কুরআনুল কারীমের ২৭নং সূরা নামলের ৬১তম
আয়াত দিয়ে আমরা বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো। এখানে আল্লাহ বলেছেন-
أَمَّنْ جَعَلَ
الْأَرْضَ قَرَارًا وَجَعَلَ خِلَالَهَا أَنْهَارًا وَجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ
وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًا ۗ أَإِلَٰهٌ
مَعَ اللَّهِ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا
يَعْلَمُونَ
কে পৃথিবীকে করেছে
আবাসযোগ্য এবং তার মধ্যে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা ? আর তাতে স্থাপন করেছেন সৃদৃঢ় পর্বতমালা এবং
দুই সাগরের মাঝখানে সৃষ্টি করেছেন অন্তরায় ? আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে ? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।
এছাড়া উদাহরণ হিসেবে সূরা আর রাহমানের ১৯ থেকে ২১ নং আয়াতের
উদ্ধৃতি দেয়া যায়।
مَرَجَ
الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَا يَبْغِيَانِ فَبِأَيِّ
آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
তিনি দুই সমুদ্রকে
প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়। উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক আড়াল, যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। অতএব (হে মানব ও জ্বীন) তোমরা উভয়ে তোমাদের
রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?
সামুদ্রিক বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণা ও আবিষ্কারের ভিত্তিতে আমরা এখন এই আয়াতগুলির
ব্যাখ্যা দিতে পারি। উষ্ণ পানির স্রোতধারা
বিশ্বের শীতল সাগরগুলোর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার সাগরসমূহে এ ধরনের
স্রোতের প্রবাহ পরিলক্ষিত হয়। উদ্ভট হলে সত্যও, অনেক অবিশ্বাসীরা বলে, রাসুল (সা) আরব সাগরের
কাছে গিয়ে হঠাৎ করে এ তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। অথচ, এ ধরনের স্রোত শুধু আরব উপদ্বীপের চারপাশেই সম্পূর্ণ অনুপস্থিত নয় বরং ভূমধ্যসাগরীয় ও ভারতীয় অঞ্চলসমূহেও এ
স্রোতের দেখা পাওয়া যায়না। সর্বপথম এ প্রকারের স্রোতধারা আবিষ্কৃত হয় ১৯৪২ সালে। বর্তমানে সেগুলিকে
অত্যন্ত জটিল গাণিতিক ক্যালকুলেশনের মাধ্যমে ও কৃত্রিম satellite-
এর মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অতিসম্প্রতি Oceanologist-গন আবিষ্কার করেছেন, পানির এই দুই স্রোতধারা তিনটি মৌলিক নিয়ম অনুসরণের ফলে পানির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ের সৃষ্টি হয়। এগুলো হল-
১) ঘনত্ব
২) লবণাক্ততা
৩) উষ্ণতা
তারা এও আবিষ্কার করেছেন, যখন পানির বাইরের স্রোতধারা
ভেতরের স্রোতধারার দিকে প্রবাহিত হয় কিংবা তার বিপরীত অবস্থা ঘটে, তখন অন্য স্রোতের পানি ততক্ষণাৎ তার অবস্থা বদলে ফেলে। যদিও আপাতদৃষ্টিতে আমরা দেখি সেখানে দুই ধরনের
পানি স্বাধীনভাবে মিশে যায়, তথাপি উভয় প্রকৃতির
পানি তাদের স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে চলে। অর্থাৎ এক কথায বলা
যায়– প্রত্যেক পানির স্ব-গুনাগুন বজায় থাকে। ফলে তা অন্য পনির সাথে মিশ্রিত হয়না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রোম সাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের
পানি একটি অপরটির সাথে মিশতে পারে না, কারণ সেখানে রয়েছে অন্তরায়। কুরআন telegraphic message এর মাধ্যমে বহু পূর্বে আমাদেরকে এই
জটিল বৈজ্ঞানিক তথ্য জানিয়ে দিয়েছে।
Marine Biologist Jack V
Costa-র ইসলাম গ্রহণ-
ফ্রান্সের বিজ্ঞানী জ্যাক ভি.
কোষ্টা দীর্ঘদিন সমুদ্রের পানি রিসার্চ করে লক্ষ্য
করলেন রোম সাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগর রাসায়নিক মিশ্রনের
গুনাবলী ও মাত্রার দিক থেকে একটি অন্যটির চেয়ে ভিন্ন রকম। তিনি এ বাস্তব সত্যটি
হাতে নাতে প্রমানের উদ্দেশ্যে জিব্রাল্টারের দুই সমুদ্রের মিলন কেন্দ্রের কাছাকাছি সমুদ্রের
তলদেশে গবেষণা চালালেন।
সেখান থেকে তথ্য পেলেন যে জিব্রাল্টারের উত্তর তীর (মারুকেশ) আর দক্ষিণ তীর (স্পেন) থেকে আশাতীতভাবে একটি মিষ্টি পানির ঝর্ণা উথলে উঠে। এ বড় ঝর্ণাটি উভয় সমুদ্রের
মধ্য দিয়ে ৪৫০ সূক্ষ্ম কোণে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হয়ে চিরুনির দাঁতের আকৃতি ধারণ করে বাঁধের ন্যায়
কাজ করে। এ ক্রিয়াকলাপের ফলে রোম সাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগর একটি আরেকটির সঙ্গে মিশতে পারে
না।
[জিব্রাল্টার যুক্তরাজ্যের অধীনস্থ একটি এলাকা যা স্পেনের দক্ষিণে, আটলান্টিক মহাসাগর
থেকে ভূমধ্যসাগরের প্রবেশপথে অবস্থিত। জিব্রাল্টার নামটি আরবি নাম "জাবাল আল তারিক" (جبل طارق তারিকের পাথর/শিলা/পাহাড়)-এর স্পেনীয় অপভ্রংশ রূপ। ৭১১ সালে উমাইয়াহ
খলিফাদের বার্বার গোত্রীয় সেনানেতা তারিক ইবন জিয়াদ স্পেন বিজয়ের উদ্দেশ্যে উত্তর
আফ্রিকা থেকে জিব্রাল্টার প্রণালী পার হয়ে এখানে প্রথম পদার্পণ করেন। স্পেনীয় থেকে ইউরোপের
অন্যান্য ভাষাতে এবং সেই সূত্রে বিশ্বের অন্য সব ভাষায় "জিব্রাল্টার" শব্দটি
এসেছে। এমনকি আধুনিক আরবিতেও
এটিকে জিব্রাল্টার-ই বলা হয়]
দু’টি সমুদ্রের মিলনস্থলে যে পৃথকীকরণ বা পর্দা
রয়েছে তা খালি চোখে বুঝার উপায় নেই। কেননা বাহ্যত সব সাগর একই রূপের মনে হয়। শুধু তিনি নন, বরং সমগ্র মেরিন বিজ্ঞানীরাই এই বাঁধা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন। তাঁরা ১৯৪২ সনে শতাধিক মেরিন স্টেশন বসিয়ে স্যাটেলাইটের
মাধ্যমে পরীক্ষা করলেন। কোন জিনিস দুই সাগরের মিলন কেন্দ্রে বাঁধা সৃষ্টি করে আছে? তারা তথায় আলো পরীক্ষা করেন, বাতাস পরীক্ষা করেন এবং মাটি পরীক্ষা করে এর মধ্যে কোন বাঁধা
বা অন্তরায় থাকার কারণ
খুঁজে পেলেন না।
বিজ্ঞানীরা আরো গভীরভাবে
বিষয়টিকে উপলব্ধির জন্য এবং আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার
জন্য ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে সমুদ্রের বহু ত্রিমাত্রিক ছবি তুললেন।
এতে দেখা গেল, ভূমধ্য সাগরের পানি
আটলান্টিকের তুলনায় অনেক বেশী ঘন, উষ্ণ এবং লবণাক্ত। আরো মজার ব্যাপার হলো, ভূমধ্য সাগরের পানি জিব্রাল্টার সেল বা সাগর তলের উঁচু ভূমির ওপর দিয়ে
আটলান্টিক সাগরের মধ্যে শতাধিক কিলোমিটার প্রবেশ করেছে এবং তা ১০০০ হাজার মিটার গভীরে
পৌঁছার পরেও তার উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের ও রঙ্গের কোন পরিবর্তন সাধিত হয়নি। যদিও এতদূভয়ের মাঝে রয়েছে প্রচণ্ড ঢেউ, প্রবল খরস্রোত এবং উত্তাল তরঙ্গ, তথাপি তারা পরস্পর মিশ্রিত হয় না এবং একে অন্যকে অতিক্রম
করতে পারে না; যেহেতু উভয়ের মাঝে
রয়েছে একটি অন্তরায়।
পানি সম্পর্কে গবেষণায় নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন Jack
V Costa । তবে মিশন
ব্যর্থ হয়নি তাঁর। ফলাফল হিসেবে
পেয়েছেন চির শীতলতা “আল ইসলাম”। তাঁর গবেষনালব্ধ ফলাফল আমরা সবাই জানি, যাকে বলা হয়-Costa Theory।
ড. মরিসের মতো মিষ্টার কোষ্টার ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটাও বেশ মজার। একদিন ভি.
কোষ্টার আলাপ হলো একজন মুসলিম বিজ্ঞানীর সাথে। আলোচনাকালে কোষ্টা
যখন তাঁর মতবাদ উপস্থাপন করলেন তখন ঐ মুসলিম বিজ্ঞানী বললেন-‘আপনি তো এখন গবেষণা
করেছেন। আমি আপনাকে শত শত বছর আগের গবেষণা দেখাতে পারব।’
যখন মুসলিম বিজ্ঞানী তাঁকে সূরা আর রাহমানের ১৯-২১ নং আয়াত দেখালেন তখন কোষ্টা অত্যন্ত ভাবনার
মধ্যে পড়ে গেলেন। অবশেষে সত্য
সন্ধানী ভি. কোষ্টা পেয়ে গেলেন হেরার আলোর সন্ধান। এভাবে আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা তাকে কবুল করেন। কুরআন বলছে-
وَيَضْرِبُ
اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ ۗ وَاللَّهُ
بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ দেখান তাঁর জ্যোতির
দিকে। আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা
করেন এবং আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। (আন নূর ৩৫)
দারুন কথা
উত্তরমুছুন