শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

মেঘের ন্যায় গতিশীল পর্বতমালা



যাদের ন্যূনতম বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা রয়েছে, তাদের সকলেই জানেন, মহাবিশ্বের কোন বস্তুকণা পরম স্থিতিশীল নয়সন্দেহাতীতভাবে তাই আমাদের পৃথিবী গতিশীল পৃথিবীর উপরস্থ সমস্ত বস্তুই গতিশীল খুব সাধারণ কথা, তাই না?
এবার সাড়ে ১৪০০ বছর পূর্বের পৃথিবীর একজন বাসিন্দা হিসেবে নিজেকে কল্পনা করে বলুন তো, মহাবিশ্ব সম্পর্কিত এই ধারণা আপনার থাকতো কিনা? তা আবার এমন একটি সমাজে আপনার বাস যেখানকার অধিকাংশ মানুষই উম্মি, বর্বর!
হ্যাঁ, এটাই সত্যি! আপনার পক্ষে মহাবিশ্বের গতিশীলতা সম্পর্কে এই জ্ঞানার্জন করা তখন মোটে সম্ভব ছিল না কিন্তু বিজ্ঞানময় কুরআনে এই গতিশীলতার ধারণা রয়েছে! পাহাড়ের গতিময়তা দিয়েই আল্লাহ সেদিকে ইঙ্গিত করেছেন

সম্প্রতি আধুনিক ভূ-বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে-
পৃথিবীর উপরিস্তর যাকে জ্যুলজিক্যাল ভাষায় প্রকাশ করা হয় Crust বা ঝুটিঁ হিসেবে, যার উপরে পর্বতসমূহ অবস্থিত, সে স্তরের (Crust) নড়াচড়াই পর্বতমালার গতিশীলতার কারণ নীচে অধিকতর পুর আরেকটি স্তর রয়েছে যাকে বলা হয় ম্যান্টল ম্যান্টলের উপরে ভাসমান রয়েছে এই উপরিস্তরটি (Crust), যেমন পানির উপরে বরফ
-M. J. Selby, Earth's Changing Surface, (Oxford: Clarendon Press, 1985)

এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ, যখন জার্মান বিজ্ঞানী Alfred Wegner  ইতিহাসে সর্বপ্রথম প্রস্তাব করেন যে, প্রথম যখন পৃথিবীর সৃষ্টি হয় তখন মহাদেশগুলো একত্রে সংযুক্ত অবস্থায় ছিলঅর্থাৎ এশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এন্টার্কটিকা সমস্ত মহাদেশ পরষ্পর সংযুক্ত ছিলকিন্তু এরপর এরা ভেসে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যায় এবং ইঞ্চি ইঞ্চি স্থান পরিবর্তন করে পরস্পর হতে পৃথক হয়ে যায়একাবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি, একেকটি মহাদেশ আরেকটি হতে হাজার হাজার কিলোমিটার দুরে সরে গেছে যা ঘটতে সময় নিয়েছে কোটি বছরেরও বেশি

Wegner এর মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পর ১৯৮০ এর দশকে ভূ-তত্ত্ববিদগণ Wegner এর এই প্রস্তাবটি সঠিক ছিল বলে বুঝতে পারেন১৯১৫ সালে Wegner একটি আর্টিকলে নির্দেশ করেন যে, প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর আগে ভুপৃষ্ঠের স্থলভাগসমূহ একসঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় ছিলআর এই বৃহত্তম স্থলভাগটি পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে ছিল Pangaea নামেপ্রায় ১৮০ মিলিয়ন বছর পূর্বে Pangaea দুটি ভাগে ভাগ হয়ে দুদিকে ভেসে চলে যায়এদের মাঝে Gondwana নামে বৃহৎ একটি মহাদেশ ছিল, যাতে বিদ্যমান ছিল আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়া, এন্টার্টিকা আর ইন্ডিয়াদ্বিতীয় অংশটি ছিল Laurasia নামে, যেথায় অবস্থিত ছিল ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা আর ইন্ডিয়া বাদে এশিয়া মহাদেশএই পৃথকীকরনের পর ১৫০ মিলিয়ন বছর ধরে Gondwana আর Laurasia ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে আলাদা হয়ে যায়
(Sheets, Gardner and Howe, General Science)

Pangaea বিভক্তির পর সৃষ্ট এ মহাদেশগুলো ভূপৃষ্ঠের উপর অবিরাম সরে যাচ্ছে প্রতি বছরে কয়েক সেন্টিমিটার করেইতিমধ্যে পৃথিবীর স্থলভাগ আর সমুদ্রের অনুপাতও বদলে গিয়েছেবিংশ শতাব্দীর গড়ার দিকে চালানো গবেষণায় উদঘাটিত ভূপৃষ্ঠের কঠিন আবরণ ক্রাস্ট এর নড়াচড়া বিজ্ঞানীগণ নিম্নরূপে ব্যাখ্যা করেন-
Crust আর Mantle এর সর্ব উপরিস্থ স্তরটি প্রায় ১০০ কিলোমিটার পুরত্ব নিয়ে বিভিন্ন খন্ডে বিভক্ত হয় যাদের Plate বলা হয়ে থাকেছয়টি বড় বড় আর কয়েকটি ছোট খাট প্লেট বিদ্যমান রয়েছে এখানেPlate Tectonics নামক থিওরী অনুসারে এই প্লেটগুলো তাদের সঙ্গে মহাদেশ আর সমুদ্রের তলভাগ নিয়ে ভূপৃষ্ঠে নড়ে চড়ে ঘুরে বেড়ায়পরিমাপ করে দেখা গেছে যে, মহাদেশগুলোর এই গতি বছরে প্রায় ১-৫ সেন্টিমিটারপ্লেটগুলো যেহেতু অবিরত চলমান রয়েছে সেহেতু পৃথিবীর ভূগোলে ধীর গতির পরিবর্তন হবেদৃষ্টান্তসরূপ প্রতি বছর আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশ একটু একটু সরে যাচ্ছে‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪‪ প্রসঙ্গত কুরআনের একটি আয়াত উল্লেখ করা যাক সূরা নামলের ৮৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন-
وَتَرَى الْجِبَالَ تَحْسَبُهَا جَامِدَةً وَهِيَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ ۚ صُنْعَ اللَّهِ الَّذِي أَتْقَنَ كُلَّ شَيْءٍ ۚ إِنَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَفْعَلُونَ
আর তুমি পর্বতসমূহকে দেখে অটল-অচল মনে কর, অথচ এগুলো সেদিন মেঘরাশির ন্যায় চলমান হবেএ হল আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্য, যিনি সবকিছুকে করেছেন সুষম-সুসংহততোমরা যা কিছু করছ, তিনি তা সম্যক অবগত আছেন

এখানে উল্লেখ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট হলো-আয়াতটিতে আল্লাহ তাআলা পর্বতমালার নড়াচড়াকে চলমান বা প্রবাহিত হওয়া হিসেবে উল্লেখ করেছেনআজ আধুনিক বিজ্ঞানীগণও এই গতির জন্য মহাদেশের প্রবাহ (continental drift) শব্দটি ব্যবহার করছেন সন্দেহাতীতভাবে এটি কুরআনের একটি অলৌকিকত্ব

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন