কুরআনে সূরা নাহল (মৌমাছি) নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এর কারণ কি? কুরআন তো পৌরাণিক
কাহিনীর মতো নয়! তবে, ক্ষুদ্র প্রাণীর দৃষ্টান্ত কুরআনে কেন দেয়া হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাব
আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের কাছে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।
মৌমাছি থেকে প্রাপ্ত মধুর চিকিৎসা বৈশিষ্ট্য এবং পচন প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে
আজ আমরা জানি। রাশিয়ানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঘা শুকানোর জন্য মধু ব্যবহার করত। ক্ষত স্থানে আর্দ্রতা
থাকে যা থেকে সামান্য কোন টিস্যুই অব্যাহতি লাভ করে। মধুর ঘনত্বের কারণে ক্ষতস্থানে কোন ব্যাকটেরিয়া
বা ছত্রাক জন্মাতে পারে না।
ইংল্যান্ডের এক নার্সিং হোমে ২২ জন দুরারোগ্য বক্ষ ব্যাধি ও এ্যাজেইমার্স রোগীর
নাটকীয় উন্নতি হয়। সন্যাসিনী সিস্টার
ক্যারোল মৌচাকে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকল্পে মৌমাছির পেট থেকে উৎপন্ন propolis
নামক একটি উপাদান ব্যবহার করায় ঐ রোগীদের উন্নতি হয়।
কেউ যদি বিশেষ কোন গাছের ফলের এলার্জি রোগে ভোগে, তাহলে তাকে ঐ গাছ থেকে আহরিত মধু পান করালে, তার এলার্জি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এসব তথ্য আধুনিক
বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে শত বছরও হয়নি। অথচ, চৌদ্দশত বছর পূর্বে আল্লাহ কুরআনে বলেছিলেন-
يَخْرُجُ مِنْ بُطُونِهَا
شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ ۗ
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে
রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (নাহল ৬৯)
মধু নিঃসন্দেহে উত্তম ও উপকারী পানীয়। আল্লাহর আদেশে বিশেষ কৌশলে মধু উৎপাদনকারী মৌমাছিও আল্লাহর
এক প্রিয় সৃষ্টি। আমরা যদি মধুর মূল উপাদানগুলোর প্রতি লক্ষ করি, যার জন্য আল্লাহ এটাকে বিশেষত্ব দিয়েছেন এবং যার জন্য আল্লাহ
রাব্বুল আলামিন মধুকে মানুষের শেফা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, তা হলো-আমরা দেখতে পাই, মধুতে রয়েছে শ্যুগার, যার মিষ্টত্ব, কৃত্রিমভাবে প্রস্তুতকৃত শ্যুগারের চেয়ে অনেক
গুণ বেশি। মধুতে প্রায় ১৫ প্রকার শ্যুগার রয়েছে। যেমন- গ্লুকোজ, সুকরোজ, ফ্রুকটোজ, মলটোজ ইত্যাদি। এগুলো প্রতিটিই দ্রুত রক্তের সঙ্গে মিশে যায় এবং সহজেই পরিপাক
হয়।
এছাড়া মৌমাছির অদ্ভুত জীবন পদ্ধতি সম্পর্কেও কুরআন ইঙ্গিত দিয়ে। আজকে আমরা জানি,
স্ত্রী মৌমাছি হল কর্মী মৌমাছি। কুরআনে কর্মী মৌমাছিকে বলা হয়েছে “কুল্লিঅফাছলুক”। এই শব্দটির অর্থ স্ত্রী মৌমাছি। অর্থাৎ কুরআন কর্মী মৌমাছিদেরকে বলেছে স্ত্রী
মৌমাছি।
وَأَوْحَىٰ رَبُّكَ إِلَى
النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا
يَعْرِشُونَ
আর তোমার প্রভু (নারী) মৌমাছিকে বললেন, তোমাদের বাসস্থান বানাও। পর্বতগাত্রে, বৃক্ষে এবং উঁচু চালে। (নাহল ৬৮)
বিজ্ঞান মৌমাছির জীবন রহস্য আবিষ্কার করার পূর্ব পযর্ন্ত সকলের ধারণা ছিল,
পুরুষ মৌমাছিরাই সম্ভবত কর্মীর ভূমিকা পালন করে। অথচ, কুরআন প্রদত্ত তথ্যই সঠিক।
Faiyaz Al Muhaimin
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন