking if
material is deposited.
পর্বতমালার এই গুরত্বপূর্ণ কাজটি বহু শতাব্দী পূর্বে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছিল
যা কিনা আজ আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা উন্মোচিত হয়েছে। এটি আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিতে অত্যন্ত বিজ্ঞতার একটি উদাহরণ মাত্র।
পৃথিবীতে এমন কোন পাহাড় নেই যার ভূ-পৃষ্টের অভ্যন্তরে শিকড় নেই। বরং পাহাড়ের দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে প্রায় তার
সাড়ে চারগুণ লম্বা অংশ মাটির অভ্যন্তরে রয়েছে। প্রকৃত পক্ষে সেগুলো পেরেকের ন্যায়। তাঁবু ঠিক রাখার জন্য বালির মধ্যে যেভাবে
পেরেক ব্যবহার হয় ঠিক তেমনি ভাবে পৃথিবীকে ঠিক ও স্থিরতা রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে
পর্বতমালা।
একজন জাপানি ভূ-তত্ত্ববিদকে (যিনি পূর্বে একজন নাস্তিক ছিলেন)
প্রশ্ন করা হয়েছিল, আচ্ছা জনাব বলুনতো, পাহাড়গুলো কি দৃঢ়ভাবে মাটির সাথে স্থাপিত? নাকি ভাসমান? মহা দেশীয় ও মহাসাগরীয় পাহাড়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কি? আমরা প্রত্যক্ষ করেছি যে, মহাদেশীয় পাহাড় মূলত গঠিত হয় গাদ দ্বারা। পক্ষান্তরে মহাসাগরীয়
পাহাড় গঠিত হয় আগ্নেয়গিরি থেকে উৎপন্ন শিলা দ্বারা। আর মহাদেশীয় পাহাড় সংকোচন শক্তির দ্বারা গঠিত
হয়। কিন্তু মহাসাগরীয় পাহাড় গঠিত হয় প্রসারণ শক্তি দ্বারা। আবার মহাদেশীয় পাহাড়
হালকা উপাদান দ্বারা গঠিত। কিন্তু গাঠনিক
উপাদান হালকা হলেও, বস্তুত ইহা অত্যন্ত ভারী এবং
উত্তপ্ত। আর পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, উভয় পাহাড়ই ভার বহন করার কাজ করে চলছে। কুরআনে বলা হয়েছে যে, আমি কি পাহাড়কে পেরেক স্বরূপ স্থাপন করিনি? সুতরাং উভয় পাহাড়ই পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করার কাজ করে চলছে। এ বিষয়টিতে আপনার মতামত
কি?
জবাবে বিজ্ঞানী ভূমিতে অবস্থিত এবং সমুদ্র বক্ষে দণ্ডায়মান সকল পাহাড়ের বর্ণনা দিলেন। আর তিনি এও বললেন যে, সকল পাহাড়ই পেরেকের আকৃতি বিশিষ্ট। যেন ফুটো জিনিসকে আটকে রাখার কাজ করছে। এবং ভূপৃষ্ঠ ও সাগরের
ভারসাম্য রক্ষা করে চলছে।
এই তথ্য আমরা জানলাম মাত্র কিছুদিন আগেই। অথচ এ মর্মে আল কুরআন সুস্পষ্টভাবে কথা বলেছে সাড়ে ১৪০০ বছর পূর্বে।
বিজ্ঞানী অবাক
হলেন। প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কে
যখন মানুষের ধারণা ছিল খুবই দুর্বল। এত যান্ত্রিক উপাদান যখন ছিল না, বই পুস্তক ছিল না, আধুনিক ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানীদের লিখিত কোন দলিলও
ছিল না, আবিষ্কার ছিল না। মুহাম্মদ (সা) নিরক্ষর মানুষ হয়ে কি করে তখন
এই তাত্ত্বিক তথ্য প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন যা আজ একাবিংশ
শতাব্দীতে এসে তিলে তিলে বাস্তবায়িত হচ্ছে!
উক্ত ভূতত্ত্ববিদ ভাবলেন, সমগ্র বিজ্ঞান যাকে
শাশ্বত বলে মেনে নিচ্ছে, নিশ্চয়ই তা কোন মানবীয় জ্ঞান নয়। বরং কোন অসীম ও ঐশী শক্তির পক্ষ থেকে সমাগত
হয়েছে। নিঃসন্দেহে মুহাম্মদ (সা)-এর প্রচারিত জ্ঞান চিরন্তন সত্য। আল কুরআনের ব্যাপারে তাঁর শেষ
মন্তব্য ছিল এটিই-‘আধুনিক বিজ্ঞানের তথ্য সমৃদ্ধ গ্রন্থ আল কুরআন চিরন্তন সত্য’।
Faiyaz Al Muhaimin
জাপানে ১০০+ পেরেক আছে। তবুও জাপানে এত ভুমিকম্পন কেন?
উত্তরমুছুনপাহাড় থাকলে যে ভূমিকম্প হবে না তা আপনাকে কে বলেছে? ভূমিকম্প অনেক কারনেই হয়ে থাকে। মাটির নিচে গলিত লাভা,ভূমি ধ্বস,পাহাড় ধ্বস,টেকটনিক প্লেটের কম্পন ইত্যাদি। কোরানে কি কোথাও বলা আছে যে পাহাড় থাকলে ভূমিকম্প হবেনা? কারও যদি বেসিক নলেজ না থাকে তাহলে সে এমন প্রশ্ন করতে পারে।
মুছুনআমি এ উত্তরের সাথে এক মত
উত্তরমুছুন